সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার রাতারগুলসংলগ্ন সারি-গোয়াইন নদীর জলুরমুখ এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে বালু তোলায় নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। ফলে রাতারগুল এখন হুমকির মুখে। আশপাশের পাঁচটি গ্রামের মানুষ কৃষিজমি ও বসতভিটা হারানোর আশঙ্কায় আছে। অথচ প্রকৃতি ও পরিবেশবিধ্বংসী এসব কর্মকাণ্ড রুখতে প্রশাসন নীরব।
আজ মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাতারগুল খেয়াঘাট এলাকায় আয়োজিত এক নাগরিক বন্ধন কর্মসূচিতে বক্তারা এসব অভিযোগ করেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেট শাখা ও সুরমা রিভার ওয়াটারকিপারের যৌথ উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালিত হয়।
রাতারগুল এলাকার প্রবীণ ব্যক্তি আবদুল করিম শিকদারের সভাপতিত্বে নাগরিক বন্ধনে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম চৌধুরী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জহিরুল হক শাকিল, অধ্যাপক আলী ওয়াক্কাস, বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সহ–আইনবিষয়ক সম্পাদক সৈয়দা সীমা করিম, গোয়াইনঘাট উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
বাপার সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম চৌধুরী বলেন, রাতারগুলসংলগ্ন জলুরমুখ এলাকায় প্রতি রাতে বালু উত্তোলন করছে ‘বালুখেকো’ দুর্বৃত্তদের একটি চক্র। নিজেদের প্রভাবশালী দাবি করা এ চক্রের বালু উত্তোলনের ফলে রাতারগুল ভাঙনের মুখে। এ ছাড়া পাশের চালিতাবাড়ীসহ একাধিক গ্রামের মানুষ কৃষিজমি ও বসতভিটা হারানোর হুমকিতে আছেন। এ অবস্থায় স্থানীয় প্রশাসন দুর্বৃত্তদের দমনে ব্যর্থ হওয়ায় পরিবেশবাদীরা এ প্রতিবাদী নাগরিক বন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।
প্রায় এক ঘণ্টা এ কর্মসূচি চলে। এতে বাপার কর্মী সুপ্রজিত তালুকদার ও বাবুল আল মামুন, রাতারগুল গ্রামের বাসিন্দা হারিছ মিয়া, মিনহাজ উদ্দিন, মো. সোনা মিয়া, গিয়াস উদ্দিন, ফখরুল ইসলাম, আবদুল কাদির, বিল্লাল আহমদ, কাওছার আহমদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। কর্মসূচি শেষে বাপা নেতৃবৃন্দ নদীভাঙনের শিকার ক্ষতিগ্রস্ত রাতারগুল এলাকা পরিদর্শন করেন।
স্থানীয় ব্যক্তিরা কর্মসূচিতে জানান, এলাকার একটি প্রভাবশালী চক্র প্রতিনিয়ত জলুরমুখ নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে। অথচ এ এলাকায় কোনো বালুমহাল নেই এবং সরকারও ইজারা দেয়নি। এরপরও ড্রেজার মেশিন দিয়ে প্রতিনিয়ত জলুরমুখ এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। রাতের আঁধারে যাঁরা বালু উত্তোলন করেন, তাঁরা নিজেরাও বোঝেন, এটা অপরাধ। তাই চোরের মতো তাঁদের এ কাজ করতে হচ্ছে। চোরদের দমন করা প্রশাসনের দায়িত্ব। সে দায়িত্ব পালনে প্রশাসন ব্যর্থ হলে মানুষ মনে করতে পারে ‘বালুখেকোদের’ সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের যোগাযোগ আছে।
পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বন বিভাগের জায়গা যেখানে শুরু, তার ঠিক ৫০০ মিটার আগে চেঙেরখাল বালুমহালের অবস্থান। এ অংশটিতে প্রশাসনের কড়া নজরদারি আছে। কোনোভাবেই যেন নির্ধারিত বালুমহাল পেরিয়ে বালু উত্তোলন করা না হয়, সেটি স্থানীয় প্রশাসন দেখে থাকে। তিনি বলেন, ‘যখন অভিযোগ পাই, তখনই এর বিরুদ্ধে অভিযান চলে। রাতারগুল আমাদের সম্পদ। এটি টিকিয়ে রাখতে স্থানীয় প্রশাসন কাজ করছে।’