দিনাজপুরে আইন লঙ্ঘন করে ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে ইটভাটায় সরবরাহ করা হচ্ছে। জেলার হাজার হাজার একর জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে ভাটায় ইট তৈরি করা হচ্ছে। এভাবে উপরিভাগের মাটি কেটে নেওয়ায় একদিকে জমি উর্বরতা শক্তি হারাচ্ছে, অন্যদিকে ফসলের উৎপাদনও কমে যাচ্ছে। এদিকে উচ্চ আদালত অবৈধ ইটভাটা বন্ধে নির্দেশ দেওয়ার পরও প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। উপরন্তু কিছু এলাকায় ফসলি জমিতেও ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। এতে ইটভাটার ধোঁয়ায় ফসল নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশও দূষিত হচ্ছে।
তবে এসব বিষয়ে দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকী বলেন, ইট তৈরির জন্য জমির উপরিভাগের মাটি কাটা বন্ধে বিভিন্ন উপজেলায় অভিযান পরিচালনা করছে প্রশাসন। কৃষি বিভাগ ও প্রশাসনের সমন্বয়ে বিষয়টির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। যাঁরা এ ধরনের কাজ করছেন, তাঁদের আইনের আওতায় আনা হবে।
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার নিজপাড়া ইউনিয়নের সোনাকান্দর এলাকায় জমি থেকে সদ্য আমন ধান কেটে ঘরে তুলেছেন কৃষক সাদেকুজ্জামান। সেই জমির উপরিভাগের দুই-আড়াই ফুট মাটি এক্সকাভেটর দিয়ে কেটে ট্রলিতে তোলা হচ্ছে। এই মৌসুমে সাদেকুজ্জামান এক বিঘা জমির উপরিভাগের মাটি ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন ভাটামালিকের কাছে। উপরিভাগের মাটি বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে সাদেকুজ্জামান বলেন, সাময়িক কিছু অর্থের প্রয়োজন থেকেই ফসলি জমির মাটি বিক্রি করেছেন।
বীরগঞ্জের মতো জেলার ১৩টি উপজেলায় ২১৬টি ইটভাটায় ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি বিক্রি হচ্ছে। গত কয়েক দিন দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার ভোগনগর, গোলাপগঞ্জ, সোনাকান্দর, ডাংরারহাট; চিরিরবন্দর উপজেলার ওমরপুর, বড়গ্রাম, মোস্তফাপুর; খানসামা উপজেলার কুমুড়িয়া এলাকা ঘুরে জমির উপরিভাগের এক থেকে আড়াই ফুট গভীরতায় এসব মাটি কাটার চিত্র দেখা গেছে।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন(নিয়ন্ত্রন) আইন ২০১৩–এর ৫(১) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি কৃষিজমি, পাহাড় বা টিলা থেকে মাটি কেটে নিয়ে ইট তৈরির কাজে ব্যবহার করতে পারবেন না। কিন্তু এই আইন লঙ্ঘন করে দিনাজপুরের ইটভাটামালিকেরা অবাধে ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছেন।
ইটভাটার কয়েকজন মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একটি ভাটায় প্রতি মৌসুমে গড়ে ২৫ থেকে ৩০ লাখ ইট পোড়ানো হয়। প্রতি এক লাখ ইট প্রস্তুতে প্রায় প্রায় আট হাজার ঘনফুট মাটি প্রয়োজন হয়। দিনাজপুরে ইটভাটা আছে ২১৬টি। ওই হিসাব অনুযায়ী, ২১৬টি ইটভাটায় ইট তৈরির জন্য ৪ কোটি ৩২ লাখ ঘনফুট মাটি প্রয়োজন, যার এক–দ্বিতীয়াংশই ফসলি জমির উপরিভাগ থেকে আসে।
এ বিষয়ে বীরগঞ্জের পলাশবাড়ী এলাকার জেডএসএস ব্রিকসের মালিক শাহিনুর ইসলাম বলেন, তাঁরা সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে মাটি কেনেন না। জমির মালিকের সঙ্গে গাড়ির (ট্রলির) মালিক মধ্যস্থতা করে ভাটায় মাটি দিয়ে যান। প্রতি ট্রলিতে ৭০-৭৫ ঘনফুট মাটি আসে, এর জন্য ট্রলিমালিককে দিতে হয় ৬৫০-৭০০ টাকা।
ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে নেওয়ার বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুরুজ্জামান বলেন, এসব জমিতে ধান, আলু ও ভুট্টার আবাদ হয়। জমির উপরিভাগের পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ মাটি কেটে নেওয়ায় একদিকে মাটি হারাচ্ছে উর্বরতা শক্তি, অন্যদিকে কমে যাচ্ছে উৎপাদনের ক্ষমতা।
দিনাজপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এ কে এম ছামিউল আলম কুরসী বলেন, গত নভেম্বরে ভাটামালিককে নিয়ে মতবিনিময় সভা করা হয়েছে। সেখানে ইটের বিকল্প হিসেবে ব্লকের ব্যবহার বাড়ানোর জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।