‘গোলার আতঙ্কে ঘুম আসে না, চলছে গৃহবন্দী জীবন’

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমের মনোয়ারা বেগম
ছবি: প্রথম আলো

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমের তুমব্রু সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দুই মাস ধরে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির যুদ্ধ চলছে। চার দফায় মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেল ও গুলি বাংলাদেশ ভূখণ্ডে এসে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। গত শুক্রবার মর্টার শেলের আঘাতে শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরে থাকা রোহিঙ্গা কিশোর মো. ইকবালের মৃত্যু হয়। আতঙ্কে আছেন ঘুমধুম ইউনিয়নের অন্তত ১২ হাজার বাসিন্দা। সেখানকার এক বাসিন্দা মনোয়ারা বেগমের (২৩) বয়ানে ওঠে এল বর্তমান পরিস্থিতি।

মনোয়ারা বেগম গতকাল রোববার বলেন,  দুই মাস ধরে সীমান্তের ওপারে গোলাগুলি চলছে। বাড়ির কাছে একটি মর্টার শেল পড়েছে। একজন রোহিঙ্গা মারা গেছে। গোলাগুলির শব্দে ঘুমাতে পারি না। বিকট শব্দে ঘরবাড়ি কেঁপে ওঠে। গোলার আতঙ্কে ঘুম আসে না। যুদ্ধ শুরু হলে কোথায় ঠাঁই নেব, ভেবে পাচ্ছি না। গৃহবন্দী অবস্থা চলছে।

আড়াই বছর ধরে মনোয়ারা এলজিইডির সড়ক পরিষ্কারের কাজ করেন। তিনি বললেন, ১০ থেকে ১৫ দিন ধরে সড়কে লোকজনের চলাচল সীমিত হয়ে পড়েছে। গাড়িও তেমন চলে না। সড়কে বিজিবি টহল দেয়। মানুষ জরুরি কাজে বের হলেও দ্রুত ঘরে ফিরে যান।

মনোয়ারার স্বামী মারা গেছেন বছর তিনেক আগে। বৃদ্ধা মা ও দুই ছেলে মো. আরিফ ও মো. রিফাতকে নিয়ে তাঁর সংসার। কাজ করে দিনে ১৭৫ টাকা পান। এই আয়ে সংসার চলতে চায় না। দুই মাস ধরে এখানকার ব্যবসা-বাণিজ্য মন্দা, দোকানপাট প্রায় বন্ধ। এলাকাতে কাজকর্ম নেই। শ্রমজীবী মানুষের অবস্থা অনেক খারাপ। কেউ কোনো ত্রাণ সহায়তা দেননি তাঁদের।

গোলাগুলি কখন হয়, জানতে চাইলে মনোয়ারা বলেন, ঠিক-ঠিকানা নেই। সকালে হয়, রাতেও হয়। সড়কে দাঁড়িয়ে ওপারের (রাখাইন রাজ্যের) পাহাড় থেকে ছোড়া গোলার আগুন দেখা যায়। রাতের বেলায় গোলা ছোড়া হলে আকাশ আগুনের শিখায় লাল হয়ে ওঠে। ঘরবাড়ি কাঁপতে থাকে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে কী করবেন, এই নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই তাঁর। বললেন, ঘরে ৬০ বছরের অসুস্থ মা ও ছোট ছোট দুই ছেলে। ঠিকমতো সংসার চলে না; এর মধ্যে কোথাও সরে যেতে হলে কী পরিস্থিতি যে হবে, তিনি ভাবতেও পারছেন না। গোলাগুলি বন্ধ হয়ে তাঁরা যেন দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে যেতে পারেন, সেটাই তাঁর একমাত্র চাওয়া এখন।