২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

নৌরুট স্বাভাবিক হয়নি, এখনো বিচ্ছিন্ন সেন্ট মার্টিন

বিকল্প পথে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পাঠানোর জন্য জাহাজে পণ্য তোলা হচ্ছে। কক্সবাজারের নুনিয়াছড়া ঘাটেফাইল ছবি

কক্সবাজারের সেন্ট মার্টিন দ্বীপের সঙ্গে টেকনাফের নৌযোগাযোগ এখনো স্বাভাবিক হয়নি। এ কারণে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপটি কার্যত একরকম বিচ্ছিন্ন রয়েছে এখনো। টানা নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় নিত্যপণ্য ও খাদ্যসামগ্রীর সংকটের পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদানও ব্যাহত হচ্ছে।

বর্তমানে দ্বীপের ১০ হাজার বাসিন্দা অনেকটা সংকটের মধ্যে দিন পার করছেন। নিয়মিত নৌরুট বন্ধ থাকায় এত দিন বিকল্প নৌরুটে সেন্ট মার্টিনে পণ্য পরিবহন করা হয়েছে। তবে গত ২২ জুনের পর থেকে আজ শনিবার বেলা দুইটা পর্যন্ত ওই রুটে কোনো নৌযান চলাচল করেনি।

প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান ও সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রশিদ। তিনি বলেন, টেকনাফ থেকে বিকল্প নৌপথে দুটি ট্রলার ২২ জুন সেন্ট মার্টিন পৌঁছেছে। এসবি নাঈম ও এসবি মায়ের দোয়া নামের এ দুই ট্রলারে তিন শতাধিক গ্যাসের সিলিন্ডার, কিছু খাদ্যপণ্য ও ১০ থেকে ১২ জন যাত্রীকে সেন্ট মার্টিনে পৌঁছে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে সেন্ট মার্টিন থেকে রোগীসহ ১৫ জন যাত্রী নিয়ে ২টি স্পিডবোট শাহপরীর দ্বীপে আসে।

নৌরুটে যাতায়াত বন্ধ থাকায় মুঠোফোনে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, ট্রলারমালিক, সাধারণ জনগণ ও বাজার কমিটির প্রায় অর্ধশতাধিক লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিয়ে তাঁরা কোনো ধরনের আতঙ্কের মধ্যে নেই। তবে নৌযান চলাচল বন্ধ হওয়ায় তাঁরা দুর্ভোগে পড়েছেন।

এদিকে ৮ জুন থেকে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌরুটে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এর আগে ৫ ও ৮ জুন ওই নৌরুটের নাইক্ষ্যংদিয়া নামক এলাকা থেকে ট্রলার ও স্পিডবোট লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়েছিল। এতে কেউ হতাহত না হলেও ট্রলারের গায়ে সাতটি গুলি লাগে। এর পর থেকে উপজেলা প্রশাসন ওই নৌরুট দিয়ে নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেয়। এরপর বিকল্প হিসেবে সাগর উপকূলীয় শাহপরীর দ্বীপের বদরমোকামের ‘গোলগরা’ নামক এলাকা দিয়ে নৌযান চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু ট্রলারমালিকেরা ঝুঁকিপূর্ণ এই বিকল্প নৌরুট দিয়ে নৌযান চালাতে রাজি নন বলে জানান সেন্ট মার্টিন সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রশিদ।

সেন্ট মার্টিন দ্বীপ
ফাইল ছবি

দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়ার ব্যাঘাত

সেন্ট মার্টিন দ্বীপে বসবাসকারী কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য দ্বীপজুড়ে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। তার মধ্যে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আরেকটি সেন্ট মার্টিন বিএন ইসলামিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০৫। সরকারিভাবে ওই বিদ্যালয়ে সাতজন শিক্ষক-কর্মচারীর পদ থাকলেও কর্মরত রয়েছেন তিনজন শিক্ষক ও একজন দপ্তরি। আর বিএন ইসলামিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী তিন শতাধিক। শিক্ষক-কর্মচারী ১৩ জন। এর মধ্যে ১৩ জুন ঈদ ও গ্রীষ্মকালীন ছুটি হয় বিদ্যালয় দুটিতে। এর মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ শিক্ষক সেন্ট মার্টিন ছেড়ে যান। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় বিদ্যালয় দুটির বেশির ভাগ শিক্ষক দ্বীপে ফিরতে পারেননি।

সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আক্তার কামাল বলেন, ‘দ্বীপের মানুষের কপালে বড় দুঃখ আছে। খেয়ে না–খেয়ে কোনোরকমে বেঁচে আছি। কিন্তু এসবের পরও শিক্ষার্থীরা যদি পড়াশোনা করতে পারত তবে শান্তি লাগত। বর্তমানে দুটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক শূন্যতার কারণে লেখাপড়ার ব্যাঘাত ঘটছে।’

নিত্যপণ্য ও খাদ্যসংকট

নিয়মিত নৌপথের পাশাপাশি বিকল্পপথেও টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে যাত্রী ও পণ্যবাহী নৌযানের চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে চাল, ডাল, ডিম, মুরগি, গ্যাস, ভোজ্যতেল, জ্বালানি, তরিতরকারিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।।

জেটিঘাটের কয়েক শ দোকান-হোটেল–রেস্তোরাঁ নিয়ে সেন্ট মার্টিনের প্রধান বাজার। আজ খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অধিকাংশ দোকানপাটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর মজুত নেই। কয়েকটি দোকানে কিছু চাল-আটা-ময়দা, ভোজ্যতেলসহ জ্বালানি থাকলেও তা বেচাবিক্রি হচ্ছে অতিরিক্ত দামে। বাজারের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে কয়েকটি দোকানে গতকাল শুক্রবার কোনো ডিম পাওয়া যায়নি। তবে এক সপ্তাহ আগে ১টি ডিম বিক্রি হয়েছে ২৫ টাকায়। ১ কেজি আলু ১১০ ও ১ কেজি পেঁয়াজ ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়।

গত ২২ জুন বিকল্প পথে রোগীসহ কয়েকজন যাত্রী নিয়ে দুটি স্পিডবোট টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ এসে পৌঁছায়
ফাইল ছবি

মুদিদোকানি মো. হোসেন বলেন, নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় টেকনাফ থেকে খাদ্যসামগ্রী ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আনা যাচ্ছে না। কোরবানির ঈদের পর ২২ জুন তিনি সয়াবিন তেল, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, ডিম ও চাল নিয়ে এসে গুদামে মজুত করেছিলেন। মানুষের কষ্ট হচ্ছে দেখে মজুত মালামাল বিক্রি করছেন। কিন্তু নৌরুটে ট্রলার চলাচল বন্ধ থাকায় কোনো ট্রলার যাতায়াত করতে পারছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে দ্বীপের মানুষ না খেয়ে মরবেন।

এ ব্যাপারে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, ‘খেয়ে না–খেয়ে কোনোরকমে বেঁচে আছি। বলা যায়, দ্বীপের মানুষ সাগরের মাঝখানে কারাবন্দী জীবন যাপন করছেন। নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় সেন্ট মার্টিনে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীর সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। নৌযান চলাচল স্বাভাবিক করতে স্থানীয় প্রশাসনকে নাফ নদীর বদরমোকাম এলাকায় কোস্টগার্ড ও বিজিবির টহল জোরদার করতে হবে। একই সঙ্গে বদরমোকাম এলাকায় ডুবোচর জেগে ওঠায় খনন করাও জরুরি।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কমর্কতা মো. আদনান চৌধুরী বলেন, খাদ্যসংকট নিরসনে নাফ নদীর পরিবর্তে বঙ্গোপসাগরের টেকনাফ উপকূল দিয়ে সেন্ট মার্টিনে খাদ্যসামগ্রীসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে ট্রলার চলাচলের অনুমতি দেওয়া হলেও সাগর উত্তাল থাকায় কোনো ট্রলার ঝুঁকি নিয়ে যাচ্ছে না, তবে তাঁরা চেষ্টা চালাচ্ছেন।