রাজশাহীতে আজ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা, কুয়াশা আর হিমেল বাতাসের দাপট
ঘড়িতে সকাল আটটা। কুয়াশার চাদরে ঢাকা রাস্তাঘাটে লোকজন নেই বললেই চলে। যেন সকালই হয়নি। কনকনে ঠান্ডায় কাবু রাজশাহী নগরের কর্মচঞ্চলতা নেই। কুয়াশা আর হিমেল বাতাসের দাপটে খুব বেশি লোকজন বাসার বাইরে বের হননি। তবে শ্রমজীবী মানুষের আনাগোনা আছে।
আবহাওয়া অফিস বলছে, আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় রাজশাহীতে দেশের সর্বনিম্ন ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৬ শতাংশ।
আজ সকাল সাড়ে আটটার দিকে রাজশাহী নগরের ঘোড়ামারায় গলির মোড়ে মাংসের দোকান ফেলে আগুন পোহাচ্ছিলেন এক কসাই। বোয়ালিয়া থানার সামনে সকাল থেকে দিবাগত রাত ১২টার পরও মানুষের ভিড় লেগেই থাকে। কিন্তু সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে দেখা যায়, শিশুকে কোলে নিয়ে দোকানের পাশে বসে আছেন এক নারী। আশপাশে আর কেউ নেই।
নগরের কুমারপাড়া মোড় শহরের আরেকটি ব্যস্ত জায়গা। সেখানে একই ভবনে কয়েকটি অভিজাত পোশাকের দোকান আছে। সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সেখানে গাড়ির চাপ লেগেই থাকে। তবে ওই সময়ে কোনো গাড়ি দেখা যায়নি। পাশে লাবণী নামের এক নারীর ডাবের দোকান। সকাল থেকে রাত প্রায় ১২টা পর্যন্ত হয় লাবণী, না হয় তাঁর প্রতিবন্ধী স্বামী ডাব নিয়ে সেখানে থাকেন। তবে সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে দোকানটি পলিথিনে মোড়ানো দেখা যায়।
আলুপট্টি থেকে সাহেব বাজারমুখী রাস্তায় অটোরিকশার ভিড় শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু তখন পর্যন্ত কোনো যাত্রীবাহী রিকশা নেই। শুধু দোকানের মালপত্র নিয়ে দু-একটি রিকশা যেতে দেখা যায়। কুমারপাড়ার মোড়ে আওয়ামী লীগের গুঁড়িয়ে দেওয়া দলীয় কার্যালয়ের সঙ্গে এক যুবক পুরোনো গরম কাপড়ের দোকান মেলার চেষ্টা করছেন। এর সামনের গালিটা একেবারে ফাঁকা। দোকানপাট বন্ধ। রাস্তাও ফাঁকা।
একটু পশ্চিম পাশে চাঁপাই হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট। সেখানে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভিড় লেগে থাকে। সকাল প্রায় সাড়ে ৯টাতেও দোকানের চুলাগুলোয় আগুন দেওয়া হয়নি। কোনো কারিগরও নেই চুলার পাশে। শুধু দোকান খুলে রাখা হয়েছে।সেখান থেকে সাহেব বাজারমুখী রাস্তাটা একেবারে অচেনা। একটি মাত্র রিকশা যাচ্ছে। পাশে এক লোক দাঁড়িয়ে আছে। সেখান থেকে সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টকে ঘন কুয়াশায় মোড়ানো অবস্থায় দেখা যায়।
জিরো পয়েন্টে কয়েকটি রিকশা এসে দাঁড়িয়েছে। যাত্রীর জন্য বসে থেকে শীতে কাঁপছেন চালকেরা, কিন্তু কোনো যাত্রী নেই। তবে ফুলের দোকানগুলো খোলা হয়েছে। রাস্তার দক্ষিণ পাশে এক ফুলের দোকানি কর্মচারীর সঙ্গে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলেন, ‘সকালে একবার উঠেছি, তখন কুয়াশা সঙ্গে বাতাস। মনে হলো, জান বারিয়ে গেল। আবার শুইয়েছি।’
ঘড়িতে সময় ৯টা ৩১ মিনিট। জিরো পয়েন্টের পাশে বাবুর্চি বিরিয়ানিতে এক বালক লাল কাপড় দিয়ে রান্নার হাঁড়িটা মুছতে গিয়ে উদাস হয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
তবে এরই মধ্যে সাহেব বাজারের কাঁচাবাজারের সামনে রুনু নামের একজন ডাব বিক্রেতা কয়েকটি ডাব নিয়ে বসেছেন। তবে এরই মধ্যে ভিক্ষুকেরা ভুলে যাননি, আজ বৃহস্পতিবার। রাজশাহীতে এদিন ভিক্ষুকেরা দল ধরে এ বাড়ি থেকে আরেক বাড়ি সাহায্যের জন্য যান। আজও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্ধ স্বামীকে নিয়ে তাঁর স্ত্রী সাতসকালে বাসায় বাসায় যাচ্ছেন।