উল্লাসকর দত্তের শতবর্ষের বাড়িটি সংরক্ষণের উদ্যোগ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের শতবর্ষের বাড়িটি পুরাকীর্তি হিসেবে সংক্ষরণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের প্রত্নসম্পদ সংরক্ষণ শাখার মহাপরিচালক চন্দর কুমার দে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসককে চিঠি দেন। জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো ওই চিঠি সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, এর আগে ৭ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসক প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কাছে একটি চিঠি পাঠান। ওই চিঠিতে বলা হয়, সরাইল উপজেলার অন্তর্গত কালীকচ্ছ গ্রামে বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের জীবন ও কর্মের সাক্ষী হিসেবে তাঁর বসতভিটার ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। পুরাকীর্তি আইন ১৯৬৮ অনুযায়ী সংরক্ষণ করা যায়, এমন প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। কোনো পুরাকীর্তি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক স্থানীয় প্রশাসনের নির্ধারিত ছকে সুস্পষ্ট মতামত এবং ভূমি তফসিল থাকা প্রয়োজন। ওই বসতভিটা সংরক্ষিত ঘোষণার গেজেট জারি হওয়ার পর বাজেট পাওয়া সাপেক্ষে ভূমি অধিগ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হবে।
গত ২৬ নভেম্বর দুপুর ১২টার দিকে বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের বাড়িটি সংরক্ষণের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সামনে ইতিহাস, ঐতিহ্য ও প্রত্নসম্পদ সংরক্ষণ পরিষদের উদ্যোগে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। মানববন্ধনে সরাইলের কালীকচ্ছ গ্রামের দত্তপাড়ায় উল্লাসকর দত্তের বসতভিটাটি প্রত্নসম্পদ হিসেবে সুরক্ষা, সংরক্ষণ ও অধিগ্রহণের দাবি জানানো হয়।
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের অবদান রয়েছে। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গর্ব। বাড়িটি সংরক্ষণের জন্য জেলা প্রশাসন সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের চিঠি পেয়েছি। নির্দেশনা অনুসারে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জানা গেছে, ১৮৮৫ সালের ১৬ এপ্রিল কালীকচ্ছের দত্তপাড়ার বাড়িতে বিপ্লবী উল্লাসকরের জন্ম। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে তাঁর অনন্য ভূমিকা ছিল। পরে তিনি ভারতের শিলচরে যান এবং সেখানেই ১৯৬৫ সালের ১৭ মে মৃত্যুবরণ করেন। সরাইলে উল্লাসকর দত্তের তিন কক্ষের পুরোনো ওই ভবনের বয়স ১৫০–২০০ বছর। ভেতরের কক্ষে এখনো রয়েছে নান্দনিক কারুকার্য। পুরো ভবনের দৈর্ঘ্য ৭০ ফুট ও প্রস্থ প্রায় ২০ ফুট।
১৯৮৯ সালে উল্লাসকর দত্তের ছোট ভাইয়ের ছেলে শিবেন্দ্র কুমার দত্তের কাছ থেকে ১ একর ৮০ শতক জায়গার বাড়িটি কিনেন কালীকচ্ছ ইউনিয়নের সূর্যকান্দী গ্রামের প্রয়াত হাফিজুর রহমান ও তাঁর ভাই সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আহমেদুর রহমান। এর মধ্যে হাজিজুর রহমানের ভাগে পড়েছে ৮০ শতক। এর মধ্যে রয়েছে বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের জন্মভিটা। হাফিজুর রহমানের ছয় ছেলে ৮০ শতক বাড়িটি ভাগ করে নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে এক ছেলে প্রবাসী এখলাছুর রহমান (৩৫) উল্লাসকর দত্তের মূল বাড়িটি আড়াল করে বহুতল ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন।
জানা গেছে, ১৬, ১৭ ও ২৫ নভেম্বর সরাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কার্যালয় ও উল্লাসকর দত্তের বাড়ির আঙিনায় বাড়িটি রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন করে বিভিন্ন সংগঠন। ১৭ নভেম্বর দুপুরে সরাইল উপজেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারহানা নাসরিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।