‘বৃষ্টির পানি আর লতাপাতা খেয়ে আছি, আমাদের বাঁচাও’

লিবিয়ায় আটকে পড়া বাঁশখালীর বাসিন্দা
ছবি-সংগৃহীত

মানব পাচারকারী চক্রের মাধ্যমে লিবিয়া গিয়ে মানবেতর দিন কাটছে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার ৯ বাসিন্দার। তাঁদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে।

আটকে পড়া ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার গন্ডামারা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের রুকনুল ইসলাম, মো. মোরশেদুল আলম, মোহাম্মদ কাউছার মিয়া, আজগর হোসেন, গিয়াস উদ্দিন, মোহাম্মদ আশেক, ইব্রাহিম খলিল; পৌরসভার উত্তর জলদী এলাকার আইয়ুব আলী এবং কাথরিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদ করিম।

আটকে পড়া ব্যক্তিদের পরিবারের দাবি, স্থানীয় দালাল চক্রের মাধ্যমে দুই বছর ধরে কয়েক দফায় এসব ব্যক্তিকে লিবিয়া নিয়ে যায় মানব পাচারকারী চক্র। সেখানে নিয়ে গিয়ে তাঁদের পরিবারের কাছ থেকে এক দফা টাকা আদায় করে মানব পাচার চক্রের সদস্যরা। পরে তাঁদের স্থানীয় একটি সন্ত্রাসী দলের কাছে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়। সন্ত্রাসীরা তাঁদের নির্যাতন চালিয়ে পরিবারের কাছ থেকে আরও এক দফা টাকা আদায় করে। পরে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হলেও বৈধ কাগজপত্র না থাকায় বাঁশখালীর ওই ৯ বাসিন্দা লিবিয়া বেনগাজির একটি পাহাড়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

ইব্রাহিম খলিল ও তাঁর ভাই মোহাম্মদ আশেক বাঁশখালীতে দিনমজুরের কাজ করতেন।

এক বছর আগে তাঁদের লিবিয়া নিয়ে যায় মানব পাচারকারী চক্র। তাঁদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, দুজনের পৈতৃক কোনো জমি ও বসতভিটা নেই। বাবার মামার দেওয়া জমিতে ঘর বানিয়ে কোনোরকমে তাঁদের পরিবারের সদস্যরা বসবাস করেন। অনেক স্বপ্ন দেখিয়ে দুজনকে লিবিয়া নিয়ে যাওয়া হয়। দুজনই এখন সেখানে আটকে পড়েছেন। আশেক বিয়ে করেননি। তবে ইব্রাহিম খলিলের স্ত্রী ও তিন মেয়ে রয়েছে।

ইব্রাহিম খলিল ও মোহাম্মদ আশেকের মা সুনিয়া বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত শুক্রবার ছেলে আমাকে ফোন দিয়ে কান্না করতে করতে বলে, মা আমরা পাহাড়ে থেকে বৃষ্টির পানি আর লতাপাতা খেয়ে বেঁচে আছি। আমাদের জানটা বাঁচাও। আমাদের দেশে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করো।’

আটকে পড়া গিয়াস উদ্দিনের পরিবার জানায়, গিয়াসও দিনমজুর ছিলেন। বিবাহিত গিয়াসের তিন সন্তান রয়েছে। বড় ছেলের বয়স ১১ বছর। স্থানীয় দালাল চক্র তাঁকে বলে, লিবিয়া গেলে ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। সেখানে পৌঁছার আগে কোনো টাকা দিতে হবে না।

গিয়াস উদ্দিনের বাবা আবদুল মজিদ প্রথম আলোকে বলেন, লিবিয়া পৌঁছার পর গিয়াস উদ্দিন তাঁকে ফোন করে পাচারকারী চক্রকে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে বলেন। এ টাকা তিনি পরিশোধ করেন। এ ছাড়া একই সময়ে গিয়াস উদ্দিনকে বিভিন্ন কাজে নিযুক্ত করে মজুরির টাকা নেয় চক্রটি। কয়েক মাস পর একটি সন্ত্রাসী চক্র ছেলেকে জিম্মি করে ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা দাবি করে। সেই টাকা জমি বিক্রি করে তিনি দিয়েছেন। পরে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য উড়োজাহাজের টিকিটের নামে আরও এক লাখ টাকা নেওয়া হয়।

আবদুল মজিদ বলেন, ‘টাকাপয়সা কিছুই আমি ফেরত চাই না। আমি আমার ছেলের জান ভিক্ষা চাই। আমার ছেলেকে দেশে আনার ব্যবস্থা করা হোক। ছেলে মোবাইলে ভিডিও কলে যখন তারা পাহাড়ে কীভাবে আছে, সেটি দেখায়, সহ্য হয় না।’

রুকনুল ইসলামের বাবা শহীদ উল্লাহ বলেন, তাঁর ছেলে দুবাইয়ে ছিলেন। সেখান থেকে চক্রটি প্রলোভনে ফেলে রুকনুল ইসলামকে লিবিয়া নিয়ে যায়। তিনি ছেলের হয়ে চক্রটিকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন।

জানতে চাইলে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেসমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, দালালের মাধ্যমে লিবিয়া গিয়ে আটকে পড়া ৯ ব্যক্তিকে ফিরিয়ে আনতে তাঁদের পরিবারের পক্ষ থেকে প্রশাসনিক সহযোগিতা চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবেন।