খুনিদের বিচার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ও প্রথম সংস্কার: হাসনাত আবদুল্লাহ

কুমিল্লায় ‘জুলাই সমাবেশে’ সভাপতির বক্তব্য দেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। শুক্রবার রাতে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনেছবি: প্রথম আলো

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘যদি মনে করে থাকেন আওয়ামী লীগের বিচার ছাড়া অন্য কোনো বড় সংস্কার রয়েছে, তাহলে আপনারা ভুলের মধ্যে রয়েছেন। খুনিদের বিচার হচ্ছে এই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান এবং প্রথম সংস্কার। আমরা এই সংস্কারটিকেই প্রথমে দেখতে চাই।’

শুক্রবার রাত আটটার দিকে কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনে আয়োজিত ‘জুলাই সমাবেশে’ সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন। জুলাই অভ্যুত্থানে কুমিল্লার আহত ও শহীদদের সম্মানে এ সমাবেশের আয়োজন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

বক্তব্যের শুরুতে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আজকে একজন শহীদের স্ত্রী আমার কাছে এসে বলেছেন, “আমার স্বামীকে তো আর ফিরিয়ে দিতে পারবেন না; কিন্তু যাদের ধরা হয়েছে কোর্ট তাঁদের জামিন দিয়ে দিচ্ছেন। হত্যাকারীরা ৫ আগস্টের আগে যেভাবে ঘুরত, ঠিক একইভাবে আমাদের বাড়ির সামনে গিয়ে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়।” আমি মনে করি এটা আমাদের ব্যর্থতা, এটা আসিফ নজরুল স্যারেরও ব্যর্থতা।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আসিফ নজরুল স্যারের কাছে জানতে চাই জুলাই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের কোন কোন বিচারক জামিন দেয়। এসবের পেছনে কাদের ইন্ধন রয়েছে। আপনার প্রতি শিক্ষার্থীদের আশা-আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। আপনি সেটার মূল্য দেবেন।’

নির্বাচন কমিশন নিয়ে হাসনাত বলেন, ‘আমরা প্রস্তাবনা দিয়েছি, যারা ফেরারি আসামি আছে, যারা গণহত্যার আসামি আছে, তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাইলে সশরীর এসে মনোনয়ন জমা দিতে হবে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সেটার বিরোধিতা জানিয়েছে। আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে জানতে চাই, আপনারা কাদের পারপাস সার্ভ করছেন?’

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হলেও তাদের অর্থদাতারা এখনো অক্ষত আছে মন্তব্য করে হাসনাত বলেন, ‘আমি এখন যেহেতু কুমিল্লা রয়েছি, তাই কুমিল্লাকে দিয়ে উদাহরণ দিতে চাই। কুমিল্লার অনেক উপজেলা রয়েছে, যেখানে আওয়ামী লীগের রাজনীতির পাশাপাশি বিএনপির রাজনীতিও আওয়ামী লীগের টাকায় চলে। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলতে চাই, অতি দ্রুত আওয়ামী লীগের অর্থকাঠামো ধ্বংস করে দিতে হবে। আওয়ামী লীগের সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। তাদের অর্থকাঠামো ঠিক রেখে আপনি কখনোই যথাযথ সংস্কার করতে পারবেন না।’

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা শুধু আওয়ামী লীগ নিয়ে কথা বলি। কিন্তু তাদের সহযোগী যেই ১৪ দল রয়েছে, তাদের নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কী চিন্তা করছে, তা-ও আমাদের স্পষ্ট করতে হবে। আওয়ামী লীগের সহযোগী জাপা ভারত থেকে এসে বলত, আমরা কি সরকারি দল হব, না বিরোধী দল হব, সেটা আপার সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব।’

মানবিক করিডরের বিষয়ে হাসনাত বলেন, ‘আমাদের দেশকে আমরা কোনো পরাশক্তির কাছে বন্ধক রাখব না। মানবিক করিডর নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে স্পষ্ট বক্তব্য দিতে হবে। এখানে আমরা কোনো ধোঁয়াশা দেখতে চাই না। দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আমরা কোনো আপস দেখতে চাই না।’ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে সব সময় মুলা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। আমরা সরকারকে বলব, টালবাহানা না করে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নিন। কারণ তাঁদের দাবিগুলো মৌলিক দাবি।’

জুলাই ঘোষণাপত্রের প্রসঙ্গ টেনে হাসনাত বলেন, ‘আপনারা এক মাসের সময় নিয়েছেন, সেটির বাকি আগামী ২৬ কর্মদিবসের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র সরকারকে দিতে হবে, যেখানে আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে। যদি তা না হয়, তাহলে আমরা আবারও রাজপথে নেমে আসব।’

ফ্যাসিবাদবিরোধী সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের ঐক্যে ফাটল ধরলে কাদের লাভ, সেটা সবারই জানা। তাই আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। সব রাজনৈতিক দলকে কুমিল্লার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আওয়ামী লীগ যদি একবার ফিরে আসতে পারে, তাহলে কুমিল্লাতে আলাদা স্টেট করে দেবে। কারণ, শেখ হাসিনা ও তাঁর বাবার দিবারাতের দুঃস্বপ্ন ছিল এই কুমিল্লা।’

সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখার কথা ছিল স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার। তবে শেষ পর্যন্ত ‘অনিবার্য কারণবশত’ তাঁর সফর বাতিল হওয়ায় সমাবেশে আসতে পারেননি তিনি। সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ফেস দ্য পিপলের সম্পাদক সাইফুর সাগর, এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক নাভিদ নওরোজ শাহ, যুগ্ম সদস্যসচিব রিফাত রশিদ ও জয়নাল আবেদীন।

সমাবেশে অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সচেতন রাজনৈতিক ফোরাম কুমিল্লার প্রধান সমন্বয়ক শাহ্ মো. সেলিম, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আশিকুর রহমান মাহমুদ (ওয়াসিম), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কুমিল্লা মহানগরের সভাপতি এম এম বিল্লাল হুসাইন, এবি পার্টির কুমিল্লা মহানগরের সভাপতি জি এম সামদানী প্রমুখ।