বগুড়ায় ভারী বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে সড়ক-খেলার মাঠ, দুর্ভোগে শহরবাসী

বগুড়ায় ভারী বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে অনেক সড়ক। আজ মঙ্গলবার সকালেছবি: প্রথম আলো

ভারী বর্ষণে বগুড়া শহরের সড়ক, খেলার মাঠ পানিতে ডুবে গেছে। গুরুত্বপূর্ণ অনেক সড়কে হাঁটুপানি। নালার নোংরা পানি ঢুকে পড়েছে বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে। গণপরিবহনের সংকটে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন শহরবাসী। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে বগুড়ায় টানা ভারী বৃষ্টি শুরু হয়। দুপুর পর্যন্ত চলা এ বৃষ্টিতে শহরজুড়ে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। বেলা একটা পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে থাকতে দেখা গেছে।

বগুড়া আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া জানান, সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৮২ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে, যা চলতি মৌসুমে শহরের সর্বোচ্চ। এর আগে গত ২ জুন ৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল।

সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথাসহ আশপাশের সড়কে হাঁটুপানি জমে থাকতে দেখা যায়। কবি নজরুল ইসলাম সড়ক, শেরপুর সড়ক, স্টেশন সড়ক, সার্কিট হাউস সড়ক, পার্ক রোড, গালাপট্টি সড়ক, কাঁঠালতলা, ফতেহ আলী বাজার সড়ক, নওয়াববাড়ি সড়ক, চকযাদু ক্রস লেন ও বাদুরতলা সড়ক হাঁটুপানিতে তলিয়ে যায়। সকাল ১০টার দিকে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ছিল জলেশ্বরীতলা এলাকার শহীদ আবদুল জব্বার সড়ক, রোমেনা আফাজ সড়ক, বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল বাকি সড়ক, নূর মসজিদ সড়ক ও আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠ সড়কে। জেলা জজ আদালতের সামনেও পানি জমে যায়। এসব সড়কের দুই পাশের নালার ময়লা-আবর্জনা ভরা পানি উপচে পড়ে সড়কে চলে আসে। সেই পানি ঢুকে যায় বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।

রোমেনা আফাজ সড়কে হাঁটুপানিতে দাঁড়িয়ে রিকশার অপেক্ষায় ছিলেন এক নারী। তিনি বলেন, ‘সকালে মেয়েকে স্কুলে দিয়ে আবার নিতে এসেছি। আধা ঘণ্টা ধরে রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছি। পানি ও বৃষ্টির কারণে রিকশা মিলছে না।’

বেলা ১১টায় সাতমাথা-বনানী সড়কও ছিল জলমগ্ন। হাঁটুপানিতে তলিয়ে যায় সড়ক। নর্দমার পানির স্রোত বইতে থাকে। এতে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। পথচারী শাকিল আহম্মেদ বলেন, শহরের প্রধান সড়কে হাঁটুপানি। সড়কে পানি এমনভাবে জমেছে যেন নৌকাও চলতে পারে। অলিগলি, মাঠ—সবখানে পানি।

শহরের প্রেসপট্রির ব্যবসায়ী আবুল কাশেম বলেন, সকাল থেকেই ভারী বর্ষণে শহরের চকযাদু ক্রস লেন, বাদুরতলা সড়ক, প্রেসপট্টি লেন, বড়গোলা লেনসহ সব সড়ক হাঁটুপানিতে জলমগ্ন হয়ে পড়ে। সড়ক জলমগ্ন হয়ে পড়ায় এসব সড়কের পাশে শতাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান কেউ খুলতে পারেননি, সকাল থেকে বন্ধ ছিল।

এদিকে টানা বৃষ্টিতে আজ সকাল থেকে শহরের রাস্তাঘাট, মার্কেট, বিপণিবিতান—সবখানেই মানুষের আনাগোনা কম ছিল। তবে বেলা একটার দিকে বৃষ্টি কমলে জনজীবন কিছুটা স্বাভাবিক হয়।

শহরের অলিগলি পানি ঢুকেছে। আজ মঙ্গলবার সকাল
ছবি: প্রথম আলো

দুই দশক ধরে জলজটে ভোগান্তি
বগুড়া শহরে জলাবদ্ধতা নতুন নয়। অন্তত দুই দশক ধরে সামান্য বৃষ্টি হলেই জলজটে জনদুর্ভোগের চিত্র দেখা যায়। স্থানীয় লোকজন জানান, বনানী থেকে মাটিডালি পর্যন্ত প্রধান সড়কের দুই পাশে পানিনিষ্কাশনের জন্য থাকা সরু নালা বছরের বেশির ভাগ সময়ই আবর্জনায় ভরে থাকে। অন্য অনেক সড়কে নালা নেই। এ ছাড়া করতোয়া নদীর দুই পাশে অবৈধ স্থাপনা গড়ে ওঠায় পানি শহর থেকে বের হতে পারছে না। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে সওজ শহরের প্রধান সড়ক সম্প্রসারণের সময় দুই পাশে সাড়ে আট কিলোমিটার নালা নির্মাণ করলেও তা মাত্র তিন ফুট প্রশস্ত। শহরের হোটেল-রেস্তোরাঁর বর্জ্যে এ নালা প্রায়ই বন্ধ হয়ে যায়। বর্ষা দূরের কথা, শুষ্ক মৌসুমেও নালা উপচে পানি রাস্তায় চলে আসে।

করতোয়ার তীরে অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। পুরোনো নালাগুলো নদীতে মিশে যেত, কিন্তু সেগুলোর মুখ দখল হয়ে গেছে। দখল ও ভরাট হয়ে গেছে সুবিল খালসহ বড় জলাশয়। ফলে পানিনিষ্কাশনের স্বাভাবিক গতি বন্ধ হয়ে গেছে।

সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) বগুড়ার সাবেক সভাপতি মাসুদার রহমান বলেন, করতোয়া নদীতীরে গড়ে ওঠা প্রায় ৭০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ শহরে পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক। সামান্য বৃষ্টি হলেই গোটা শহর জলমগ্ন হয়ে পড়ে। শহরের পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থার উন্নয়নের উদ্যোগ নেই। ভারী বর্ষণ হলে ময়লা-আবর্জনায় ভরা নালার নোংরা পানি বাসাবাড়িতেও ঢুকে পড়ে, দুর্গন্ধ ছড়ায়। পথঘাটে চলাচল করা দায় হয়ে পড়ে। এ শহর উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা নেই। পরিকল্পিত নালা নির্মাণ ও পুরোনো নালা সংস্কার ছাড়া জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে শহরবাসীর মুক্তি কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

বগুড়া পৌরসভার প্রশাসক মাসুম আলী বেগ বলেন, বেশি সময় ধরে ভারী বর্ষণে শহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়। এ সমস্যা নিরসনে পৌরসভার প্রায় এক হাজার কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে দুই হাজার কিলোমিটার পাকা নালা দরকার। কিন্তু পানিনিষ্কাশনের জন্য অর্ধেকও নালা নেই। এসব নালা পরিষ্কার রাখতে পৌরসভা থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও পুরোনো সড়কে পানিনিষ্কাশনের নালা নেই। নতুন নালা নির্মাণ ও সংস্কারে অর্থ প্রয়োজন। শহর সাজাতে মহাপরিকল্পনা বা মাস্টারপ্ল্যান তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।