‘রাজী ফখরুলের থাবা থেকে বাঁচার ক্ষমতা কারও নাই’

দেবীদ্বারের ভানী ইউনিয়ন যুবলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা লিটন সরকার। মঙ্গলবার বিকেলে
ছবি: ভিডিও থেকে সংগৃহীত

‘আবু কালাম বিষফোড়া হইলেও আমরার উপকার করে দিছে। এখানে আছে রাজী মোহাম্মদ ফখরুল (সংসদ সদস্য)। বাঘের থাবা থেকে বাঁচার ক্ষমতা আছে, কিন্তু রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের থাবা থেকে বাঁচার ক্ষমতা কারও নেই। রাজী মোহাম্মদ তো পরের বিষয়, তুই আগে আগে আমরার থাবা থেকে বাঁচ! আমি ওপেন চ্যালেঞ্জ দিলাম। আরে কমপিটিশন তো দূরের কথা, জামানত থাকত না।’

কুমিল্লা-৪ (দেবীদ্বার) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আবুল কালাম আজাদকে হুমকি দিয়ে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে এভাবেই বক্তব্য দিয়েছেন উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক লিটন সরকার। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে দেবীদ্বার উপজেলার ভানী ইউনিয়ন যুবলীগের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ বক্তব্য দেন। তাঁর বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম আজাদ কুমিল্লা-৪ (দেবীদ্বার) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু মনোনয়ন পাননি। সেখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল। এ ছাড়া আরও ১১ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে লিটন সরকার বলেন, ‘আমার কেন্দ্র আর আবু কালামের কেন্দ্র এক। তোর ক্ষমতা থাকলে, আমি ওপেন, তোর ইউনিয়নের মধ্যে তুই আমার সামনে দাঁড়া।’ তিনি বলেন, ‘আমি আজ আপনাদের সামনে বলতে চাই, তুই কত বড় সেয়ানা হইছত, কত বড় গুন্ডা হইছত! আচ্ছা আবু কালাম তুই কবে ছাত্রলীগ করছত, কবে যুবলীগ করছত, কবে আওয়ামী লীগ করছত? আমরার সম্মুখে তুই কেন নৌকার বিরুদ্ধে নির্বাচন করতাছত? আরে মূর্খ তুই এটা বুজছ না, কোনটা ডামি প্রার্থী, কোনটা বিদ্রোহী প্রার্থী, কোনটা স্বতন্ত্র প্রার্থী।’

লিটন সরকার
ছবি: সংগৃহীত

লিটন সরকার আরও বলেন, ‘স্বতন্ত্র অ্যান্ড বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে বিশাল ডিফারেন্স, আকাশ-পাতাল ডিফারেন্স। তুই তো বিদ্রোহী প্রার্থী, নৌকার বিরুদ্ধে নির্বাচন করছত আর মূর্খের মতো ব্যাখ্যা দিস। আমি তোর বাড়িতে গিয়া তরে ধরমু। তুমি নির্বাচন করো ভালো কথা, শ্যাষ। টাকা টাকা করতাছ। রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের পৈতৃক যা সম্পত্তি আছে, যে অ্যাসেট আছে, এডার কোনাডা কেনার মতো ক্ষমতা নাই। তুমি ক্যান্ডিডেট হইছত, এডা তো ছাগলের ৮ নম্বর বাচ্চা।’

আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ওই বক্তব্যের পর তাঁর একজন কর্মীকে বেধড়ক পিটিয়েছে লিটন সরকারের সন্ত্রাসী বাহিনী। এ ছাড়া গতকাল রাতে তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনী একজনকে কুপিয়েছে, তিনি এখন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নির্বাচন কমিশন গ্রহণযোগ্য, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেবেন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, প্রশাসন সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। জনগণ ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ পেলে আমাকে ভোট দিয়ে জয়ী করবে।’

জানতে চাইলে লিটন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বক্তব্য সঠিক। যা দিয়েছি, তা-ই ঠিক। আজাদ আমার লোকদের মারধর করেছে। ওই কারণে এমন বক্তব্য দিছি।’ মারধরের বিষয়ে আবুল কালাম আজাদ বলেন, লিটনের অভিযোগ অগ্রহণযোগ্য। প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে তিনি বক্তব্য দিয়েছেন।

স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার বক্তব্যের বিষয়ে জানতে সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।

রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান বুধবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া সমীচীন নয়। এ ব্যাপারে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।