শিবালয়ে চাকরি মেলা, অনেকে পেলেন নতুন জীবন

মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলায় চাকরি মেলায় বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার মো. খলিলুর রহমান। গতকাল সকালে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে
ছবি: প্রথম আলো

চাকরির পেছনে ছোটাছুটি নয়, চাকরিই যোগ্যদের খুঁজে নেয়। চাকরি মেলায় কর্মসংস্থানের সুযোগ হয় বেকার তরুণ-তরুণীদের। বেকারত্ব দূর হওয়ায় আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন তাঁরা। আজ শনিবার দিনব্যাপী মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে এই চাকরি মেলা অনুষ্ঠিত হয়। ব্যতিক্রম এই মেলার আয়োজন করে জেলা প্রশাসন।

আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফিতা কেটে চাকরি মেলার উদ্বোধন করেন ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার মো. খলিলুর রহমান। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৩১টি স্টল বসে মেলায়। সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হাজারো চাকরিপ্রত্যাশী তরুণ-তরুণীর স্টলগুলোর সামনে ভিড় করেন। তাঁরা মেলায় অংশ নেওয়া চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিদের কাছে জীবনবৃত্তান্তসহ শিক্ষাগত ও দক্ষতা অর্জনের সনদ নিয়ে উপস্থিত হন। চাকরি মেলা আয়োজন করায় তাঁরা খুবই আনন্দিত। মেলায় অংশ নিতে পেরেও তাঁরা খুশি।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আবদুল লতিফ সভাপতিত্ব করেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার মো. খলিলুর রহমান। এ ছাড়া বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) শুক্লা সরকার, উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউর রহমান খান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহিদুর রহমান, জেলায় পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান তারাসিমা অ্যাপারেলস লিমিটেডের প্রতিনিধি সজল মৃধা প্রমুখ।

মেলায় চাকরি পাওয়ার পর অনুষ্ঠানে আনন্দ অনুভূতি প্রকাশ করেন শিবালয়ের কলাগারিয়া এলাকার নিপা আক্তার ও জেলা সদরের রমনপুর এলাকার মো. আল-আমিন।

নিপা আক্তার বলেন, ‘বেকারত্ব এক মারাত্মক সমস্যা। কারিগরি প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করা গেলে চাকরির পেছনে নয়, চাকরিই আমাদের খুঁজে নেবে।’

মো. আল-আমিন বলেন, ‘পারিবারিক কারণে আমার একটি চাকরির খুব প্রয়োজন ছিল। কারিগরি প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করেও চাকরি মেলেনি। তবে চাকরি মেলায় এসে চাকরি পেলাম, এটা ভাবতেও পারিনি। বেকার থাকাটা আসলেই কষ্টের। চাকরি পাওয়ায় সেই কষ্টের অবসান হলো।’

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বিভাগীয় কমিশনার মো. খলিলুর রহমান বলেন, সারা বিশ্বে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ঘটছে। অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে। আর্থসামাজিক উন্নয়ন, কর্মক্ষম যুবসমাজের শিক্ষা ও তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ দেশের উন্নয়নের মাত্রার গতিনির্ধারক। যুবদের উদ্যোগ ও উদ্ভাবনী ক্ষমতার সঠিক বিকাশ ও প্রযুক্তি লালনের জন্য প্রয়োজন যথাযথ শিক্ষা ও উপযুক্ত প্রশিক্ষণ।

জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আবদুল লতিফ চাকরি মেলায় বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান অংশ নেওয়ায় এবং চাকরির সুযোগ সৃষ্টির কারণে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, দেশের বেকারত্ব দূর করার জন্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে তারা ভূমিকা রাখছে।

মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলায় চাকরি মেলায় নিবন্ধনের জন্য চাকরিপ্রার্থীদের দীর্ঘ সারি। শনিবার সকালে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে ছবি: প্রথম আলো

চাকরি মেলায় চাকরিপ্রত্যাশীরা কোনো নিবন্ধন বা এন্ট্রি ফি ছাড়াই নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে তাঁদের জীবনবৃত্তান্ত জমা দেওয়ার সুযোগ পান। পরবর্তী সময়ে বাছাইকৃত জীবনবৃত্তান্ত থেকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয়। চাকরি মেলাটি জেলায় অষ্টম শ্রেণি থেকে স্নাতকোত্তর পাস করা তরুণ-তরুণীদের জন্য উন্মুক্ত ছিল।
দিনব্যাপী এ মেলায় ১ হাজার ৭০০ জন চাকরিপ্রত্যাশী জীবনবৃত্তান্ত জমা দেন ও ৬০১ জন নিবন্ধন করেন। তাঁদের মধ্যে ৪২ জনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি হয়।