এজেন্টকে মারধর, কেন্দ্রের বাইরে ছাত্রলীগের জটলা, ‘পটকা’ বিস্ফোরণ

ভোটকেন্দ্রের বাইরে পটকা বিস্ফোরণের ঘটনায় আতঙ্ক সৃষ্টি হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে প্রশাসনের তৎপরতা। আজ বুধবার নারায়ণগঞ্জ বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে হাজী আবদুল মালেক উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনেছবি: প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর এজেন্টকে কেন্দ্র থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে পুলিশের সামনে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অপর একটি কেন্দ্রের সামনে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের অবস্থানের সময় ‘পটকা’ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে কেন্দ্রটিতে ভোটার উপস্থিতি কমে গেছে।

মারধরের শিকার ওই এজেন্টের নাম মো. ফারুক। তিনি জেলা জাতীয় পার্টির সহসভাপতি মাকসুদ হোসেনের (আনারস) পোলিং এজেন্ট।

মাকসুদ হোসেনের প্রধান নির্বাচনী সমন্বয়ক ইকবাল হোসেন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেলা ১১টার দিকে মদনপুর ইউনিয়নের ৩৩ নম্বর কেওডালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মারধরের ওই ঘটনা ঘটে। ওই এজেন্ট বুথে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তখন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও দোয়াত-কলম প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী এম এ রশিদের সমর্থক আলী নূর ওই এজেন্টকে প্রথমে কেন্দ্র থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। তিনি তাতে রাজি না হলে তাঁকে টেনেহিঁচড়ে বুথ থেকে বের করে মারধর করা হয়। এ সময় পুলিশ সদস্যরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। পুলিশের সামনেই তাঁকে বেধড়ক পেটানো হয়। পরে তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আবার বুথে পাঠানো হয়েছে।’

অবশ্য মারধরের অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী এম এ রশিদ। ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. সাইফুজ্জামান বলেছেন, বুথ থেকে টেনে বের করা হয়নি। ফারুক নামের ওই এজেন্ট বুথ থেকে বাইরে বের হয়েছিলেন। তখন প্রতিপক্ষের লোকজনের সঙ্গে তাঁর হাতাহাতি হয়। পরে সব ঠিকঠাক হয়েছে।

এদিকে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কুশিয়ারা হাজী আবদুল মালেক উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অবস্থানের সময় পটকা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। পরে পুলিশ এসে তাঁদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে কেন্দ্রটির পেছন দিক থেকে কেন্দ্রের ভেতর বোমাসদৃশ বস্তু ছুড়ে মারা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কেন্দ্রটির বাইরে ও ভেতরে অন্তত ৮টি বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে। বিস্ফোরণের পর কেন্দ্রটিতে ভোটার উপস্থিতি কমে যায়। পরে কেন্দ্রটিতে অতিরিক্ত পুলিশ ও বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়।

মদনপুর ইউনিয়নের ওই কেন্দ্রে সরেজমিন দেখা যায়, বেলা ১১টার দিকে দোয়াত-কলম প্রতীকের প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ রশিদ কেন্দ্রটি পরিদর্শনে আসেন। এ সময় তাঁর সমর্থকেরা কেন্দ্রের বাইরে দোয়াত-কলমের পক্ষে স্লোগান দেন। তিনি কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে চলে গেলে মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসনাত রহমান ওরফে বিন্দু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি জুয়েলসহ শতাধিক নেতা-কর্মী কেন্দ্রের বাইরে অবস্থান নেন। এ সময় তাঁরা দোয়াত-কলমের পক্ষে স্লোগান দেন। প্রায় আধঘণ্টা অবস্থানের পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কেন্দ্রের বাইরে একটি পটকা বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। এ সময় কেন্দ্রের সামনে থাকা ভোটার ও লোকজন আতঙ্কিত হয়ে ছোটাছুটি শুরু করেন। ঘটনার অন্তত দুজন প্রত্যক্ষদর্শীর অভিযোগ, ছাত্রলীগের জটলা থেকে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে।

এ বিষয়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হাসনাত রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথম বিস্ফোরণের সময় আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম। পরে প্রশাসনের অনুরোধে আমরা চলে এসেছি। আমরা কোনো বিস্ফোরণ ঘটাইনি। আমরা মনে করছি, চিংড়ি প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আতাউর রহমানের লোকজন নির্বাচনকে বিতর্কিত করতে নিজেরাই ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।’


এই নির্বাচনে চিংড়ি প্রতীকের প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি (বহিষ্কৃত) আতাউর রহমান ওরফে মুকুলের অভিযোগ, বিদ্যালয়টিতে তিনটি কেন্দ্রে ৭ হাজার ২ জন ভোটার রয়েছেন। কেন্দ্রটি তাঁর বাড়ির পাশে হওয়ায় সেখানে তাঁর সমর্থিত ভোটারই বেশি। দোয়াত-কলম প্রতীকের প্রার্থীর লোকজন তাঁর ভোটারদের ভয় দেখাতে এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন।

এদিকে বেলা সাড়ে ১১টায় প্রথম বিস্ফোরণের পর নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রসিকিউশন) আবদুল্লাহ আল মাসুদ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন। বিস্ফোরণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কেউ বলছে পটকা ফুটিয়েছে, আবার একজন বয়স্ক লোক বললেন, টায়ার বিস্ফোরণ হয়েছে। একেকজন একেক কথা বলছেন। আমরা কেন্দ্রের সামনে অবস্থান নেওয়া লোকজনকে অনুরোধ করার পর তাঁরা সেখান থেকে চলে গেছেন।’

এ উপজেলায় বর্তমান চেয়ারম্যান বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ রশিদ (দোয়াত-কলম), সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মহানগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আতাউর রহমান ওরফে মুকুল (চিংড়ি), মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান জেলা জাতীয় পার্টির সহসভাপতি মাকসুদু হোসেন (আনারস) এবং তাঁর ছেলে মাহমুদুল হাসান (হেলিকপ্টার) নির্বাচন করছেন।