অবৈধভাবে বিক্রি হচ্ছে তেল

দুই মাস আগে তেল বিক্রির ওই অস্থায়ী পাম্প বসানো হয়েছে। সেখানে জ্বালানি তেল প্লাস্টিকের পানির ট্যাংকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে মজুত রাখা হচ্ছে। 

পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়কের পাশে পেট্টলপাম্পের যন্ত্রপাতি বসিয়ে অবৈধভাবে জ্বালানি তেল বিক্রি করা হচ্ছে। গত মঙ্গলবার জাজিরার নাওডোবা এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

পদ্মা সেতুর আশপাশে ও এক্সপ্রেসওয়েতে এখনো কোনো পেট্রলপাম্পের অনুমোদন দেওয়া হয়নি। তবে এরই মধ্যে পদ্মা সেতুর টোল প্লাজার এক কিলোমিটারের মধ্যে দুটি জ্বালানি তেল বিক্রয়কেন্দ্র গড়ে উঠেছে, যাতে পেট্রলপাম্পের যন্ত্রপাতি বসানো হয়েছে। এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠার জন্য নাওডোবা এলাকায় যে সার্ভিস সড়ক রয়েছে, সেখানে দুই মাস আগে অনুমোদনহীনভাবে তেল বিক্রির ওই অস্থায়ী পাম্প বসানো হয়েছে। সেখানে জ্বালানি তেল প্লাস্টিকের পানির ট্যাংকে মজুত রাখা হচ্ছে। পদ্মা সেতুর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার আশপাশে এভাবে জ্বালানি তেলের বিক্রয়কেন্দ্র খোলায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন কার্যক্রম কীভাবে চলছে, তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করছেন অনেকেই।

স্থানীয় লোকজন জানান, স্থানীয় যানবাহন পদ্মা সেতু ও এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠার জন্য জাজিরা প্রান্তের টোল প্লাজা থেকে শিবচরের পাচ্চর পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে সার্ভিস সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। শরীয়তপুর, জাজিরা ও শিবচরের মানুষদের যানবাহন নিয়ে সেতুতে যাওয়ার জন্য নাওডোবায় একটি সার্ভিস সড়ক নির্মাণ করা হয়। ওই সংযোগ সড়কের সঙ্গে দুই মাস আগে পেট্রলপাম্পের আদলে দুটি জ্বালানি তেলের বিক্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। একটির সামনে সাইনবোর্ডে লেখা ‘মেসার্স আবুল হোসেন মল্লিক অ্যান্ড সন্স’, যার মালিক শিবচরের কাঁঠালবাড়ী এলাকার জয়নাল আবেদীন। আরকেটির সামনে লেখা ‘মেসার্স সাঈদ এন্টারপ্রাইজ’, যার মালিক একই এলাকার সাঈদুর রহমান।

গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, টিনের একচালা ঘরে দুটি করে পেট্রলপাম্পের যন্ত্র বসানো হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জেনারেটরের সাহায্যে ওই যন্ত্র চালানো হয়। টিনের ঘরের এক কোণে পাঁচ হাজার, দুই হাজার ও এক হাজার লিটার ধারণক্ষমতার প্লাস্টিকের পানির ট্যাংকে পেট্রল, অকটেন ও ডিজেল মজুত রাখা হয়েছে। সেখান থেকে প্লাস্টিকের পাইপের মাধ্যমে তেল সরবরাহের যন্ত্রে তেল আনা হচ্ছে। তারপর আরেকটি পাইপের সাহায্যে তা যানবাহনে সরবরাহ করা হচ্ছে।

বরিশাল, বরগুনা, খুলনা ও সাতক্ষীরা থেকে ঢাকায় চলাচলকারী বিভিন্ন পরিবহনের বাস, বিভিন্ন পথে চলা ট্রাক, স্থানীয়ভাবে চলাচলকারী মোটরসাইকেলে পেট্রলপাম্পের যন্ত্রের সাহায্যে তেল বিক্রি করা হচ্ছে। ওই দুটি বিক্রয়কেন্দ্র পাশাপাশি ২০০ মিটার দূরত্বের মধ্যে বসানো হয়েছে। সেখান থেকে পদ্মা সেতুর টোল প্লাজার দূরত্ব ১ কিলোমিটার। আর আশপাশে রয়েছে শেখ রাসেল সেনানিবাস, সার্ভিস এরিয়া-২, পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।

এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থানে এভাবে টিনের ঘরে প্লাস্টিকের ট্যাংকে জ্বালানি তেল মজুত রেখে পেট্রলপাম্পের আদলে পরিচালনা করা ঝুঁকিপূর্ণ বলছেন যাত্রী, পরিবহনচালক, মালিক ও স্থানীয় বাসিন্দারা।

বরিশাল–ঢাকা রুটে চলাচলকারী বরিশাল এক্সপ্রেস বাসের চালক সুজন হাওলাদার বলেন, ‘এভাবে অস্থায়ীভাবে পেট্রলপাম্পের যন্ত্র বসিয়ে তেল বিক্রি করা ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে প্লাস্টিকের ট্যাংকে পেট্রল মজুত করে রাখা হয়, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা এখানে গাড়ি থামাতে চাই না। কিন্তু গাড়ির কোম্পানির নির্দেশ থাকায় আমরা তেল নিই।’

একটি তেল বিক্রয়কেন্দ্রের ম্যানেজার জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিদিন ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার লিটার তেল আমাদের কেন্দ্রে বিক্রি করা হয়। মেঘনা পেট্রোলিয়াম থেকে তেল আনা হয়।’

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের এক প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এক্সপ্রেসওয়েতে এখনো কোনো পেট্রলপাম্পের অনুমোদন দেওয়া হয়নি। নাওডোবায় পেট্রলপাম্পের আদলে যেভাবে জ্বালানি তেল বিক্রি করা হচ্ছে, তা ঝুঁকিপূর্ণ।

মেসার্স সাঈদ এন্টারপ্রাইজ নামের তেল বিক্রয়কেন্দ্রের মালিক সাঈদুর রহমান বলেন, ‘পেট্রলপাম্প স্থাপনের অনুমতি এখনো পাইনি। তবে এখানে তেল বিক্রি করার মৌখিক অনুমতি স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে।’

মেসার্স আবুল হোসেন মল্লিক অ্যান্ড সন্স নামের প্রতিষ্ঠানটির মালিক জয়নাল আবেদীনের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

জানতে চাইলে পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা ও সংযোগ সড়কের (সংরক্ষণ ও সার্ভিস) নির্বাহী প্রকৌশলী লক্ষ্মীকান্ত বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, পদ্মা সেতুর আশপাশে অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। তার আশপাশে কোনো পেট্রলপাম্প স্থাপনের সুযোগ নেই। নাওডোবায় সার্ভিস সড়কের পাশে জ্বালানি তেল বিক্রির তথ্য জানা নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানতে চাইলে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান বলেন, বিস্ফোরক পরিদর্শক ও পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের লাইসেন্স ছাড়া জ্বালানি তেল বিক্রি করা যাবে না। আর জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার আশপাশে তো জ্বালানি তেল বিক্রির সুযোগই নেই। যাঁরা বিক্রি করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।