সরাইলে বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশের পর পদবঞ্চিতদের ঝাড়ুমিছিল, প্রতিহতের ঘোষণা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার প্রায় চার মাস পর ১০১ জনের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। দলের পদবঞ্চিত ও কাঙ্ক্ষিত পদ না পাওয়া নেতা-কর্মীরা ওই কমিটি প্রত্যাখ্যান করে আজ বুধবার দুপুরে উপজেলা সদরে ঝাড়ুমিছিল করেছেন। তাঁরা নতুন কমিটিকে উপজেলা সদরে অবাঞ্ছিত ঘোষণার পাশাপাশি প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সরাইল উপজেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন ২০২২ সালের ২৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে আনিছুল ইসলাম ঠাকুরকে সভাপতি, নুরুজ্জামান লস্করকে সাধারণ সম্পাদক ও ডি এম দুলালকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে আংশিক কমিটি গঠন করা হয়। আড়াই বছর পর ২০২৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর এক চিঠিতে ১০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেন জেলা কমিটির আহ্বায়ক আবদুল মান্নান ও সদস্যসচিব সিরাজুল ইসলাম। তবে চিঠিতে শুধু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ছিল। ১৩ জানুয়ারি বাকি ৯৯ জনের তালিকা প্রকাশ করা হয়।
কমিটিতে আগের কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুর রহমানকে করা হয়েছে ২ নম্বর সদস্য। আর বাদ পড়েছেন সাবেক কমিটির সহসভাপতি জহির উদ্দিন, হোসেন মিয়া, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মাস্টারসহ অধিকাংশ নেতা। তাঁরা প্রকাশিত পূর্ণাঙ্গ কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করে প্রতিহত করার ঘোষণা দেন।
আজ দুপুরে আনোয়ার হোসেন মাস্টার ও বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হোসেন খন্দকারের নেতৃত্বে ঝাড়ুমিছিল করেন নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা। তাঁরা উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণের পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে সমাবেশ করেন। উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি হোসেন মিয়ার সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সাবেক সহসভাপতি জহির উদ্দিন, সরাইল সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল জব্বার, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সরাইল ডিগ্রি কলেজের (বর্তমানে সরকারি) সাবেক ভিপি উসমান খান, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক রিফাত বিন জিয়া প্রমুখ।
দলীয় সূত্র জানায়, ২০২২ সালের ২৩ এপ্রিল নুরুজ্জামান লস্করের কালীকচ্ছ ইউনিয়নের সূর্যকান্দীর বাড়িতে দ্বিবার্ষিক সম্মেলন হয়। সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ও জেলার নেতারা উপস্থিত থাকলেও তৎকালীন বিএনপির সংসদ সদস্য উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া ও সাবেক কমিটির সভাপতি-সম্পাদকসহ অধিকাংশ নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন না। উপজেলা বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের সাবেক কমিটির নেতা-কর্মীরা ওই কমিটি মেনে নেননি। এর পর থেকে সরাইলে বিএনপি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। বড় অংশটি বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে।
গত সোমবার পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার দিন বর্তমান কমিটির সভাপতি আনিছুল ইসলাম ঠাকুর ব্যক্তিগত কাজে উপজেলা সদরে গেলে আনোয়ার হোসেন মাস্টার ও তাঁর অনুসারীদের দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। পরে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের সহায়তায় তিনি উপজেলা প্রশাসন চত্বর ত্যাগ করেন।
আনোয়ার হোসেন মাস্টার প্রথম আলোকে বলেন, ‘টাকার বিনিময়ে করা কমিটি আমরা মানি না। টাকা খেয়ে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও জাতীয় পার্টির লোকজনকে পদ দিয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা মোবারক হোসেনের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিয়ে পদ দিয়েছে। বাদ দিয়েছে মামলা-হামলা নির্যাতনের শিকার নেতা-কর্মীদের। যাঁরা সভাপতি-সম্পাদক হয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে একটি মামলাও নেই। আমি দল করে হত্যা, বিস্ফোরকসহ ১৫ থেকে ১৬টি মামলা খেয়েছি। এখন আমার কোনো পদ নেই। আমরা তাঁদের মানি না। তাঁদের প্রতিহত করা হবে।’
নতুন কমিটি প্রতিহতের ডাক দিয়ে গতকাল মঙ্গলবার রাতে উপজেলা সদরের স্থানীয় পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় মাঠে বিএনপির একাংশ প্রতিবাদ সমাবেশ করে। পরে কয়েক শ নেতা-কর্মী উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
বর্তমান কমিটির যুগ্ম সম্পাদক নাজমুল আলম খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলা-হামলার শিকার ও ত্যাগী নেতা-কর্মীদের দলের বাইরে রাখা হয়েছে। আমি নির্যাতনের শিকার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আছি। নতুন কমিটির সঙ্গে নেই। আজও আমাদের প্রতিবাদ কর্মসূচি হয়েছে।’ সাবেক সহসভাপতি জহির উদ্দিন বলেন, ‘টাকার বিনিময়ে কমিটিতে রাখা হয়েছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ পরিবারের লোকজনকে। আমরা তাঁদের প্রতিহত করব। তাঁদের মাঠে নামতে দেব না।’
এ বিষয়ে বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান লস্কর প্রথম আলোকে বলেন, এখন যাঁরা বিরোধিতা করছেন, তাঁরা একসময় বিএনপি করতেন। দীর্ঘদিন আন্দোলন-সংগ্রামে তাঁদের পাওয়া যায়নি। গত ৫ আগস্টের পর আবার এসেছেন। সরাইল হচ্ছে বিএনপির ঘাঁটি। এখানে এক হাজার লোক নিয়ে কমিটি করা হলেও কেউ না কেউ বাদ পড়বেন। টাকা নিয়ে কাউকে পদ দেওয়া হয়নি। জেলা কমিটি যাঁকে যোগ্য মনে করেছে, তাঁকেই পদ দিয়েছে।