কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি, ৫ ঘণ্টা পর উদ্ধার
কুমিল্লা নগরে টিউশনি করে ক্যাম্পাসে ফেরার পথে শাকিল আহমেদ ওরফে সবুজ নামের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে। এ ঘটনার প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে নগরের ছোটরা এলাকার তোয়া হাউজিং এলাকা থেকে তাঁকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
শিক্ষার্থীকে তুলে নেওয়ার অভিযোগে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার সাতোরা এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে মো. নাহিদকে (২০) আটক করে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা।
পুলিশের ভাষ্য, একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে ওই শিক্ষার্থীকে তুলে নেওয়া হয়েছিল। তুলে নেওয়া দলটিতে মোট পাঁচজন সদস্য ছিলেন। তাঁরা সবাই ছিনতাইকারী ও কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত। তাঁরা ওই শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে দশ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন।
শাকিল আহমেদ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। গতকাল রাত ১০টার দিকে ক্যাম্পাসে ফেরার পথে তাঁকে তুলে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে মুক্তিপণ দাবির বিষয়টি জানতে পেরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সহায়তায় তাঁকে উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা জানান, গতকাল রাত ১০টার দিকে শাকিল নগরের বাগিচাগাঁও এলাকায় টিউশনি করে ক্যাম্পাসে ফেরার পথে অপহরণকারীদের কবলে পড়েন। পরে শিক্ষার্থীর পরিবারের কাছে মুঠোফোন কল করে ১০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন অপহরণকারীরা। বিষয়টি রাত সাড়ে ১২টার দিকে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানা-পুলিশকে জানানো হলে শাকিলকে উদ্ধারে তৎপর হয় পুলিশ। একপর্যায়ে রাত প্রায় তিনটার দিকে নগরের ছোটরা এলাকার তোয়া হাউজিং থেকে শাকিলকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এ সময় নাহিদ নামে এক অপহরণকারীকে আটক করা হয়। পরে শাকিলকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে ক্যাম্পাসে নিয়ে যান সহপাঠীরা।
আটক নাহিদ পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তাঁরা পাঁচজন মিলে শাকিলকে অপহরণ করেন। বাকি চারজন হলেন নগরের বিষ্ণপুর এলাকার হারুন মিয়ার ছেলে জিহাদ (১৯), ঝাউতলা এলাকার আক্তার মোল্লার ছেলে সাইফুল (২০), ফৌজদারি এলাকার শাহিন (২০) এবং আকাশ (২০)।
শিক্ষার্থী শাকিল আহমেদ জানান, বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে টিউশনি শেষ করে ক্যাম্পাসে ফেরার জন্য একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ওঠেন তিনি। অপহরণকারীরাও একই অটোরিকশায় অবস্থান করছিলেন। শহরতলির দৌলতপুর এলাকায় আসার পর তাঁকে ভুল রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি অটোরিকশা থেকে লাফ দেন। এরপর ক্যাম্পাসে ফেরার জন্য ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিলে সেখানেও অপহরণকারীরা তাঁর পিছু নেন। পরে তাঁর পেটে ছুরি ধরে তুলে নিয়ে নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরিয়ে তোয়া হাউজিং এলাকার একটি পরিত্যক্ত ভবনে তাঁকে আটকে রাখেন। এরপর শাকিলের মুঠোফোন দিয়ে পরিবারের কাছে ১০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা জেলার আহ্বায়ক মুহাম্মদ সাকিব হুসাইন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অপহরণের তথ্যটি পেয়ে শাকিলের মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করে আমরা পুলিশ প্রশাসনের কাছে পাঠাই। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের ও শহরের কিছু শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় এবং পুলিশের তৎপরতায় শাকিলকে সুস্থভাবে উদ্ধার করা হয়েছে।’
কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মধ্যরাতে এ খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা অভিযানে বের হই। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আমরা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী শাকিলকে উদ্ধার করতে সক্ষম হই। এ ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।’ ওসি আরও বলেন, ওই শিক্ষার্থী সুস্থ আছেন, তিনি ক্যাম্পাসে ফিরে গেছেন। আটক অপহরণকারীকে বিক্ষুব্ধ লোকজন গণপিটুনি দিয়েছে। তাঁকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত অপর চারজনকে আটক করতে অভিযান পরিচালনা করছে পুলিশ। ঘটনায় জড়িতরা সবাই ছিনতাইকারী ও কিশোর অপরাধে জড়িত।