তিন ঘণ্টা আগে বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে আ.লীগের জনসভায় পাঠানো হলো শিক্ষার্থীদের

পঞ্চগড়ের মাড়েয়া মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যোগ দেয়। বুধবার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে
ছবি: প্রথম আলো

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নে করতোয়া নদীর আউলিয়ার ঘাটে সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা উপলক্ষে জনসভার আয়োজন করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ। এ সভায় অংশ নিতে বেলা একটার দিকে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয় ওই ইউনিয়নের অন্তত নয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সভা শেষ হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা সেখানে ছিল।

তবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাদের দাবি, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জনসভায় আসতে বাধ্য করা হয়নি। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আউলিয়ার ঘাটে সেতু নির্মিত হবে—এমন আনন্দ থেকেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নিজেদের মতো করেই সেখানে এসেছিল।

বুধবার বেলা দুইটার দিকে মাড়েয়া মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে শুরু হয় এই জনসভার কার্যক্রম। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রেলপথমন্ত্রী ও পঞ্চগড়-২ আসনের সংসদ সদস্য নূরুল ইসলাম। জনসভা উপলক্ষে মাড়েয়া মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদেরও বেলা একটার পর আর কোনো ক্লাস হয়নি। আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীরা ব্যানারসহ শোভাযাত্রা নিয়ে এসে যোগ দেয় জনসভায়। এ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর তৈরি করা এসব ব্যানার টানিয়ে দেওয়া হয় দর্শকসারির পাশে।

জনসভায় মাড়েয়া জংলীপীর উচ্চবিদ্যালয়, মাড়েয়া মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ফুটকিবাড়ি উচ্চবিদ্যালয়, কমলাপুকুরী উচ্চবিদ্যালয়, মাড়েয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দেখা যায়। তারা বিদ্যালয়ের নির্ধারিত পোশাক পরেই আসে।

কিছু শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুইটার আগেই তাদের ছুটি দেওয়া হয়েছে। পরে শিক্ষকেরা তাদের জনসভায় নিয়ে এসেছেন। অনুষ্ঠান শেষ হওয়া পর্যন্ত তাদের সেখানে থাকতে বলা হয়েছে।

জনসভায় আসা শিক্ষার্থীদের একাংশ
ছবি: প্রথম আলো

মাড়েয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘আমরা বেলা একটা পর্যন্ত ক্লাস করেছি। পরে টিফিনের সময় শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য দরখাস্ত দেয়। এ জন্য তাদের যেতে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কাউকে সেখানে যেতে বাধ্য করা হয়নি। যে যার মতো করে অনুষ্ঠানে গেছে।’

মাড়েয়া মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক সপেন্দ্র নাথ বর্মণ বলেন, বেলা দুইটার দিকে যেহেতু অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে, এ জন্য এরপর আর ক্লাস হয়নি। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিও দেওয়া হয়নি। শিক্ষার্থীরা কেউ কেউ জনসভায় ছিল। এই ইউনিয়নের নয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এখানে এসেছিল।

মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ফুটকিবাড়ি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু আনছার মো. রেজাউল করিম বলেন, কোনো স্কুলের শিক্ষক বা শিক্ষার্থীকে জনসভায় আসতে বাধ্য করা হয়নি। আউলিয়ার ঘাটের সেতু নির্মাণ এই এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি। গত বছর এই আউলিয়ার ঘাটে নৌকাডুবিতে ৭২ জনের মৃত্যুর পর এ স্থানে সেতু নির্মাণ করা ছিল সময়ের দাবি। তাই ভিত্তিপ্রস্তরের অনুষ্ঠান এলাকার মানুষের কাছে অনেক আনন্দের। এই আনন্দ থেকেই সবাই জনসভায় এসেছে। এর মধ্যে শিক্ষার্থীরাও কেউ কেউ এসেছিল।

এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শাহীন আকতার মুঠোফোনে বলেন, বিষয়টি গণমাধ্যমকর্মীদের কাছেই শুনেছেন। এ বিষয়ে আগামীকাল বৃহস্পতিবার খোঁজখবর নেবেন।