ভালোবেসে বিয়ে, বছর না যেতেই স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগ

মুনিমের সঙ্গে স্ত্রী সাদিয়া আক্তার
ছবি: সংগৃহীত

বছরখানেক আগে ভালোবেসে মুনিম জোমাদ্দারকে (২২) বিয়ে করে বাবার বাড়ি ছেড়েছিলেন সাদিয়া। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে সাদিয়া বাবার বাড়িতে ফিরে যান। এরপর স্বামী মুনিম জোমাদ্দার প্রায়ই শ্বশুরবাড়িতে যাতায়াত করতেন। গত শুক্রবার সকালে স্ত্রী সাদিয়াকে নির্যাতন করেন মুনিম জোমাদ্দার। অসুস্থ স্ত্রীকে চিকিৎসকের কাছে নেওয়ার কথা বলে বের হন ওই দম্পতি। পরে নদীর তীরে কচুরিপানার ভেতর থেকে সাদিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

সাদিয়া পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের মজিবুর রহমান মুন্সীর মেয়ে। গতকাল শনিবার ভোররাত চারটার দিকে উপজেলার কানুয়া গ্রামের পোনা নদীর তীরে কচুরিপানার মধ্য থেকে সাদিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

সাদিয়ার মা জেসমিন বেগম বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে মুনিম তাঁদের বাড়িতে আসেন। পরদিন সকালে মুনিম সাদিয়াকে মারপিট করে তাঁর পা ধরে ক্ষমা চান। এরপর সাদিয়াকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে চাইলে তাঁরা মেয়েকে মুনিমের সঙ্গে দিতে চাননি। অনুনয়-বিনয় করে চিকিৎসার কথা বলায় তাঁরা অনুমতি দেন। সাদিয়া চলে যাওয়ার পর তাঁর সঙ্গে একবার মুঠোফোনে কথা হয়। গতকাল সকালে পুলিশ ফোন করে তাঁর মেয়ের লাশ উদ্ধারের কথা জানায়।

পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ভান্ডারিয়া পৌরসভার টিঅ্যান্ডটি সড়কের মামুন জোমাদ্দারের ছেলে মুনিম জোমাদ্দার পরিবারের অনিচ্ছায় সাদিয়াকে বিয়ে করেন। পারিবারিক কলহের জেরে মুনিম ও তাঁর মা ছবি বেগম সাদিয়াকে মারধর করতেন। শ্বশুরবাড়িতে নির্যাতন সইতে না পেরে বিয়ের পর সাদিয়া বাবার বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। শুক্রবার সকালে মুনিম স্ত্রী সাদিয়াকে মারধরের পর চিকিৎসকের কাছে নেওয়ার কথা বলে শ্বশুরবাড়ি থেকে নিয়ে যান। এরপর মুনিম সাদিয়াকে ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার চেচড়ী গ্রামের বেড়িবাঁধে নিয়ে কয়েকজন বন্ধুর সহযোগিতায় শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ ফেলে যান। ঘটনাটি মুনিম তাঁর মাকে জানালে তিনি ছেলেকে নিয়ে লাশ বেড়িবাঁধের কাছ থেকে তুলে এনে উপজেলার কানুয়া গ্রামের একটি ইটভাটার পাশে পোনা নদীর তীরে কচুরিপানার মধ্যে লুকিয়ে রাখেন।

শুক্রবার গভীর রাতে ভান্ডারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মুঠোফোনে অজ্ঞাত ব্যক্তি ফোন করে সাদিয়ার লাশের খবর দিলে পুলিশ তাঁর লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ মুনিম জোমাদ্দার, তাঁর মা ছবি বেগম, মুনিমের বন্ধু শাকিব খন্দকার, মারুফ হাওলাদার ও সিয়াম খানকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁরা হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন। এ ঘটনায় নিহত সাদিয়ার বাবা মজিবুর রহমান মুন্সী বাদী হয়ে ছয়জনের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা করেন।

সাদিয়ার বড় বোন জোছনা আক্তার বলেন, ‘আমার বোনকে মুনিমের মা বউ হিসেবে মেনে নিতে পারেননি। মুনিম সাদিয়াকে ভালোবেসে বিয়ে করলেও মোটরসাইকেলের জন্য মারধর করতেন। তবে সাদিয়া মুখ বুজে সব সহ্য করতেন। মায়ের প্ররোচনায় মুনিম সাদিয়াকে হত্যা করেছেন।’

ভান্ডারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশিকুজ্জামান বলেন, শুক্রবার রাতে অজ্ঞাত একটি ফোন থেকে হত্যার ঘটনা জানতে পারেন। এরপর লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠান। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার মুনিম, ছবি বেগম ও সিয়াম খান আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলার ছয় আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।