কারাগারের সামনে মাদক কেনাবেচা, কারারক্ষীর বিরুদ্ধে মামলা

মাদক
প্রতীকী ছবি

রাজবাড়ী জেলা কারাগারের প্রধান ফটকে মাদক কেনাবেচার অভিযোগে এক কারারক্ষীসহ দুজনের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা করা হয়েছে। জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক বাদী হয়ে আজ বৃহস্পতিবার সদর থানায় মামলাটি করেন।

ওই কারারক্ষীর নাম শামীম মিয়া (২২)। তাঁর বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার খায়েরপাড়া গ্রামে। ওই মামলার অপর আসামি আশরাফুজ্জামান ওরফে আরিফ (৩৫) রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার বাবুপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। ঘটনার পর থেকে পলাতক থাকায় মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগের বিষয়ে চেষ্টা করেও শামীম মিয়ার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

মামলার এজাহার ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বুধবার সন্ধ্যায় রাজবাড়ী জেলা কারাগারের প্রধান ফটকে মাদক কেনাবেচার খবর পেয়ে অভিযান চালায় (ডিবি) পুলিশ। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক বিক্রেতারা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে ডিবি পুলিশ আশরাফুজ্জামানকে আটক করে। তবে শামীম তাঁদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে পালিয়ে যান। এ সময় আশরাফুজ্জামানের কাছ থেকে ৩২০টি ইয়াবা বড়ি জব্দ করা হয়, যার বাজারমূল্য ১ লাখ ২ হাজার টাকা।

ডিবির রাজবাড়ী জেলা কার্যালয় সূত্র জানায়, ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার আশরাফুজ্জামানকে বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজবাড়ী ১ নম্বর আমলি আদালতে পাঠানো হয়। আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কায়ছুন নাহার সুরমা আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা কারাগার এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, কারাগারে দীর্ঘদিন ধরে মাদক বিক্রি করা হয়। সেখানে তুলনামূলকভাবে বেশি দাম পাওয়া যায়। মাদক বিক্রির সঙ্গে কারাগারের অনেকেই জড়িত রয়েছে।

এ বিষয়ে রাজবাড়ী জেলা কারাগারের জেলার হুমায়ুন কবীর খান বলেন, ‘শামীম মিয়া প্রায় ১৫ মাস আগে রাজবাড়ী জেলা কারাগারে যোগ দেন। আমরা কারাগারের ভেতর সবকিছু চেক করে ঢোকাই। তবে অসাবধানতাবশত কিছু হয়ে থাকতে পারে। কারণ, সব পেশাতেই কিছু খারাপ মানুষ থাকে। শামীমের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। আমরা আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এ ঘটনার পর থেকে শামীম অনুপস্থিত রয়েছেন। অনুমতি ছাড়া কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে আমরা রিপোর্ট করব।’

তবে এ ঘটনায় গ্রেপ্তার আশরাফুজ্জামান গতকাল কারাগারের প্রধান ফটকে থাকা অবস্থায় প্রথম আলোকে বলেছিলেন, তিনি প্রায় সাত মাস কারাগারে ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে মামলা করা হয়েছিল। তিনি তাঁর এক কারারক্ষী আত্মীয়ের (দাউদ) সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। এ সময় তাঁকে ইয়াবা বিক্রির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত ইয়াবা বিক্রেতা পালিয়ে গেছেন।

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক বলেন, আশরাফুজ্জামান কারাগারে থাকার সময় কারারক্ষী শামীমের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে। আশরাফুজ্জামানের বিরুদ্ধে অস্ত্রসহ বিভিন্ন অভিযোগে পাঁচটি মামলা রয়েছে। কয়েক মাস আগে তিনি জেল থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে বের হন।

রাজবাড়ী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন বলেন, মামলার ১ নম্বর আসামিকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। অপরজনকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।

এ বিষয়ে ডিবির রাজবাড়ী জেলা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রাণবন্ধু চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘আমাদের কাছে মাদক কেনাবেচার তথ্য ছিল। আর সিন্ডিকেট ছাড়া কেউ একসঙ্গে এত ইয়াবা বিক্রি করার কথা নয়। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে আমরা অভিযান পরিচালনা করি। অভিযানে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত অপর কারারক্ষী পালিয়ে গেছেন।’