ঈদের ছুটিতে ভৈরবে মেঘনার ত্রি-সেতুর পাড়ে দর্শনার্থীদের ভিড়
ঢাকা থেকে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঈদ করতে গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলা সদরে এসেছিলেন উন্নয়নকর্মী কাজী হোসেন। ঈদের দিন পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসেন মেঘনা নদীর ওপর নির্মিত ত্রি-সেতুর ভৈরব প্রান্তে। মেঘনা পাড়ের অপরূপ দৃশ্য দেখে কাজী হোসেন ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা মুগ্ধ।
কাজী হোসেন বলেন, ‘ঢাকায় প্রচণ্ড গরম আর যানজট। ঢাকায় মন চাইলে প্রাকৃতিক কোনো পরিবেশে ঘুরে আসার সুযোগ পাওয়া যায় না। তবে মেঘনাপাড়ে এসে শীতল হাওয়ার স্পর্শ পেলাম। মনে হচ্ছে, ঘুরতে এসে সর্বোচ্চ পারিবারিক ঈদ বিনোদন হয়ে গেল।’
গতকাল শনিবার বিকেলে ঈদের প্রথম দিনে কাজী হোসেনের মতো অন্তত ২০ হাজার মানুষ ত্রি-সেতুর ভৈরব প্রান্তে বেড়াতে আসেন। ঘুরতে আসা মানুষের মধ্যে বড় একটি অংশ ভৈরব লাগোয়া উপজেলা কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর, বাজিতপুর, কটিয়াদী, নরসিংদীর বেলাব, রায়পুরা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ ও সরাইল উপজেলার।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেঘনার ভৈরব মোহনা বেশ প্রবহমান। ভৈরব মোহনায় এসে ব্রহ্মপুত্র নদ যুক্ত হয়েছে। ভৈরব ও আশুগঞ্জ প্রান্তকে যুক্ত করতে ব্রিটিশ আমলে শহীদ হাবিলদার আবদুল হালিম রেলওয়ে সেতু নামের একটি সেতু নির্মিত হয়। এরপর ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের গুরুত্ব অনুধাবন করে সরকার ২০০২ সালে পাশে নির্মাণ করে সড়ক সেতু। সেতুটির দাপ্তরিক নাম সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতু। সেতুটি উদ্বোধন হওয়ার পর মেঘনাপাড় নিয়ে দর্শনার্থীদের আগ্রহ বাড়ে। এর মধ্যে ২০১৭ সালে উদ্বোধন করা হয় রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান রেলওয়ে সেতু নামে আরও একটি সেতু।
তিনটি সেতু পাশাপাশি হওয়ার কারণে স্থানটি মানুষের কাছে ত্রি-সেতু হিসেবে পরিচিত। সেতু তিনটি ঘিরে মেঘনাপাড়ের আকর্ষণ আরও বেড়ে গেছে। বিশেষ করে ঈদ ঘিরে স্থানটি বিভিন্ন বয়সের দর্শনার্থীদের উপস্থিতিতে ভরে ওঠে। ঈদের সময় প্রায় এক সপ্তাহ পর্যন্ত এই স্থানে উৎসবের আমেজ থাকে। এ ছাড়া পয়লা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস ও পয়লা বৈশাখের দিনগুলোতেও ত্রি-সেতুর পাড় উৎসবের মাত্রা পায়।
গতকাল বিকেলে ঘুরে দেখা গেছে, লোকসমাগম ঘিরে ফুচকা, চটপটি, চা-কফির দোকান বসেছে। এর পাশাপাশি ছোটদের জন্য আছে খেলনার দোকান। মেঘনার পানিতে ভেসে শীতল বাতাসে ঘুরে বেড়ানোর জন্য আছে নৌকা ও স্পিডবোটের আয়োজন।
রোকসানা হামিদ বেলাব উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের বাসিন্দা। চাকরি সূত্রে থাকেন কুমিল্লা। স্বামী-সন্তানকে নিয়ে স্পিডবোট করে মেঘনা নদী ঘুরে বেড়ান। স্পিডবোট থেকে নেমে তিনি বলেন, ‘যখন নদীতে স্পিডবোট নিয়ে ঘুরছিলাম তখন মনে হয়নি, এটা আমাদের পাশের কোনো স্থান। চোখের সামনে আশুগঞ্জের বিদ্যুৎকেন্দ্র, খাদ্যশস্য সাইলো, সার কারখানাসহ আরও অনেক নান্দনিক স্থাপনা দেখতে পেলাম। সব মিলিয়ে মনে হয়, দেশের বাইরে কোথাও ভ্রমণ করছি।’
ভৈরব পৌর শহরের কমলপুর এলাকার সাদিয়া হাবিব নামের এক তরুণী বলেন, স্বচ্ছ পানির নদী মেঘনা। বাড়ির কাছে এত বড় নদী পাওয়া ভাগ্যের। কিন্তু দুর্ভাগ্য, কেউ নদীর যত্ন নিচ্ছে না। মানুষ বিনোদন করতে বেড়াতে গিয়ে বিভিন্নভাবে নদীর সর্বনাশ করে দিচ্ছে। প্রতিদিন অসংখ্য চিপসের প্যাকেটসহ প্লাস্টিক নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে নদীটি বেহাল হয়ে যাচ্ছে।