বগুড়ায় স্ত্রী-সন্তানসহ শ্রমিক লীগ নেতা সামছুদ্দিনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

সামছুদ্দিন শেখ
ছবি: সংগৃহীত

বগুড়ায় ১৬ কোটি টাকার বেশি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে জেলা শ্রমিক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সামছুদ্দিন শেখ ওরফে হেলাল এবং তাঁর স্ত্রী ও সন্তানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। আজ রোববার বিকেলে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে বাদী হয়ে মামলাগুলো দায়ের করেন উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামান।

সামছুদ্দিন শেখ ছাড়া তাঁর প্রথম স্ত্রী মোছা. হেলেনা পারভীন ও ছেলে হোসাইন হাবীবের বিরুদ্ধে একটি করে মামলা করা হয়েছে। সামছুদ্দিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে বগুড়া মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন। তিনি মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বগুড়া পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর।

২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রথম দুদক থেকে সামছুদ্দিন শেখ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সম্পদ বিবরণীর হিসাব চেয়ে নোটিশ পাঠানো হয়। ২০২১ সালের ২৫ মে তাঁরা দুদকে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। এরপর অবৈধ সম্পদের খোঁজে তদন্তে নামে দুদক। তদন্তে দুদকে দাখিল করা বিবরণীর সঙ্গে সম্পদের গরমিল পাওয়া যায়।

দুদকের উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, শ্রমিক নেতা সামছুদ্দিন শেখ দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে ৫৮ লাখ ৪২ হাজার ৮৪ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে ৯ কোটি ৭২ লাখ ৪০ হাজার ৯২৬ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এসব অভিযোগ ছাড়া ১ কোটি ২ লাখ ৫৯ হাজার ৩৫৭ টাকার স্থাবর সম্পদ তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী আবে জমজম ওরফে নাজীর কাছে স্থানান্তর করেছেন তিনি।

দুদকের উপপরিচালক আরও বলেন, সামছুদ্দিন শেখের প্রথম স্ত্রী হেলেনা পারভীন ১৬ লাখ ৯৪ হাজার ১৮৯ টাকার তথ্য গোপন করেছেন। এ ছাড়া তিনি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন ২ কোটি ৪১ লাখ ২৩ হাজার ৯৮৩ টাকার। এর বাইরে ১ কোটি ৭২ লাখ ১২ হাজার ৪৩৯ টাকার স্থাবর সম্পদ স্বামী, কন্যা ও ছেলের নামে স্থানান্তর করেছেন তিনি। অন্যদিকে সামছুদ্দিনের ছেলে হোসাইন হাবীবের সম্পদ বিবরণীতে ৭৭ লাখ ৮০ হাজার ৬২২ টাকার সম্পদ গোপনের তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া তাঁর নামে ২ কোটি ৮০ লাখ ৫ হাজার ৩৪৯ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের প্রাথমিক তথ্য মিলেছে।

মামলার এজাহার বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে ১৩ কোটি ৭ লাখ ৪৮ হাজার ৫৪৩ টাকার সম্পদ আছে বলে উল্লেখ করেন শ্রমিক লীগ নেতা সামছুদ্দিন। কিন্তু সম্পদ যাচাইয়ে ১৩ কোটি ৬৫ লাখ ৯০ হাজার ৬২৭ টাকার খোঁজ পায় দুদক। সম্পদ বিবরণীতে বৈধ আয় ৩ কোটি ৮২ লাখ ৯৯ হাজার ৭৭৪ টাকা। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের পরিমাণ ৯ কোটি ৭২ লাখ ৪০ হাজার ৯২৬ টাকা। এ ছাড়া ২০১৯ সালে কয়েকটি দলিল ও হলফনামা মূলে তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী আবে জমজমের নামে মোট ১ কোটি ২ লাখ ৫৯ হাজার ৩৫৭ টাকার সম্পদ স্থানান্তর করেছেন।

২০১৫ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত বগুড়া পৌর নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করার সময় কমিশনে দাখিল করা হলফনামায় সামছুদ্দিন শেখ নিজের সম্পদের হিসাব দিয়েছিলেন। তাতে বলা হয়, তাঁর ১৪ লাখ ১৬ হাজার টাকা, একটি মাইক্রোবাস, একটি মোটরসাইকেল, ২৩ শতাংশ কৃষি-অকৃষি জমি ও ছয়তলা একটি ভবন আছে। তাঁর গৃহিণী স্ত্রীর নামে ১৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা, ১১ শতাংশ জমি, পাঁচতলা ভবন, তিনটি বাস ও ১২ ভরি স্বর্ণালংকার থাকার কথা উল্লেখ করা হয়। তবে দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে সেটার গরমিল পাওয়া যায়।

সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮০ সালের দিকে সামছুদ্দিন শেখ মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ একজন শ্রমিক ছিলেন। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর তিনি শ্রমিক রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর যুক্ত হন আওয়ামীপন্থী শ্রমিক রাজনীতিতে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তাঁর কপাল খুলে যায়। বগুড়া পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছাড়া জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদকের পদ পান তিনি।

পরিবহন ও অটোরিকশায় চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ, রেলওয়ের জায়গা দখল করে দোকান নির্মাণসহ নানা অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। শহরে একাধিক বাড়ি, গাড়ি, দোকানের মালিক ছাড়াও শ্রমিক নেতা থেকে হয়ে যান পরিবহন মালিক। বগুড়া-ঢাকা রুটে ‘শাহ ফতেহ আলী পরিবহন’ নামে বাস কোম্পানির অন্যতম অংশীদার হয়ে ওঠেন তিনি। পরে দুদক তাঁর অবৈধভাবে সম্পদ অনুসন্ধানে নামে।