কয়রার আমিনিয়া মাদ্রাসার প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের স্মৃতিময় এক দিন

খুলনার কয়রা উপজেলার কালনা আমিনিয়া কামিল মাদ্রাসার পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা। গতকাল মঙ্গলবার সকালে মাদ্রাসা প্রাঙ্গণেছবি: প্রথম আলো

আষাঢ়ের ভ্যাপসা গরম আর হালকা রোদের দুপুর। এর মধ্যে খুলনার সুন্দরবনসংলগ্ন কয়রা উপজেলার কালনা আমিনিয়া কামিল মাদ্রাসার মাঠ মুখর হয়ে উঠেছে নানা বয়সী প্রাক্তন শিক্ষার্থীর পদচারণে। তাঁদের কেউ ব্যাংকার, কেউ প্রবাসী, কেউ গণমাধ্যমকর্মী, কেউ শিক্ষক আবার কেউ সরকারি চাকরিজীবী। কারও ১০ বছর, কারও ২০ বছর আবার কারও প্রায় ৫০ বছর পর একের সঙ্গে অন্যের দেখা। আড্ডা, আলাপচারিতা, কুশল বিনিময়, স্মৃতিচারণায় মেতে ওঠেন মাদ্রাসার প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।

গতকাল মঙ্গলবার কালনার আমিনিয়া অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন দিনব্যাপী এই পুনর্মিলনীর আয়োজন করে। মাদ্রাসাটি স্থাপিত হয়েছিল ১৯৩৫ সালে। এ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ১৯৮২ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৪১টি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা নিবন্ধন করেছিলেন। প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথম এত বেশি প্রাক্তন শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে আয়োজকেরা জানিয়েছেন।

মাদ্রাসার পুনর্মিলনী উৎসবে অংশ নিতে সাতক্ষীরা থেকে ছুটে আসেন ইদ্রিস আলী। ২০০৬ সালে তিনি এই মাদ্রাসা থেকে দাখিল ও ২০০৮ সালে আলিম পাস করেন। সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক ইদ্রিস আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে এখন সব বন্ধুর সঙ্গেই আমার কমবেশি যোগাযোগ আছে। তবে একসঙ্গে তো এভাবে বসে আর আড্ডা দেওয়া হয় না। মাদ্রাসায় পড়ার সময় মনে হতো, কবে এই সময় শেষ হবে। কিন্তু এখন মনে হয়, জীবনের সেরা সময়টুকু ওটাই ছিল।’

কালনার আমিনিয়া অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন দিনব্যাপী এই পুনর্মিলনীর আয়োজন করে। এ উপলক্ষে শোভাযাত্রা, স্মৃতিচারণা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়
ছবি: প্রথম আলো

১৯৯৬ সালের দাখিল ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, ‘এত দিন পর এমন একটা অনুষ্ঠান সত্যিই অনেক আনন্দের। সবাই তো চাকরি ও সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। এর মধ্যে এমন একটা দিন কিছুটা হলেও পুরোনো অনেক স্মৃতি মনে করিয়ে দিল। এ আয়োজন ধারাবাহিকভাবে করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া উচিত।’

পুনর্মিলনী উপলক্ষে শোভাযাত্রা, স্মৃতিচারণা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. রশীদুজ্জামান। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুস আলীর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন কয়রা উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান জি এম মহসিন রেজা, মাদ্রাসার প্রাক্তন শিক্ষার্থী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিলাল হোসাইন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবুল বাশার প্রমুখ।

মাদ্রাসা থেকে ১৯৮৫ সালে দাখিল পরীক্ষা দেওয়া অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘পুনর্মিলনীতে এসে মনে পড়ে যাচ্ছে মাদ্রাসার স্মৃতিগুলো। অনেক সহপাঠীদের সঙ্গে বাস্তবতার কারণে অনেক দিন দেখা হয়নি। পুনর্মিলনীতে এসে আবার তাঁদের সঙ্গে দেখা হলো। সত্যিই নস্টালজিক হয়ে পড়েছি আমরা। আজকে মনে হচ্ছে, আবার পুরোনো দিনে ফিরে গেছি।’

মাদ্রাসার প্রাক্তন ছাত্র ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, ‘ব্যস্ততার কারণে যোগাযোগ না থাকায় পরিচিত মুখগুলো হারিয়ে যাচ্ছিল। বহু বছর পর মাদ্রাসার পরিচিত মুখগুলো একসঙ্গে হয়েছে আজ। ছোটবেলার সেই রঙিন দিনগুলো বারবার মনে পড়ছে। এই মিলনমেলা যেন আমাদের সামনে এগিয়ে চলার শক্তি আরও দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।’