‘বুকের ধন ছাড়া আমি কী নিয়ে বাঁচমো’
শুক্রবার ছিল পয়লা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস ও পবিত্র শবে বরাত। কলেজ বন্ধ থাকায় বন্ধুদের সঙ্গে বগুড়ার ধুনটে যমুনা নদীর বাঁধে ঘুরতে গিয়ে কলেজছাত্র জুনায়েদ রহমান (১৮)। শবে বরাতের কারণে সন্ধ্যার আগেই বাড়িতে ফিরতে বলেছিলেন মা। ছেলের বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় ছিলেন। একদিন পর ছেলে ফিরেছেন, তবে লাশ হয়ে।
জুনায়েদ বগুড়ার শেরপুর পৌর শহরের দাঁড়কিপাড়া মহল্লার জাহিদুর রহমানের ছেলে এবং বগুড়ার পল্লী উন্নয়ন একাডেমি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের (আরডিএ) উচ্চমাধ্যমিক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। জুনায়েদের বাবা জাহিদুর রহমান শেরপুরের ফুলতলা দাখিল মাদ্রাসার এবং মা শামীমা আক্তার শেরপুর পৌরসভা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক। এ দম্পতির একমাত্র ছেলে ছিলেন জুনায়েদ। তাঁদের সপ্তম শ্রেণিপড়ুয়া একটি মেয়ে আছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার বিকেলে জুনায়েদসহ চার বন্ধু ধুনটের বানিয়াজান বাঁধে ঘুরতে যান। পরে তাঁরা নদীতে গোসল করতে নেমে তীব্র স্রোতে নদীতে তলিয়ে যান। তখন স্থানীয় ডুবুরি আবদুর রাজ্জাক তিনজনকে জীবিত উদ্ধার করলেও জুনায়েদ নিখোঁজ ছিলেন। পরে আজ রাজশাহী থেকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল এসেও ব্যর্থ হয়। পরে ডুবুরি আবদুর রাজ্জাক তল্লাশি চালিয়ে জুনায়েদের লাশ উদ্ধার করেন।
শনিবার বিকেলে জুনায়েদের লাশ বাড়িতে নেওয়ার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর মা শামীমা আক্তার। প্রতিবেশীরা তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়া চেষ্টা করেন। জুনায়েদের লাশ দেখতে ভিড় করেন উৎসুক লোকজন। বিলাপ করতে করতে শামীমা বলেন, ‘বাবাটা সন্ধ্যার আগেই বাড়িতে ফিরে আসার কথা ছিল। ফিরল এক দিন পর লাশ হয়ে। বুকের ধন ছাড়া আমি এখন কী নিয়ে বাঁচমো।’
জুনায়েদের মামা অহেদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, জুনায়েদ পরিবারের একমাত্র ছেলেসন্তান ছিল। উচ্চশিক্ষিত হয়ে মা–বাবার স্বপ্ন পূরণ করবে—এমন স্বপ্ন ছিল পরিবারের। জুনায়েদের অকালমৃত্যুতে পরিবারের সব স্বপ্ন ভেঙে গেল।
শেরপুরের বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ইয়াসিন আলী বলেন, জুলাই বিপ্লবে সক্রিয় ছিলেন জুনায়েদ রহমান। তাঁর অকাল মৃত্যুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা শোকে স্তব্ধ।
ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন বলেন, যমুনা নদীর বানিয়াজান বাঁধে বেড়াতে এসে চার বন্ধু গোসলে নেমে স্রোতের তোড়ে ডুবে যায়। পরে বানিয়াজান গ্রামের ডুবুরি আবদুর রাজ্জাক একে একে তিনজনকে জীবিত উদ্ধার করলেও জুনায়েদ নামের ওই ছাত্রকে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে আজ রাজশাহী থেকে ডুবুরি দল আনা হয়; কিন্তু তাঁরাও ব্যর্থ হন। পরে ডুবুরি আবদুর রাজ্জাক আনলে তিনি ওই ছাত্রের লাশ উদ্ধার করেন।
ধুনট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মনজুর মোরশেদ প্রথম আলোকে বলেন, যমুনায় চার বন্ধু গোসল করতে নেমে তীব্র স্রোতে নিখোঁজ হন। তিনজনকে গতকালই জীবিত উদ্ধার করা হয়। এক দিন পর আজ নদীতে তল্লাশি চালিয়ে জুনায়েদের লাশ উদ্ধার করা হয়।