ইট পরিবহনে নদীর মধ্যে বাঁধ, ভাঙছে ভিটেবাড়ি

গাজীখালি নদীর ওপর ইটভাটার মালিকদের বানানো রাস্তা। সম্প্রতি পানির চাপে এই রাস্তার মাঝখানে ভাঙন দেখা দেয়। এতে তীব্র স্রোতের কারণে ভাঙছে অনেকের ভিটেবাড়ি
ছবি: প্রথম আলো

বয়সের ভারে ন্যুব্জ হাজেরা খাতুন (৬৫)। বাড়ির উঠানের এক পাশে বসে দেখছেন ভিটেবাড়ির ভাঙন। পানির চাপে এরই মধ্যে ভেঙে গেছে তাঁর বসতবাড়ির দুই থেকে তিন শতাংশ জমি। ধামরাইয়ের নওগাঁও এলাকা দিয়ে প্রবাহিত শান্ত গাজীখালি নদীকে হাজেরার মতো অনেকের জন্য ভয়ংকর হতে বাধ্য করেছে নদীর এক পাশের কয়েকটি ইটভাটা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইটভাটার মাটি ও কয়লা আনা–নেওয়া করতে নদীতে আড়াআড়ি বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। ইট সুরকি আর মাটি দিয়ে প্রায় ১২০ ফুট প্রস্থের এই বাঁধের মধ্য দিয়ে পানি প্রবাহের জন্য পাঁচটি পাইপ বসানো হয়েছে। প্রায় দুই মাস আগে বন্যার পানির চাপে পাইপগুলো ভেসে যায়। সেই সময় থেকে বাঁধের ভাঙা ওই ১৫ থেকে ২০ ফুট জায়গা দিয়ে তীব্র বেগে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সেই পানির ধাক্কা গিয়ে লাগছে কয়েকজনের বসতবাড়িতে। এই পানির চাপে নওগাঁও এলাকার ৮–১০ জনের বাড়ি হুমকির মুখে পড়েছে।

ভুক্তভোগী কয়েকটি পরিবার জানায়,  কেবিসিও, এমবিসি ও নূর ব্রিকসের মালিকেরা ইটভাটায় ইট এবং কয়লা আনা-নেওয়ার জন্য হাজেরার বাড়ির পাশে নদী ভরাট করে মাটির বাঁধের রাস্তা নির্মাণ করেছেন। মালিকেরা খুবই প্রভাবশালী হওয়ায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। কেউই তাঁদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় না। অথচ পরিবেশ সংরক্ষণ (সংশোধিত) আইন-২০১০-এর ৬-এর ঙ ধারায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, জলাধার হিসাবে চিহ্নিত জায়গা ভরাট বা অন্য কোনোভাবে শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী কয়েকজন সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানান সুতিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য এ কে এম শফিউজ্জামান স্বপন। তিনি বলেন, ইটভাটার মালিকেরা নিজেদের সুবিধায় আগে একবার নওগাঁও বাজারে কাছাকাছি এ রকম রাস্তা বানিয়েছিলেন। তখন বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এবার তাঁরা সেটি সরিয়ে এখন যে জায়গায় রাস্তা বানিয়েছেন, সেখানেও বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

ইট ও কয়লা আনা–নেওয়ার জন্য নদীতে আইন লঙ্ঘন করে বাঁধ তৈরির  অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ধামরাই উপজেলা ইটভাটার মালিক সমিতির সভাপতি ও কেবিসিও ইটভাটার মালিক নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এটা সরকারি কাজ। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানেন। শুধু ইটভাটার জন্য সড়কটি করা হয়েছে—এ অভিযোগ সত্য নয়। পানি কমলে হাজেরা বেগমের বাড়ির ভাঙা অংশ মাটি ফেলে ভরাট করে দেওয়া হবে। প্রয়োজন হলে ইট দিয়ে নদীসংলগ্ন অংশটিতে দেয়াল করে দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী প্রথম আলোকে বলেন, জনগণের চলাচলের সুবিধার্থে নওগাঁও এলাকায় গাজীখালি নদীর ওপর একটি রাস্তার বিষয়ে তাঁকে জানানো হয়েছিল। তবে ওই রাস্তার কারণে যদি এলাকাবাসী ক্ষতিগ্রস্ত হন, তবে অবশ্যই সেটি দ্রুত ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হবে।