সন্ত্রাসী ঘটনায় বান্দরবানের হোটেল-মোটেলের বুকিং বাতিল করছেন পর্যটকেরা

বান্দরবানে নীলাচল পর্যটনকেন্দ্রফাইল ছবি

বান্দরবানের পর্যটন খাতে আবারও বিরূপ প্রভাব পড়েছে। রুমা ও থানচিতে ব্যাংক ডাকাতি, পুলিশ-আনসারের অস্ত্র লুটের ঘটনার পর ঈদের দীর্ঘ ছুটি উপলক্ষে হোটেল-মোটেলের বুকিং বাতিল করছেন অনেক পর্যটক। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বিত অভিযানে ভয়-শঙ্কা কিছুটা কেটে যাওয়ায় হোটেল-মোটেলের বুকিং বাতিলের হার কমেছে বলে প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন।

ঈদ ও ঈদের সঙ্গে পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহী বৈসাবি (বৈসু, সাংগ্রাইং, বিজু) উৎসবের জন্য দীর্ঘ প্রায় এক সপ্তাহের ছুটিতে সবেমাত্র হোটেল-মোটেলে কক্ষ ভাড়া শুরু হয়েছিল। ঠিক সেই সময়ে সশস্ত্র গোষ্ঠী ব্যাংক ডাকাতি, ব্যাংকের ব্যবস্থাপক অপহরণ, পুলিশ-আনসারের অস্ত্র লুটের ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বুকিং বাতিল করতে শুরু করেন পর্যটকেরা।

জেলা শহরের বাসস্ট্যান্ড–সংলগ্ন হিলভিউ হোটেলে সব মৌসুমে পর্যটকের আনাগোনা বেশি। এই হোটেলের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ পারভেজ বলেন, মাত্র ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কক্ষ আগাম ভাড়া হয়েছিল। সন্ত্রাসী ঘটনার পর নতুন বুকিং দূরের কথা, আগের বুকিংগুলোর অধিকাংশ বাতিল হয়ে গেছে। তাঁর মতে, হিলভিউ হোটেলে পর্যটক নেই মানে অন্যান্য হোটেলে তা প্রায় শূন্যের পর্যায়ে।

বান্দরবান প্রেসক্লাব ভবনে হোটেল গ্রিন হিলের ব্যবস্থাপক রূপন দাশ বলেন, ঈদের পর পরিস্থিতি ভালো হলে কিছু পর্যটক হয়তো আসতে পারেন। কিন্তু এখন একেবারেই কোনো পর্যটক আসছেন না বলা চলে।

বান্দরবান-চিম্বুক সড়কের ওয়াইজংশনে তারকা হোটেল ‘সাইরু’র ব্যবস্থাপক আতিকুর রহমান বলেন, তাঁদের হোটেলে প্রায় ৬০ শতাংশ কক্ষ আগাম ভাড়া হয়েছিল। সেখান থেকে অর্ধেকের বেশি বাতিল হয়েছে। বাকিগুলো টেকার ব্যাপারে তিনি সন্দিহান। দুই-এক দিনের মধ্যে হয়তো পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। তখন আবার বুকিং নেওয়া শুরু হবে, তাঁরা সেই আশায় আছেন।

জেলা হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি অমল কান্তি দাশ জানিয়েছেন, তাঁরা আশা করেছিলেন যে এবার ঈদের লম্বা ছুটিতে পর্যটন ব্যবসা চাঙা হবে। কিন্তু রুমা ও থানচির ঘটনা পর্যটনকে আগের চেয়ে খারাপ অবস্থায় নিয়ে গেছে।

হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, জেলা শহর ও শহরতলিতে ৭০টিসহ রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলায় শতাধিক হোটেল-মোটেল ও অবকাশ যাপনকেন্দ্র আছে। পর্যটনের বিরূপ প্রভাবে হোটেল-মোটেলের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রায় ১ হাজার কর্মচারী, ২৫০ জন ট্যুরিস্ট গাইড, ৫ শতাধিক গাড়িচালক, চালকের সহকারী, ১৫০ জন যন্ত্রচালিত নৌকাচালক সরাসারি বেকার হয়ে পড়েছেন।

হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, জেলায় বর্তমানে একসঙ্গে ছয় হাজার পর্যটকের আবাসনের সুযোগ আছে। প্রত্যেক পর্যটকের বিপরীতে স্থানীয় ১১টি খাতে সম্পৃক্ত মানুষ পর্যটনে সরাসরি আয়রোজগারে উপকৃত হতে পারেন। সেই হিসাবে পর্যটন খাতে ৬৬ হাজার মানুষের আয়রোজগারে ভাটা পড়েছে।

জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, গত বছরের মতো এবার রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচিতে পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে না। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে ওই তিন উপজেলায় আপাতত ভ্রমণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরুৎসাহিত করবে। কারণ, সেখানে সমন্বিত অভিযান চলছে। জেলা শহর, শহরতলি ও চিম্বুক পাহাড়ে ভ্রমণে কোনো সমস্যা নেই।

জেলার পর্যটন সেলে দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হক বলেন, অতীতের অভিজ্ঞতায় বলা যায় যে ঈদের আগে পর্যটকের সংখ্যা এমনিতেও কম থাকে। এবার রুমা ও থানচির ঘটনার কিছুটা প্রভাব পড়েছে ঠিক, কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বিত অভিযান শুরু হওয়ার পর সেই বিরূপ প্রভাব অনেকটা কেটে গেছে। দুই-এক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক হবে। ঈদের পরদিন থেকে পর্যটকের আনাগোনায় মুখর হয়ে উঠতে পারে বান্দরবান।