‘ইউএস অ্যাগ্রিমেন্ট’ অ্যাপে প্রতারণা মামলার তদন্তে তেমন অগ্রগতি নেই 

ভুক্তভোগীদের হিসাব অনুযায়ী, সারা দেশে ‘ইউএস অ্যাগ্রিমেন্ট’ অ্যাপে প্রায় দুই হাজার মানুষ বিনিয়োগ করে অন্তত ৩০০ কোটি টাকা খুইয়েছে।

রাজশাহীতে ‘ইউএস অ্যাগ্রিমেন্ট’ নামে অ্যাপে প্রতারণা মামলার তদন্তের কোনো অগ্রগতি নেই। প্রথম মামলাটি করার ২২ দিন পরও কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। ইতিমধ্যে দুজন আসামি আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। পুলিশ আসামিদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার জন্য আবেদন করলেও সেটিও এখন পর্যন্ত হয়নি।

আদালতে করা চারটি মামলার তদন্তভার পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিআইবি)। আর থানায় করা দুটি মামলার তদন্ত করছে পুলিশ। এ পর্যন্ত মামলার তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

ভুক্তভোগীরা জানান, ১৭ জানুয়ারি রাজশাহী নগরের রাজপাড়া থানায় প্রথম মামলা করার পর আসামিদের মুঠোফোন খোলাই ছিল। তখন তাঁদের গ্রেপ্তার করার সুযোগও ছিল, কিন্তু পুলিশ গ্রেপ্তারের ব্যাপারে সক্রিয় না হওয়ার কারণে তাঁরা নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। এমনকি ২ নম্বর আসামি ফাতেমা তুজ জোহরা জামিন নিয়ে ভুক্তভোগীদের নামেই উল্টো আদালতে মামলা করেছেন। এখন ভুক্তভোগীরাই বিপাকে পড়েছেন। বাধ্য হয়ে গত শনিবার শতাধিক ভুক্তভোগী নগরের কাদিরগঞ্জ এলাকায় রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের কার্যালয় সামনে মানববন্ধন করেন।

■ পুলিশ আসামিদের ব্যাংক হিসাব জব্দের আবেদন করলেও এখন পর্যন্ত হয়নি।

■ একটি মামলার আসামি জামিন নিয়ে ভুক্তভোগীদের নামেই আদালতে মামলা করেছেন। 

মানববন্ধনে একজন সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, তিনি তাঁর সারা জীবনের সঞ্চয় প্রায় ৯০ লাখ টাকা ‘ইউএস অ্যাগ্রিমেন্ট’ নামে অ্যাপে বিনিয়োগ করেছিলেন। কয়েক মাস মাত্র মুনাফা পেয়েছেন, তারপর মূল টাকা আর ফেরত পাননি।

রাজপাড়া থানায় প্রথম মামলা করেছিলেন মোস্তাক হোসেন নামের এক ব্যক্তি। এই মামলার অগ্রগতির ব্যাপারে রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল হক প্রথম আলোকে বলেন, প্রকৃতপক্ষে এই মামলার কোনো অগ্রগতি হয়নি। ইতিমধ্যে মামলার ২ নম্বর ও ৫ নম্বর আসামি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। পুলিশ আসামিদের জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে তাঁদের মুঠোফোন ট্রাকিং করে অবস্থান নির্ণয় করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তাঁরা ওই নম্বরগুলো আর ব্যবহার করছেন না। যে কারণে তাঁদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হচ্ছে না। আর মামলার পরপরই বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আসামিদের সব হিসাব জব্দ (ফ্রিজ) করার জন্য আবেদন করেছেন। সে প্রতিবেদনও এখন পর্যন্ত হাতে পাননি।

রাজপাড়া থানায় পাঁচজনের বিরুদ্ধে প্রথম মামলাটির পর রাজশাহী মহানগর পুলিশ আসামিদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ইমিগ্রেশন বিভাগে চিঠি দেয়। পিবিআই চারটি মামলার দায়িত্ব পেয়েছে। পিবিআইয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, মামলাগুলোর এখন পর্যন্ত তদন্ত কর্মকর্তা নির্ধারণ করা হয়নি। কর্মকর্তারা ঢাকায় রয়েছেন। তাঁরা ফিরলে তখন তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব বণ্টন করা হবে।

সর্বশেষ গত বুধবার রাজশাহীতে কাইজার আহমেদ নামের এক ভুক্তভোগীর দায়ের করা মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয়েছে অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি)। মামলার আইনজীবী শামীম আখতার বলেন, মামলায় ইউএস অ্যাগ্রিমেন্টের রাজশাহী বিভাগীয় প্রধান মো. ওয়াহেদুজ্জামান (৩৮), তাঁর স্ত্রী ও বিভাগীয় ব্যবস্থাপক ফাতেমা তুজ জহুরা (৩২) ও জেলা এজেন্ট মিঠুন মণ্ডলকে (৩৬) আসামি করা হয়েছে। ওয়াহেদুজ্জামান ও ফাতেমা দম্পতির বাড়ি নগরের নওদাপাড়া এলাকায়। মিঠুন মণ্ডলের বাড়ি নগরের বোয়ালিয়াপাড়ায়।

মামলার আরজিতে কাইজার আহমেদ বলেছেন, আসামিরা তাঁকে এই অ্যাপে বিনিয়োগ করলে মাসে ১ লাখ টাকার বিপরীতে ১১ হাজার ২০০ টাকা মুনাফা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়েছিলেন। সরল বিশ্বাসে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে তিনি ২৮ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। এর মধ্যে তাঁর (কাইজারের) নিজের টাকা ছিল দুই লাখ। বাকি টাকা দিয়েছিলেন মামলার ছয়জন সাক্ষী। আইনজীবী জানান, দণ্ডবিধির ৪০৬, ৪২০ ও ৩৪ ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। আদালতের বিচারক শংকর সাহা মামলাটি গ্রহণ করে তদন্তের জন্য সিআইডিকে দিয়েছেন।

গত মঙ্গলবার রাজশাহীর আদালতে দুটি, সোমবার চারটি এবং রোববার একটি মামলা করেন ভুক্তভোগীরা। এসব মামলা তদন্ত করতে দেওয়া হয়েছে পিবিআইকে। এ ছাড়া ২৩ জানুয়ারি রাজশাহীর গোদাগাড়ী থানায় এবং ১৭ জানুয়ারি রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় দুটি মামলা হয়েছে। দুটি মামলা পুলিশ তদন্ত করছে। সব মামলায় প্রতারণার একই রকম বর্ণনা পাওয়া গেছে।

প্রতারক চক্রটি ১ লাখ টাকার বিপরীতে প্রতি মাসে ১১ হাজার ২০০ টাকা হারে মুনাফা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এবং জানিয়েছিল, বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স আকারে এই মুনাফা তাঁদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হবে। ব্যাংকের জটিলতার কথা বলে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে আর কাউকে মুনাফা দেওয়া হয়নি। গত নভেম্বর মাস থেকে অ্যাপটিও বন্ধ হয়ে গেছে। এরপর আসামিরা গা ঢাকা দেন।