মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু, চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি

সমাবেশের মাঠ পরিদর্শনে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ সফল করতে শেষ সময়ের প্রস্তুতি চলছে। সমাবেশে ব্যাপক লোকসমাগমের জন্য চলছে প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগ। বরিশাল নগরের প্রতিটি ওয়ার্ড এবং বিভাগের সব জেলা ও উপজেলায় নেতা-কর্মীরা প্রচার লিফলেট বিলিসহ প্রস্তুতি সভা করছেন প্রতিদিন। আজ বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে সমাবেশের মঞ্চ তৈরির কাজ। বরিশাল মহানগরজুড়ে সমাবেশের পক্ষে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করেছেন নগর বিএনপির নেতারা।

নগরের জিলা স্কুল মাঠে ৪ ফেব্রুয়ারি বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এ উপলক্ষে আজ সকালে মঞ্চ নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন শ্রমিকেরা। দুপুরে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস আক্তার জাহান, কেন্দ্রীয় সদস্য এবায়দুল হক, মেজবাহ উদ্দীন, আবুল হোসেন খানসহ মহানগরের নেতারা মাঠের প্রস্তুতি ঘুরে দেখেন। তাঁরা প্রায় এক ঘণ্টা মাঠে অবস্থান করে সমাবেশের প্রস্তুতি ও নিরাপত্তার বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করেন।

এর আগে নগর ও জেলা বিএনপির নেতারা সদর রোড, পুলিশ লাইনস রোড, জিলা স্কুল মোড়, গির্জা মহল্লাসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। এতে উপস্থিত ছিলেন বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য আবুল হোসেন খান ও মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান, সদস্যসচিব মীর জাহিদুল কবিরসহ অন্য নেতারা। পরে বিকেল চারটায় সদর রোডের দলীয় কার্যালয়ে মহানগর এবং দক্ষিণ ও উত্তর জেলা বিএনপির নেতাদের নিয়ে যৌথ প্রস্তুতি সভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস আক্তার জাহান।

সভায় উপস্থিত দলীয় একাধিক নেতা বলেন, ৪ ফেব্রুয়ারি বিভাগীয় সমাবেশ নিয়ে সভায় বিস্তারিত আলাপ–আলোচনা হয়েছে। যেকোনো মূল্যে সমাবেশ সফল করতে নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গত ৪ নভেম্বর বরিশালে বিভাগীয় গণসমাবেশে যেন জনসমাগম কম হয়, সে জন্য আওয়ামী লীগের ইন্ধনে লঞ্চ, বাসসহ সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ করে দিয়ে বরিশালকে সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল। এবারের বিভাগীয় সমাবেশ ঘিরে একই ধরনের পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা করছেন বিএনপির অনেক নেতা। ওই রকম পরিস্থিতি হলে, কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সে বিষয়েও সভায় আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া সমাবেশ ঘিরে পুলিশি হয়রানি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেন অনেক নেতা।

সকাল থেকে নগর ও জেলা বিএনপির নেতারা সদর রোড, পুলিশ লাইনস রোড, জিলা স্কুল মোড়, গির্জা মহল্লাসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন
ছবি: প্রথম আলো

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিভাগীয় সমাবেশ আয়োজনের জন্য নগরের বঙ্গবন্ধু উদ্যানের অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছিল বিএনপি। তবে সেখানে সাত দিনব্যাপী বিভাগীয় এসএমই মেলা চলায় বিকল্প হিসেবে বরিশাল জিলা স্কুল মাঠে সমাবেশের অনুমতি পেয়েছে দলটি। বিএনপির নেতা-কর্মীদের মুক্তি; গ্যাস, বিদ্যুৎ, নিত্যপণ্যের দাম কমানোসহ ১০ দফা দাবিতে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খানের উপস্থিত থাকার কথা আছে।

বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা বিলকিস আক্তার জাহান আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিভাগীয় সমাবেশের সব ধরনের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। প্রচুর লোকসমাগম হবে বলে আমরা আশা করছি। তবে জিলা স্কুল মাঠ ছোট হওয়ায় কিছুটা সমস্যা হবে। এ জন্য অনেক লোককে বাইরে অবস্থান নিতে হবে। বেলস পার্কে (বঙ্গবন্ধু উদ্যান) সমাবেশ করতে পারলে ভালো হতো। তবে আমাদের প্রস্তুতি প্রায় গুছিয়ে এনেছি।’

সমাবেশে সাধারণ মানুষ নিজেদের তাগিদে যোগ দেবেন দাবি করে তিনি বলেন, ‌‘আমরা বিশ্বাস করি, দেশবাসী ১০ দফা দাবিতে আজ ঐক্যবদ্ধ। তাই ৪ ফেব্রুয়ারির সমাবেশে সাধারণ মানুষ নিজেদের তাগিদেই যোগ দেবেন। এ ছাড়া আমরা এরই মধ্যে বিভাগের সাতটি সাংগঠনিক জেলা ও মহানগর এবং প্রতিটি উপজেলায় প্রস্তুতি সভা করেছি। এতে বিভাগজুড়ে বেশ সাড়া পড়েছে।’

সমাবেশে বাধা দেওয়ার আশঙ্কা আছে কি না জানতে চাইলে বিলকিস আক্তার বলেন, গত বছরের ৪ নভেম্বরের অভিজ্ঞতা সবার মনে আছে। দুই দিন আগে বরিশালকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল। এর ফলে এক দিনের সমাবেশ তিন দিনব্যাপী হয়েছিল। মানুষ যে যার মতো করে চাল, ডাল, বিছানাপত্র নিয়ে তিন দিন আগে থেকে মাঠে অবস্থান নিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ জনস্রোত বন্ধ করতে পারেনি। এবারও আওয়ামী লীগ বাধা দেবে, হামলা–গ্রেপ্তার–নির্যাতন হবে—এটা ধরেই বিএনপি মাঠে নেমেছে। সমাবেশ সফল হবে এবং জনস্রোত কোনোভাবে আটকানো যাবে না।