রায়পুরায় বিয়ের অনুষ্ঠানে হামলা-অগ্নিসংযোগ, দুজন টেঁটাবিদ্ধসহ আহত ২৫

নরসিংদীর রায়পুরার চরআড়ালিয়াতে হামলা–সংঘর্ষে টেঁটাবিদ্ধদের একজন
ছবি: সংগৃহীত

নরসিংদীর রায়পুরার দুই মাস আগে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে বিজয়ী ও পরাজিত প্রার্থীকে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেওয়াকে কেন্দ্র করে হামলায় কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত চরআড়ালিয়া ইউনিয়নের বাঘাইকান্দি গ্রামে এসব ঘটনা ঘটে।

পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। এ সময় ওই বিয়েবাড়ি ও চেয়ারম্যানের বাড়িসহ অন্তত ১০টি বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন টেঁটাবিদ্ধ হয়েছেন। টেঁটাবিদ্ধ ব্যক্তিরা হলেন বাঘাইকান্দি গ্রামের বাহার উদ্দীন (৬০) ও কাজিম উদ্দীন (৪০)। বাহার উদ্দীন পায়ে ও কাজিম উদ্দীন হাতে টেঁটাবিদ্ধ হয়েছেন। দুজনকেই টেঁটাবিদ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। সেখানে তাঁদের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ঘটনাটিকে নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা বলছেন স্থানীয় লোকজন ও ভুক্তভোগীরা।

এ ঘটনায় আজ মঙ্গলবার দুপুরে রায়পুরা থানায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগীদের একজন মো. আবু কালাম। মামলায় ২২ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরও ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। এরই মধ্যে তিনজন আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ।

নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর থেকেই প্রতিপক্ষরা একটি ইস্যু খুঁজছিল। বিয়েবাড়িতে দুজনকে দাওয়াত দেওয়া নিয়ে যে ঘটনা তারা ঘটিয়েছে, অবশ্যই শাস্তি হতে হবে। এসব ঘটনায় অন্তত ১০টি বাড়ি পুড়েছে, বাড়িগুলোতে ভাঙচুর এবং লুটপাট হয়েছে। কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়েছেন। এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য, প্রশাসন ও পুলিশকে বিস্তারিত জানানো হয়েছে। তাঁরা ব্যবস্থা নেবেন, এই আশায় আছি।
মাসুদা জামান, ইউপি চেয়ারম্যান, চরআড়ালিয়া

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চরআড়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় চলতি বছরের ৯ মার্চ। জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক হাসানুজ্জামান সরকার ওই ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান। মামলাসহ নানা কারণে গত ইউপি নির্বাচনে তিনি অংশ না নিয়ে স্ত্রী মাসুদা জামানকে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী করেন। ওই নির্বাচনে মাসুদা জামান বিজয়ী হন। তিনি নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সজীব সরকারের চেয়ে দ্বিগুণ ভোট পান। এভাবে হেরে যাওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি সজীব সরকার।

ভুক্তভোগী ও স্থানীয় লোকজন জানান, চেয়ারম্যান মাসুদা জামানের স্বামী হাসানুজ্জামান সরকারের চাচাতো বোনের মেয়ের বিয়ে ছিল গতকাল দুপুরে। ওই বিয়ের দাওয়াতে গিয়েছিলেন তাঁরা। তাঁরা দাওয়াত খেয়ে চলে আসার পর বিকেল সাড়ে চারটার দিকে পরাজিত প্রার্থী সজীব সরকারের সমর্থক নিকচাঁন সরকারের নেতৃত্বে একদল কর্মী-সমর্থক বিয়েবাড়িতে গিয়ে ‘বিএনপির চেয়ারম্যানকে কেন দাওয়াত দেওয়া হলো’ জানতে চান। এ সময় তাঁরা ওই বিয়েবাড়ির লোকজনকে চড়থাপ্পড় মেরে খাবারদাবার ফেলে দেন এবং চারটি গরু লুট করে নিয়ে যান।

এ সময় হাসানুজ্জামান সরকারের চাচাতো ভাই আবু কালাম দৌড়ে ইউপি কার্যালয়ে যান। থানা-পুলিশকে এ খবর জানানো হলে পার্শ্ববর্তী আমিরগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক আমিনুল ইসলামসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে যান। একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের সামনেই হামলাকারীরা চেয়ারম্যান বাড়িতে ককটেল নিক্ষেপ করে ভাঙচুর চালান এবং বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করেন। এ সময় চেয়ারম্যান মাসুদা জামান ঘর থেকে বেরিয়ে এলে তাঁর হাত থেকে মুঠোফোনসহ ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়া হয়। পরে চেয়ারম্যান মাসুদা জামান খালি পায়ে খেতের আল ধরে দৌড়ে কোনোমতে পালিয়ে যান। পরে আরও অন্তত ৯-১০টি বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করেন হামলাকারীরা। ওই সময় পুলিশ সদস্যরা অসহায়ভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে সজীব সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে পরে কথা বলবেন বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে আর তাঁকে মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি। হামলায় নেতৃত্ব দেওয়া নিকচাঁন সরকারের কাছে জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন, চেয়ারম্যানের বাড়িতে হামলার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তবে বিয়েবাড়িতে তাঁরা গেলে কথা-কাটাকাটি হয়। যেহেতু তাঁরা একই বংশের লোক, তাই বিএনপির লোকজনকে দাওয়াত দেওয়ার বিষয়ে তাঁদের জিজ্ঞেস করতেই পারেন।

ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদা জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর থেকেই প্রতিপক্ষরা একটি ইস্যু খুঁজছিল। বিয়েবাড়িতে দুজনকে দাওয়াত দেওয়া নিয়ে যে ঘটনা তারা ঘটিয়েছে, অবশ্যই শাস্তি হতে হবে। এসব ঘটনায় অন্তত ১০টি বাড়ি পুড়েছে, বাড়িগুলোতে ভাঙচুর এবং লুটপাট হয়েছে। কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়েছেন। এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য, প্রশাসন ও পুলিশকে বিস্তারিত জানানো হয়েছে। তাঁরা ব্যবস্থা নেবেন, এই আশায় আছি।’

রায়পুরা থানার ওসি সাফায়েত হোসেন বলেন, বিয়ের দাওয়াত নিয়ে দ্বন্দ্বে ইউপি নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকেরা এসব ঘটিয়েছেন। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে, তিনজন আসামিও গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁদের এরই মধ্যে আদালতে পাঠানো হয়েছে। জড়িত বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। পুনরায় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা আছে।