পরীক্ষাগারের জন্য তিনতলা ভবন নির্মাণে ব্যয় হয় ১০ কোটি টাকা। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য কেনা হয় আরও ১০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি। সেই পরীক্ষাগার গত বছরের জুন থেকে বন্ধ পড়ে আছে।
এ অবস্থা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আধুনিক খাদ্য পরীক্ষাগারের (ল্যাব)। নগরের বিবিরহাট এলাকায় পরীক্ষাগারটি অবস্থিত। একই অবস্থা নগরের সাগরিকায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত নির্মাণসামগ্রী পরীক্ষণ গবেষণাগারেরও। উদ্বোধন হলেও এটি আর চালু করা যায়নি। ফলে ২২ কোটি টাকার দুটি পরীক্ষাগার আর কাজে আসছে না।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এ দুটি পরীক্ষাগার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এগুলো পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনবল নেই। আবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে জনবলকাঠামোও এখনো পাস হয়নি। এ জন্য লোক নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না। তাই বন্ধ রয়েছে। তবে কীভাবে এ দুটি গবেষণাগার চালু করা যায়, সে জন্য প্রকৌশল ও স্বাস্থ্য বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
খাদ্য পরীক্ষাগারের কাজ নেই
খাদ্যের মান পরীক্ষা করার জন্য নগরের বিবিরহাটের সাড়ে পাঁচ হাজার বর্গফুট জায়গার ওপর এ পরীক্ষাগার নির্মাণ করা হয়। ২০১৩ সালের ১২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভবনের নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর করেছিলেন। নির্মাণকাজ শেষে ২০১৬ সালের শুরুতে পরীক্ষামূলকভাবে পরীক্ষাগারের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। চালুর পর থেকে বন্ধ হওয়ার আগপর্যন্ত নিয়মিতভাবে পরীক্ষা কার্যক্রম চললেও এসবের সরকারি স্বীকৃতি ছিল না। ফলে তা নগরবাসীর খাদ্যনিরাপত্তায় কোনো কাজে আসেনি।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের অধীনে এ পরীক্ষাগার নির্মাণ করা হয়েছিল। এতে ৮২টি আধুনিক পরীক্ষা সরঞ্জাম রয়েছে।
পরীক্ষাগারের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। ছয় বছরেও স্থায়ী না হওয়ায় ইতিমধ্যে ১৪ জন চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। যাঁরা আছেন, তাঁদেরও কাজ নেই।
পরীক্ষাগারের বর্তমানে কর্মরত কর্মকর্তারা বলেন, প্রায় ছয় লাখ টাকা বিল বকেয়া থাকায় গত বছরের ২০ জুন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ। এই পরীক্ষাগারে থাকা যন্ত্রপাতিগুলো নিয়মিত চালু না রাখলে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় তা করা সম্ভব হচ্ছে না।
আধুনিক এ পরীক্ষাগারে ফলমূল ছাড়া দুধ ও দুধজাতীয় পণ্য, মিষ্টিজাতীয় পণ্য, জুসজাতীয় পণ্য, কোমল পানীয়, সস, মসলা, বেকারি পণ্য, আটা-ময়দাসহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্যের মান যাচাই করার জন্য যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছিল। এ ছাড়া মাছ-মাংস, শুঁটকি, সবজি, আচার-চাটনি, ভোজ্যতেলসহ আরও অনেক ধরনের খাদ্যের নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব। সব মিলিয়ে প্রায় ছয় শ ধরনের খাদ্যের নমুনা পরীক্ষার সুযোগ রাখা হয় এ পরীক্ষাগারে।
উদ্বোধন হলেও চালু হয়নি
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতায় প্রতিবছর রাস্তাঘাট, ভবনসহ বিভিন্ন অবকাঠামোর উন্নয়নকাজ চলে। এসব নির্মাণকাজে ব্যবহৃত উপকরণের মান যাচাই করা বাধ্যতামূলক। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো তা করে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বা এলজিইডির ল্যাবের মাধ্যমে। এ অবস্থায় সিটি করপোরেশন নিজস্ব পরীক্ষাগার নির্মাণ করে। ২ হাজার ৮০০ বর্গফুট জায়গার ওপর নির্মিত দোতলা এ পরীক্ষাগার ২০১৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর উদ্বোধন করেন তৎকালীন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তবে উদ্বোধন হলেও জনবলের অভাবে এটি আর চালু হয়নি।