রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের তাগিদ

কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির পরিদর্শন করেন ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিবুর রহমান। আশ্রয়শিবিরের সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। আজ দুপুরেছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজারের উখিয়ার একাধিক রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির পরিদর্শন করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মহিবুর রহমান। আজ শনিবার বেলা সোয়া একটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত আশ্রয়শিবিরের বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। এ সময় রোহিঙ্গাদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং আশ্রয়শিবিরের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তাগিদ দেন।

পরিদর্শনকালে প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, উখিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আহমদুল হক উপস্থিত ছিলেন।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিমন্ত্রী মো. মহিবুর রহমান উখিয়ার কয়েকটি আশ্রয়শিবির পরিদর্শনের পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থার উন্নয়ন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। আশ্রয়শিবিরের বাসিন্দাদের সেবা, নিরাপত্তার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন। রোহিঙ্গারা যাতে আশ্রয়শিবির ছেড়ে পালিয়ে যেতে না পারে, সে বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়।

বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে ৮ লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে। গত ছয় বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো যায়নি। আশ্রয়শিবিরগুলোতে মিয়ানমারের একাধিক সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে গোলাগুলি, সংঘর্ষ, অপহরণ ও চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটেই চলেছে।

পুলিশ ও রোহিঙ্গা নেতাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ৯ মাসে উখিয়ার ছয়টির বেশি আশ্রয়শিবিরে ৬৭টি সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ৮১ জন রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ২০ জন রোহিঙ্গা মাঝি, ২২ জন আরসার সদস্য, ৭ জন আরএসওর সদস্য, ১ জন স্বেচ্ছাসেবক এবং বাকিরা সাধারণ রোহিঙ্গা।

আশ্রয়শিবিরে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, বেলা সোয়া একটার দিকে প্রতিমন্ত্রী মো. মহিবুর রহমান কক্সবাজার শহর থেকে সড়কপথে উখিয়ার মধুরছড়া আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-৪) পৌঁছান। এরপর ওই আশ্রয়শিবিরের এ-১১ ব্লকে জাতিসংঘের ডব্লিউএফপি কর্তৃক পরিচালিত রেশনের ত্রাণসামগ্রীর দোকান পরিদর্শন করেন।

বেলা দুইটার দিকে মধুরছড়া আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-৪, এক্সটেনশন) সিআইসি কার্যালয়সংলগ্ন এনজিও ফোরাম কর্তৃক পরিচালিত পয়োনিষ্কাশন এবং বর্জ্য শোধনাগার কেন্দ্র পরিদর্শন করেন প্রতিমন্ত্রী। ওই প্ল্যান্টে মানববর্জ্য সংগ্রহ এবং শোধন পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা দেন এনজিও ফোরামের কর্মকর্তারা। রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের পরিবেশ রক্ষায় এ ধরনের প্রকল্পের গুরুত্ব তুলে ধরা হয় প্রতিমন্ত্রীর কাছে।

সোয়া দুইটার দিকে বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-৮ পশ্চিম) এ-১৬ ব্লকে ফিল্ড হাসপাতাল পরিদর্শন করেন প্রতিমন্ত্রী। এরপর একই আশ্রয়শিবিরের সিআইসি কার্যালয়সংলগ্ন ওয়াচ টাওয়ার পরিদর্শন করেন প্রতিমন্ত্রী। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে তিনি আশ্রয়শিবির ত্যাগ করে কক্সবাজারের দিকে রওনা দেন।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার দুই দিনের সফরে কক্সবাজার আসেন প্রতিমন্ত্রী মো. মহিবুর রহমান। গতকাল বিকেলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সম্মেলনকক্ষে মাঠপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি।

জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দুর্যোগবিষয়ক ওই মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন একই মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান, আরআরআরসি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রমুখ।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতির কথা উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী মহিবুর রহমান বলেন, কক্সবাজার পর্যটন এলাকা। এখানকার মানুষকে দুর্যোগ থেকে রক্ষায় নির্মিত মুজিব কিল্লাগুলো আধুনিকায়ন করা হবে। সরকার দুর্যোগের ঝুঁকি কমিয়ে আনতে নিরলসভাবে কাজ করছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে সবাইকে সততা, দক্ষতা ও নির্মোহভাবে দেশের উন্নয়নে কাজ করতে হবে।