কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলব: আসিফ মাহমুদ
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ‘বিগত স্বৈরাচার সরকার নানা কারণে কুমিল্লাকে বঞ্চিত করেছে। কুমিল্লা একটি প্রশাসনিক বিভাগ হবে—এটি কুমিল্লাসহ আশপাশের জেলার জনগণের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা। বিভাগীয় কার্যক্রমের জন্য চট্টগ্রামে গিয়ে এ অঞ্চলের মানুষকে অনেক বেগ পেতে হয়। কিন্তু স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা বলেছিল, “কুমিল্লা নামে কখনোই বিভাগ হবে না।” আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, বিভাগ হলে কুমিল্লা নামেই হবে। অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়নের জন্য সরকারের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আমি কথা বলব।’
শনিবার বিকেলে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় দুর্গা রাম (ডিআর) পাইলট সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আসিফ মাহমুদ এ কথাগুলো বলেন। এদিন নিজের জন্মভূমি মুরাদনগর উপজেলাবাসীর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁকে গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়। দুপুর থেকে তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন ছুটে আসেন।
এর আগে মুরাদনগরের উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কবি নজরুল মিলনায়তনে মতবিনিময় সভা করেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা।
আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের কারণে এত দিন আপনাদের মাঝে আসতে পারিনি। তবে আজকে আপনাদের ভালোবাসা দেখে আমি অভিভূত হয়েছি। কথা দিচ্ছি, শুধু এই সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে নয়, যত দিন দেশের জন্য কাজ করব, তত দিন আপনাদের একজন প্রতিনিধি হয়ে আপনাদের পাশে থাকব। ইতিমধ্যে মুরাদনগরে ২০টির বেশি উন্নয়ন প্রকল্প স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। সেগুলোর কাজ দ্রুত শুরু হবে। এর বাইরে যেকোনো উন্নয়নের প্রয়োজন হলে আপনারা ইউএনও, ডিসির মাধ্যমে জানাবেন। অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য আমি কাজ করব। মুরাদনগরের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্রীড়াসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হবে।’
‘বহিরাগত শক্তির আশীর্বাদে ক্ষমতায় আসা যাবে না’
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ‘বর্তমান বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে অনেক ধরনের অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক ষড়যন্ত্র চলছে। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ধারণা জন্মেছে যে ভারতের আশীর্বাদ ছাড়া মনে হয় বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসা যায় না। তাঁরা যেভাবে বক্তব্য দিচ্ছেন, তা এ দেশের স্বাধীনতাকামী ও সার্বভৌমত্বের পক্ষের মানুষের জন্য কলঙ্কজনক।’
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা যদি মনে করেন ভারতের আশীর্বাদ ছাড়া এ দেশের ক্ষমতা আসা যায় না, তাহলে বলতে হয় শেখ হাসিনা ছাড়া কারও প্রতি ভারতের এত বেশি আশীর্বাদ ছিল না। শেখ হাসিনার কেমন পরিণতি বাংলাদেশের মানুষ করেছে, তা স্পষ্টভাবে আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। আপনারা যদি ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিণতির সম্মুখীন হতে না চান, তাহলে বাংলাদেশের জনগণের রায়কে ক্ষমতায় আসার একমাত্র উপায় হিসেবে অবলম্বন করুন। অন্য কোনো বহিরাগত শক্তির আশীর্বাদে এ দেশে ক্ষমতায় আসা যাবে না। বাংলাদেশের জনগণের রায় হবে যেকোনো দলের ক্ষমতায় আসার একমাত্র অবলম্বন।’
আসিফ মাহমুদ আরও বলেন, ‘যেই শহীদদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আজ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন আমরা দেখছি, তাঁরা রক্ত দিয়ে যে ঋণ আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়ে গেছেন, সেই ঋণ পরিশোধের জন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। আমি আমৃত্যু সেই শহীদদের ও আহত ব্যক্তিদের ঋণ পরিশোধের জন্য এবং বাংলাদেশকে সঠিক পথে রাখার জন্য কাজ করব। এ জন্য আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি। যে নতুন বাংলাদেশের কথা আমরা বলি, সেই নতুন বাংলাদেশ গড়তে আমাদের সবাইকে নিজ নিজ অবস্থানে কাজ করতে হবে।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে তরুণেরা যেভাবে নেতৃত্ব দিয়েছিল, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে ও নতুন বাংলাদেশ গঠনেও তরুণদের নেতৃত্ব দিতে হবে। এ জন্য তরুণদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রস্তুত করতে হবে, ভবিষ্যৎ নতুন বাংলাদেশের দায়িত্ব গ্রহণ করার জন্য। তিনি বলেন, ‘বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের সময়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো নির্দিষ্ট কয়েকটি জায়গায় হতো। এখন আমরা বলেছি, কোনো প্রকার বৈষম্য না রেখে বাংলাদেশের প্রতিটি আনাচে-কানাচে সমানভাবে উন্নয়ন হবে।’
অনুষ্ঠানে বিএনপি, জামায়াত, হেফাজতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের নেতারা বক্তব্য দেন। এ সময় জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত কুমিল্লা জেলার ৩৫টি পরিবারের সদস্যদের সহায়তা দেওয়া হয়।