মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে দিশেহারা পায়রাপারের হাবিবুর

বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের ছোট লবণ গোলা গ্রামের জেলে মো. হাবিবুর রহমান। অন্যের মাছ ধরার ট্রলারে কাজে করে চার সদস্যের পরিবার নিয়ে কোনোমতে দিন পার হয় তাঁর। প্রতিদিন ৩০০-৪০০ টাকা আয় হয়। ঘূর্ণিঝড় রিমালের পর সেই আয়ও বন্ধ। পরিবার–পরিজন নিয়ে খেয়ে না খেয়ে থাকতে হচ্ছে তাঁদের। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো মাথা গোঁজার ছোট আশ্রয়টুকুও ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে। নিঃস্ব অবস্থায় তাঁরা অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।

হাবিবুর রহমান বলেন, স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরে ঘর তুলে বসবাস করছিলেন তিনি। ঝড়ে তাঁর ঘরটি বিধ্বস্ত হয়েছে। তাঁরা বসতঘর ভেঙে যাওয়ার পর ঝোড়ো বাতাস ও প্রবল বৃষ্টি থেকে নিজেদের রক্ষার জন্য পাশের এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। অন্যের বাড়ি থেকে দেওয়া খাবার খাচ্ছেন তাঁরা। মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু না থাকার পরিবার নিয়ে দিশেহারা তাঁরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বাঁধের বাইরে মাটির সড়কটি ঝড়ের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। কিছু দূর হেঁটে হাবিবুরের বাড়িতে ঢুকতেই দেখা যায়, তাঁর স্ত্রী রাবেয়া ঝড়ে বিধ্বস্ত হওয়া ঘরের মধ্যে থেকে বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া চাল, ডাল ও কাপড় বের করছেন। যে গাছ পড়ে ঘরটি বিধ্বস্ত হয়েছে, সেই গাছ কেটে সরাচ্ছেন হাবিবুর।

তখন বেলা দেড়টা। দুপুরে কোথায় খাবেন? জানতে চাইলে মৃদু হেসে হাবিবুর বলেন, ‘আত্মীয় বাড়ি থেকে খাবার পাঠাবে, যদি না পাঠায়, তাহলে না খেয়ে থাকতে হবে। আমরা না খেয়ে থাকতে পারলেও আমাদের মেয়েরা না খেয়ে থাকতে পারবে না। তাই তাদের আমরা বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি।’

হাবিবুর আরও বলেন, তিনি পায়রা নদীতে অন্যের মাছ ধরার ট্রলারে কাজ করেন। কোনো রকম সংসার চলে। একমাত্র সম্বল ঘরটি গাছ পড়ে ভেঙে গেছে। এখন কীভাবে আবার ঘর তৈরি করবেন, তা নিয়ে এখন চিন্তা। যদি ঘর তুলতে না পারি, তাহলে এবার ছোট একটি ঝুপড়ি করার চেষ্টা করবেন।

বুড়িরচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হুমায়ূন কবির বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের ঝোড়ো বাতাসে এলাকার ১০৭টি বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ছাড়া আংশিক ক্ষতি হয়েছে দুই হাজার বসতঘর। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে সহযোগিতার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রিমালে জেলায় ৩ হাজার ৩৭৪টি বসতঘর বিধ্বস্ত ও ১৩ হাজার ৩৪টি বসতঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ৬ হাজার হেক্টর কৃষিজমি পানিতে ডুবে গেছে। ৪ হাজার ১৫৭ হেক্টর জমির মাছের ঘের ও জলাশয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।