লেন করেও কমেনি ভোগান্তি

মহাসড়কে নিষিদ্ধ ইঞ্জিনচালিত রিকশা, অটোরিকশার এলোমেলো ও উল্টো পথে চলাচলের কারণেও ভোগান্তিতে পড়তে হয় যাত্রীদের।

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সার্ভিস লেনে গেলেই যানজটে পড়তে হয়। তাই দূরপাল্লার গাড়ির জন্য নির্দিষ্ট যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এরপর যাত্রীদের দীর্ঘ পথ হেঁটে সড়ক পার হতে হয়। গত বুধবার দুপুরে সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

ঢাকার সাভার উপজেলার রেডিও কলোনি বাসস্ট্যান্ড থেকে থানা বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের প্রায় তিন কিলোমিটার অংশে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পথচারী ও যাত্রীদের। মহাসড়কের সার্ভিস লেনে যানজটের কারণে পাঁচ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে সময় লেগে যাচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট। এ ছাড়া মহাসড়কের নিরবচ্ছিন্নভাবে গাড়ি চলাচলের নির্দিষ্ট লেনে যত্রতত্র নামানো হচ্ছে যাত্রী।

ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক প্রশস্তকরণের অংশ হিসেবে প্রায় তিন মাস আগে সাভার বাসস্ট্যান্ড অংশে সড়ক বিভাজক দিয়ে সার্ভিস লেন আলাদা করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল যাত্রী ভোগান্তি কমানো। কিন্তু চালকদের অনীহা, যত্রতত্র পার্কিং ও ভাসমান দোকানপাটের কারণে এই লেন কাজে দিচ্ছে না। বেশির ভাগ বাসচালক নির্দিষ্ট লেন ধরে চলায় সড়ক পারাপারে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করতে পারছেন না যাত্রীরা।

দেখা যায় বাসগুলো যাত্রী নেওয়ার সময় পেছনের বাসকে আটকিয়ে লেনের মাঝবরাবর দাঁড়িয়ে থাকে। বিষয়টি দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
মোহাম্মদ শামীম আল মামুন, নির্বাহী প্রকৌশলী, ঢাকা বিভাগ, সওজ

সড়ক ও জনপথ ঢাকা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আল মামুন বলেন, জনসাধারণের বৃহৎ স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে মহাসড়কে নির্দিষ্ট লেন ও সার্ভিস লেন তৈরি করা হয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণসহ বেশ কিছু জটিলতার কারণে পদচারী–সেতুতে চলন্ত সিঁড়ি বসানো সম্ভব নয়।

এই সড়কে নিয়মিত চলাচলকারী সাভারের বাসিন্দা রাসেল রাব্বী প্রথম আলোকে বলেন, যানজটের কারণে সাভারবাসীর দৈনন্দিন জীবন বিঘ্নিত হচ্ছে। এই সংকট সমাধান করা না গেলে একটি ভালো উদ্যোগ ব্যর্থ হয়ে যাবে।

রেডিও কলোনি বাসস্ট্যান্ড থেকে থানা বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত অংশটি ঘুরে দেখা যায়, সাভার বাসস্ট্যান্ড–সংলগ্ন মহাসড়কের পাশে গড়ে ওঠা কাঁচাবাজারের বর্জ্য স্তূপ করে রাখা হয়েছে সার্ভিস লেনে। বাজার করতে আসা অনেকে প্রাইভেট কার ওই লেনে রেখেছেন। কিছু অংশ দখল করে রেখেছে ভাড়ায় চালিত গাড়ি ও ভাসমান বিভিন্ন পণ্যের দোকান।

মৌমিতা বাসের চালক মো. সাইফুল বলছিলেন, ‘সার্ভিস লেনে ঢুকে সামনের বাসের কারণে আগাইতে পারছি না। পাশে তো জায়গাও নাই যে চইলা যাব।’

সার্ভিস লেনটি সরু হয়ে যাওয়ায় একটি পরিবহনের পাশ দিয়ে আরেকটি পরিবহনের যাওয়ার সুযোগ নেই। সামনের বাস দীর্ঘক্ষণ ধরে যাত্রী তোলায় বা অন্য কোনো প্রয়োজনে অপেক্ষা করলে পেছনের সব কটি পরিবহনকে অপেক্ষা করতে হয়। এতে তৈরি হয় দীর্ঘ যানজটের। এ ছাড়া মহাসড়কে ইঞ্জিনচালিত রিকশা, অটোরিকশার এলোমেলো ও উল্টো পথে চলাচলের কারণেও ভোগান্তিতে পড়তে হয় যাত্রীদের।

সরেজমিনে আরও দেখা যায়, সার্ভিস লেনে যানজট থাকায় বেশ কয়েকটি পরিবহনের বাস সার্ভিস লেনে না গিয়ে ডেডিকেটেড লেন ব্যবহার করছে। যাত্রীদের নামানো হচ্ছে ওই লেনেই। নামার পর বিভাজকের কারণে সড়ক পার হতে না পেরে অনেকেই আধা থেকে এক কিলোমিটার হেঁটে সড়ক বিভাজক নেই এমন স্থান দিয়ে সড়ক পার হচ্ছেন। অনেকেই পার হচ্ছেন সড়ক বিভাজক টপকিয়ে।

মূল সড়কে যাত্রী নামিয়ে দেওয়া ঠিকানা পরিবহন বাসের চালক মো. জুয়েল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই লেনে যাইয়া কী বিপদে পড়ুম নাকি। এক ঘণ্টায়ও পার হইতে পারুম না পাঁচ মিনিটের পথ। যাত্রীরাও গালাগালি করবে।’

সাভার থানা বাসস্ট্যান্ডে পদচারী–সেতুর ঠিক নিচেই দাদা আবদুর রহিমকে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন মো. রাসেল। সড়কের অপর প্রান্তের একটি বেসরকারি হাসপাতালে দাদাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাবেন তিনি। ফুটওভারব্রিজে অসুস্থ বৃদ্ধ দাদাকে নিয়ে পার হওয়ার সাহস পাচ্ছিলেন না। তাই বাধ্য হয়ে মহাসড়কে নিষিদ্ধ ইঞ্জিনচালিত রিকশা নিয়ে মহাসড়কের অনেকটা পথ ঘুরে হাসপাতালে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন রাসেল।

ওই মহাসড়কে সমস্যার কথা তুলে ধরে সড়ক ও জনপথ ঢাকা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আল মামুন বলেন, সার্ভিস লেনটি দুটি লেনের, প্রস্থ ২৪ ফুট। একটি বাস যে লেনে দাঁড়াবে, অপর লেনটি দিয়ে অন্য বাসগুলো নির্বিঘ্নে চলে যাবে। কিন্তু দেখা যায় বাসগুলো যাত্রী নেওয়ার সময় পেছনের বাসকে আটকিয়ে লেনের মাঝবরাবর দাঁড়িয়ে থাকে। বিষয়টি দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

সার্ভিস লেনের সমস্যা নিরসনে ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান ঢাকা জেলা ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহহিল কাফী। এর অংশ হিসেবে সপ্তাহে দুই দিন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য ম্যাজিস্ট্রেট চাওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।