শিক্ষকসংকটে ব্যাহত সোনাদিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান
তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কক্ষে পাঠ দান করছেন দুজন শিক্ষক। তখন বাইরে খেলাধুলা করছিল পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। কারণ, তাদের ক্লাস নেওয়ার মতো শিক্ষক নেই। শতাধিক শিক্ষার্থীর এই বিদ্যালয়ে কোনো শ্রেণিতে ক্লাস হলে অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শিক্ষকের অপেক্ষায় বসে থাকতে হয়। বিদ্যালয়ে ছয়জন শিক্ষকের পদ থাকলেও আছেন একজন স্থায়ী শিক্ষক। তিনি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন আবার পাঠ দানও করেন। তাঁর পাশাপাশি একজন প্রেষণে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক এবং একজন খণ্ডকালীন শিক্ষক বিদ্যালয়ে পাঠ দান করছেন।
শিক্ষকসংকটে এভাবেই চলছে কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর সোনাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম। বিদ্যালয়ের তিন শিক্ষকের মধ্যে প্রধান শিক্ষক নানা কাজেই বাইরে থাকেন বেশির ভাগ সময়। তাই একজন খণ্ডকালীন শিক্ষক ও প্রেষণে নিয়োগ পাওয়া একজন শিক্ষককে সব শ্রেণির পাঠদান চালিয়ে নিতে হচ্ছে।
১৯৮৮ সালে সোনাদিয়ার পূর্বপাড়ায় প্রতিষ্ঠিত হয় দ্বীপের একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সোনাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। গত ১০ মাসেরও বেশি সময় ধরে বিদ্যালয়টি শিক্ষকসংকটে ভুগছে। বিদ্যালয়-সংশ্লিষ্টরা জানান, বাইরে থেকে শিক্ষক নিয়োগ দিলেও তাঁরা তদবির করে অন্যত্র বদলি হয়ে যান। ফলে ১০১ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে সেখানে স্থায়ী শিক্ষক মাত্র একজন। প্রধান শিক্ষক ছাড়া কোনো সহকারী শিক্ষক নেই বিদ্যালয়টিতে। এক মাস আগে অন্য একটি বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষককে প্রেষণে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাঁর সঙ্গে একজন খণ্ডকালীন শিক্ষক দেন স্থানীয় সংসদ সদস্য।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের এপ্রিলে সহকারী শিক্ষক রোকেয়া জান্নাত ও রকিয়ত উল্লাহ অন্যত্র বদলি হয়ে যান। একই বছর জুলাই মাসে চাকরি ছেড়ে দেন সহকারী শিক্ষক মো. শাহেদুল ইসলাম ও শাহেদ হোছাইন। আরেক শিক্ষক আহাসানুল আরফাত গত বছরের আগস্ট মাস থেকে অনুপস্থিত। টানা আট মাস ধরে প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ মোক্তার আহমদ একাই সব শ্রেণির পাঠ দান করতেন। এক মাস আগে তাজিয়াকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সহকারী শিক্ষক মোস্তফা কামালকে প্রেষণে সোনাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
সোনাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ মোক্তার আহমদ বলেন, টানা আট মাস কোনোরকমে বিদ্যালয়ের পাঠদান চলছিল। এর মধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ তাঁর নিজস্ব তহবিল থেকে খণ্ডকালীন শিক্ষক আবদুল গফুরকে নিয়োগ দেন। পরে গত মাসে প্রেষণে আরও একজন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ছাড়া দাপ্তরিক কাজে বিভিন্ন সময়ে তাঁকে বাইরে থাকতে হয়। ফলে জোড়াতালি দিয়ে চলছে বিদ্যালয়ের পাঠদান।
সোনাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ মোক্তার আহমদের বাড়ি কুতুবজোম ইউনিয়নের নয়াপাড়ায়। প্রতিদিন নৌপথ পাড়ি দিয়ে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করেন তিনি। জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভর করে ঘটিভাঙা ঘাট থেকে নৌকা ছাড়ে। এ কারণে যথাসময়ে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হতে পারেন না বলেও জানান তিনি।
প্রেষণে নিয়োগপ্রাপ্ত বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোস্তফা কামাল বলেন, দাপ্তরিক কাজে প্রধান শিক্ষক বাইরে থাকলে খণ্ডকালীন একজন শিক্ষক নিয়ে দুই শিফটে পুরো বিদ্যালয়ের পাঠদান চালাতে হয় তাঁকে। এতে করে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহেশখালী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ভবরঞ্জন দাশ প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষকসংকট নিরসনকল্পে গত মাসে প্রেষণে একজন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এভাবে নিয়মিত পাঠদান চালানো মোটেই সম্ভব নয়। তাই সামনে শিক্ষক নিয়োগ হলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সোনাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে।