শিক্ষকদের দ্বন্দ্বে অচলাবস্থা

ঝালকাঠি জেলার মানচিত্র

ঝালকাঠি নার্সিং কলেজে শিক্ষকদের দ্বন্দ্বে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগে কলেজে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

গত ২৭ জানুয়ারি কলেজের ইনস্ট্রাক্টর হাসিনা তাজমিনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষ গীতা রানী সমদ্দার। এর পাল্টা হিসেবে হাসিনা তাজমিন ৩০ জানুয়ারি অধ্যক্ষের অনুগত কলেজের অফিস সহকারী কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানিসহ বেশ কিছু অভিযোগ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসক বরাবর করেছেন।

এরপরই শিক্ষকদের মধ্যে বিরোধ প্রকট আকার ধারণ করে। একে অপরের বিরুদ্ধে চলতে থাকে বিষোদ্গার। এ বিরোধে নার্সিং শিক্ষার্থীদের জড়ানোর অভিযোগও পাওয়া গেছে।

এ ব্যাপারে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিঝুম বলেন, নার্সিং কলেজের কোনো অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে তা তদন্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কলেজ সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে ঝালকাঠি নার্সিং কলেজটি ভবনটি হস্তান্তর করা হয়। এরপর ২০২১ সালে অধ্যক্ষ ও একজন কর্মচারী নিয়ে কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়।

কলেজ অধ্যক্ষ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করেন, চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি শিক্ষক হাসিনা তাজমিন যোগদান করার পরই কলেজের দৃশ্যপট পরিবর্তন হয়ে যায়। তিনি যোগদান করার পর থেকেই ছাত্রী ও শিক্ষকদের মধ্যে বিভেদ তৈরি শুরু করেন। হাসিনা তাজমিন বরগুনা নার্সিং ইনস্টিটিউটে কর্মরত থাকাকালে সেখানকার নার্সিং ইনস্ট্রাক্টর ইনচার্জের সঙ্গে ঝামেলা করে খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন। তখন তাঁকে নার্সিং মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ঝালকাঠি নার্সিং কলেজে বদলি করেন। ২০২৩ সালের নভেম্বরে এই ছাত্রীদের নাম ভাঙিয়ে ফেসবুকে কলেজের নামে বিভিন্ন রকম মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে ছাত্রীদের উসকে দেন। ছাত্রীদের ভুল বুঝিয়ে আন্দোলনমুখী করেন। শিক্ষক হাসিনা তাজমিন ক্লাসের কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা না করে ছাত্রীদের বিভিন্ন রকমের ভয়ভীতি দেখিয়ে এই কলেজে কর্মরত কর্মচারী ও অধ্যক্ষের নামে কুরুচিপূর্ণ, অশ্লীল কথা বলেছেন। ছাত্রীদের ফেল করার ভয় দেখিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছেন, যা ছাত্রীরা স্বীকার করেছেন। তাঁর সঙ্গে আরও কয়েকজন শিক্ষক জড়িত রয়েছেন। হাসিনা তাজমিনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলেও তা তিনি গ্রহণ না করে অধ্যক্ষকে জীবননাশের হুমকি দিয়েছেন।

‘আমার দৃষ্টিতে কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। তবু যদি কারও কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে আমাকে জানাবেন। বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
গীতা রানী সমাদ্দার, অধ্যক্ষ, ঝালকাঠি নার্সিং কলেজ

অপর দিকে হাসিনা তাজমিন নার্সিং কলেজের অফিস সহকারী কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগে উল্লেখ করেন, কামাল হোসেন ‘কামরুল হাসান’ নামের খণ্ডকালীন শিক্ষকের ভুয়া নাম ব্যবহার করে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। নার্সিং কলেজ মেয়েদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হলেও তিনি রাত যাপন করেন ক্যাম্পাসের মধ্যেই। নার্সিং কলেজ অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) গীতা রানী সমদ্দার, ইনস্ট্রাক্টর জাহানারা বেগম ও কামাল হোসেন যোগসাজশে এ দুর্নীতি করে যাচ্ছেন। অথচ কামরুল হাসান নামের আইসিটির কোনো খণ্ডকালীন শিক্ষক কলেজে পাঠদান তো দূরের কথা, কাগজ-কলমের বাইরে তাঁর কোনো অস্তিত্বই নেই। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের নিয়ন্ত্রণাধীন দুজন ইনস্ট্রাক্টর ও অফিস সহকারী কামাল হোসেনের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কলেজকে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলেছেন। কামাল হোসেন নার্সিং কলেজের মধ্যে বসবাস করে ছাত্রীদের যৌন হয়রানিসহ একের পর এক অপকর্ম করেই যাচ্ছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঝালকাঠি নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ গীতা রানী সমাদ্দার প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাসিনা তাজমিন উচ্ছৃঙ্খল। তিনি কারও কোনো কথা শোনেন না। কোনো নিয়মনীতির মধ্যে নেই। তাঁর বিষয়ে মহাপরিচালক মহোদয়কে জানানো হয়েছে। তাঁরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।’ অধ্যক্ষ আরও বলেন, ‘আমার দৃষ্টিতে কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। তবু যদি কারও কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে আমাকে জানাবেন। বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শিক্ষক হাসিনা তাজমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কলেজের বিভিন্ন অসংগতি নিয়ে কথা বলায় আমার ওপর কলেজ অধ্যক্ষ ও অফিস সহকারী ক্ষিপ্ত হয়েছেন। আমাকে ফাঁসাতে তাঁরা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দাখিল করেছেন।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ঝালকাঠি নার্সিং কলেজে শিক্ষকদের দ্বন্দ্বে আমাদের শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে।’