মধুপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর দুই নারী প্রার্থী

টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন গারো সম্প্রদায়ের যষ্ঠিনা নকরেক ও সন্ধ্যা সিমসাং।ছবি: সংগৃহীত

টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোট ১২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁদের মধ্যে নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর দুজন প্রার্থী। তাঁরা গারো সম্প্রদায়ের। ফলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী-অধ্যুষিত এলাকায় নির্বাচন একটু বেশিই জমে উঠেছে। সেই সঙ্গে ভাগ হয়ে গেছেন ওই সব এলাকার ভোটাররা।

মধুপুর পৌরসভা ও ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মধুপুর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে ৮ মে। উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ৫৫ হাজার ২১৮ জন। তাঁদের মধ্যে প্রায় ২০ হাজার ভোটার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর।

ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী থেকে নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী দুজন হলেন বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান যষ্ঠিনা নকরেক ও সন্ধ্যা সিমসাং। দুজনেই মধুপুর গড় এলাকার বেরিবাইদ ইউনিয়নের বাসিন্দা। যষ্ঠিনা নকরেক এর আগে ২০০৯ সালে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। সন্ধ্যা সিমসাং ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মারা যাওয়া ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নেতা চলেশ রিসিলের স্ত্রী। তিনি প্রথমবারের মতো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

মধুপুরের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নেতারা জানান, মধুপুর গড় এলাকার অরোণখোলা, বেরিবাইদ, কুড়াগাছা, ফুলবাগচালা, শোলাকুড়া ও আউশনাড়া ইউনিয়নে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর বসবাস। তাঁদের মধ্য থেকে দুজন প্রার্থী হওয়ায় নির্বাচন জমে উঠেছে এসব এলাকায়। দুই প্রার্থীই নিজ জাতির ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা ও সমর্থনের জন্য যাচ্ছেন। তবে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভোট দুই ভাগে ভাগ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়েছেন নেতারা।

আবিমা কালচারাল ফোরামের সভাপতি অজয় এ মৃ বলেন, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মধ্য থেকে দুজন প্রার্থী হওয়ায় গারোদের ভোট ভাগ হয়ে যাচ্ছে, যা উভয় প্রার্থীর জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।

গতকাল রোববার সারা দিন সন্ধ্যা সিমসাং গড় এলাকার টেলিকি, সাধুরপাড়া, কাকড়াগুনি, জলাবাধা, পীরগাছা, দোখলা এলাকায় গণসংযোগ করেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে এবং পথসভা করে তিনি প্রজাপতি প্রতীকের পক্ষে ভোট চান। সন্ধ্যা সিমসাং বলেন, নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। তিনি মনে করেন, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মধ্য থেকে আরও একজন প্রার্থী হলেও তাতে তাঁর কোনো সমস্যা হবে না। তাঁদের গোষ্ঠীর বেশির ভাগ ভোট তিনিই পাবেন। এ ছাড়া বাঙালিদের ভোটের মধ্যেও তিনি ভালো করবেন।

অন্যদিকে যষ্ঠিনা নকরেক গতকাল চাপড়ি, দড়িহাতিল ও মধুপুর পৌর এলাকায় ফুটবল প্রতীকের পক্ষে গণসংযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা গারো জাতির মধ্য থেকে দুজন মাঠে আছি। ভোটে দাঁড়ানোর অধিকার সবারই আছে। আমি জনগণের কাছে যাচ্ছি। ভালো সাড়া পাচ্ছি। এর আগে দুইবার ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। এবারও জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।’

ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর দুজন ছাড়াও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে আরও দুজন প্রার্থী নির্বাচন করছেন। তাঁরা হচ্ছেন রুবি নিগার (হাঁস প্রতীক) ও মিনারা বেগম (পদ্মফুল প্রতীক)। এ ছাড়া চেয়ারম্যান পদে তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা হলেন বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছরোয়ার আলম খান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইয়াকুব আলী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মীর ফরহাদুল ইসলাম। এ ছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।