ধান ‘পাঠিয়ে’ চাল আনতে গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা 

  • প্রতি টন চাল আনতে অন্তত ৩০০০ টাকা পরিবহন ব্যয় হচ্ছে। 

  • ২০২২ সালে ৪০ হাজার মেট্রিক টন চাল দক্ষিণাঞ্চলে আনতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১২ কোটি টাকা।

  • পটুয়াখালী জেলা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে ১৪ হাজার ৯০৯ মেট্রিক টন চাল।

পটুয়াখালী জেলার মানচিত্র

আমন ধান উৎপাদনে দেশের দ্বিতীয় শীর্ষ জেলা পটুয়াখালী। অথচ এই জেলার চাহিদা মেটাতে অন্যত্র থেকে চাল সংগ্রহ করতে হচ্ছে খাদ্য বিভাগকে। ফলে বছরে পরিবহন খাতে অন্তত ১২ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে।

খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা ও কৃষকেরা বলছেন, জেলায় বছরে যে পরিমাণ আমন ধান উৎপাদিত হয় সে অনুযায়ী বেসরকারি পর্যায়ে চালকল নেই। ফলে এ জেলায় উৎপাদিত বেশির ভাগ ধান চলে যায় উত্তরাঞ্চলের চালকগুলোতে। আবার খাদ্যের চাহিদা মেটাতে উত্তরাঞ্চল থেকে চাল আনতে হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলে।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় জানায়, সরকারি প্রতিষ্ঠানের সরকারের বিশেষ প্রকল্প মিলিয়ে জেলায় গত বছর চালের চাহিদা ছিল ৫৫ হাজার ৩৬৮ দশমিক ২৮৮ মেট্রিক টন। জেলায় বিপুল পরিমাণ ধান উৎপাদন হলেও স্থানীয় চালকল থেকে মাত্র ১৪ হাজার ৯০৯ দশমিক ১৮৭ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ হয়েছে। বাকি ৪০ হাজার ৪৫৬ দশমিক ১৮৭ মেট্রিক টন চাল উত্তরাঞ্চল সরকারি খাদ্যগুদাম থেকে পরিবহন খরচ দিয়ে সংগ্রহ করতে হয়েছে।

জেলায় উৎপাদিত বেশির ভাগ ধান চলে যায় উত্তরাঞ্চলে। চাহিদা মেটাতে সেখান থেকে আনা হয় চাল।

খাদ্য বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন গুদাম থেকে ট্রাকে চাল আসে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি ঘাটে, পাবনার নগরবাড়ী ঘাটে ও খুলনা রূপসা ঘাটে। সেখানে পৌঁছাতে শ্রমিক বিল ও পরিবহন বিল বাবদ অর্থ ব্যয় হয়। এরপর পটুয়াখালীতে পৌঁছাতে কার্গোতে চাল তুলতে শ্রমিক বিল ও কার্গো পরিবহন বিল দিতে হচ্ছে। গত বছর ৪০ হাজার ৪৫৯ দশমিক ১৮৭ মেট্রিক টন চাল উত্তরাঞ্চল থেকে দক্ষিণাঞ্চলে আনতে পরিবহন ব্যয় হয়েছে প্রায় ১২ কোটি ১ লাখ টাকা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় আবাদি কৃষিজমির পরিমাণ ১ লাখ ৯৫ হাজার ৪৪২ হেক্টর। এ বছর ১ লাখ ৮৯ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। এতে প্রায় ৬ লাখ ৭৩ হাজার ৫৯৯ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হবে। চাল হবে ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৬৬ মেট্রিক টন। জেলায় মোট অটো ধানকল রয়েছে ৮টি ও ছোট ধানকল রয়েছে ১৫টি। এই ধানকলগুলো ১৫ দিনে মোট ৫ হাজার ২৮৭ টন উৎপাদনক্ষমতা রয়েছে। 

জেলায় আধুনিক চালকল স্থাপনের উদ্যোগের বিষয়ে অগ্রগতি আছে কি না, তা জানাতে পারেননি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মনোয়ার হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অনেক কৃষকই উত্তরাঞ্চলের চালকল মালিকদের প্রতিনিধিদের কাছে ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন। জেলায় চাহিদার চালের বেশির ভাগই বরিশাল বিভাগের বাইরে থেকে আনতে হচ্ছে। এতে চাল পরিবহনে অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পটুয়াখালীর উপপরিচালক মো. নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সরকারিভাবে একটি আধুনিক চালকল স্থাপন হলে স্থানীয় পর্যায়ে কৃষকেরা সেখানে সহজেই ধান দিতে পারবেন। এতে কৃষকদের উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হবে। স্থানীয় বাজারে চালের দাম সহনশীল থাকবে।