ঝালকাঠিতে বিদ্যুতের দাবিতে ওজোপাডিকোর কার্যালয়ে ঘেরাও

ঝালকাঠিতে বিদ্যুতের দাবিতে ওজোপাডিকোর কার্যালয়ে ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছে গ্রাহকেরা। বুধবার সন্ধ্যায় শহরের কলেজ সড়কে
ছবি: প্রথম আলো

ঝালকাঠিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করার দাবিতে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) কার্যালয়ে ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছেন গ্রাহকেরা। বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে শহরের কলেজ সড়কের বিদ্যুৎ অফিসের ৩৩ কেভির স্টেশনে এ বিক্ষোভ হয়। পরে পুলিশ সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

রিমালের প্রভাবে তিন ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ নেই ঝালকাঠির এলাকায়। ক্ষিপ্ত গ্রাহকেরা সন্ধ্যার পর কলেজ সড়কের ওজোপাডিকোর কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে শুরু করেন। এ বিষয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে বিদ্যুৎ কার্যালয়ের সামনে জড়ো হওয়া মানুষদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে সার্বক্ষণিক পুলিশ মোতায়েন থাকবে।

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে গাছ উপড়ে পড়ে বিদ্যুতের লাইন ছিঁড়ে ও খুঁটি ভেঙে উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলা শহরসহ চার উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে তিন দিন ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ আছে। এতে পৌর শহর ও আশপাশে এলাকার বাসিন্দারা পানির তীব্র সংকটে পড়েছেন। ঝালকাঠি পৌরসভা, কাঁঠালিয়া ও নলছিটি উপজেলায় ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। জেলার বাকি এলাকা পল্লী বিদ্যুতের অধীন। বুধবার সন্ধ্যায় রাজাপুর উপজেলা শহরের কিছু অংশ ও নলছিটির কিছু অংশসহ পল্লী বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা হয়েছে।

ঝালকাঠির ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান বলেন, ঝালকাঠি-বরিশাল আঞ্চলিক মহাসড়কসহ বিভিন্ন এলাকায় ১১টি স্থানে ৩৩ কেভি লাইনের ওপর গাছ পড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়েছে। এগুলো মেরামতে কাজ চলছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে গভীর রাত গড়াতে পারে। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা উপড়ে পড়া গাছ কাটায় বিদ্যুৎ বিভাগকে সহযোগিতা করছেন। ঘূর্ণিঝড়ের গতি কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের লাইন মেরামতের জন্য কর্মীরা কাজ শুরু করেছেন। তবে জেলার অনেক এলাকায় রাস্তাঘাট এখনো চলাচলের উপযোগী হয়নি। এ কারণে মেরামতের কাজে সময় লাগছে।

শহরের বিভিন্ন দোকানে জেনারেটর চালিয়ে ৫০ টাকার বিনিময়ে মুঠোফোনের চার্জ দিচ্ছে লোকজন। দেখা গেছে। ঝালকাঠি শহরের কালিবাড়ি এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

ঝালকাঠি শহরের বাসিন্দারা পৌরসভার পানি সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল। তাই বিদ্যুৎ না থাকায় পৌরসভার পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। তাঁরা বলেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে গত রোববার রাত ১১টার দিকে জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ঝালকাঠি শহরের আড়দ্দার পট্টি এলাকার লক্ষ্মণ কণ্ডু বলেন, ‘আমরা এত দিন বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় আছি। রাতে আলো জ্বালানোর জন্য মোমবাতির প্রয়োজন। দোকানিরা এই সুযোগে ২০ টাকার মোমবাতি ৫০ টাকায় বিক্রি করছে।’

এদিকে শহরের বিভিন্ন দোকানে জেনারেটর চালিয়ে ৫০ টাকার বিনিময়ে মুঠোফোনের চার্জ দিতে দেখা গেছে। শহরের কালিবাড়ি, সাধনার মোড় ও পোস্ট অফিসের সামনে কিছু দোকানে জেনারেটরে মুঠোফোন চার্জ দেওয়ার জন্য সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভিড় করছেন।

শহরের কালীবাড়ী এলাকায় ঢাকা ইলেকট্রনিকসে ৫০ টাকার বিনিময়ে মুঠোফোনের চার্জ দিতে আসা একটি ওষুধ কোম্পানির বিক্রয়কর্মী মইনুল হোসেন বলেন, ‘মুঠোফোনে চার্জ না থাকায় কোম্পানি ও বাড়িতে যোগাযোগ করতে পারছি না। তাই ৫০ টাকা দিয়ে জেনারেটরে চার্জ দিচ্ছি’।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে ঝালকাঠিতে ছয় শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬ হাজার ১৯০ হেক্টর কৃষিজমির ফসল। বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করে সাড়ে ৯ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ঝড়ে ২ হাজার ৭০টি পুকুর ও ১৫৯টি মাছের ঘের তলিয়ে গেছে এবং কাঁঠালিয়া উপজেলায় গাছচাপায় এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।