আত্মগোপনে গিয়ে অপহরণের নাটক সাজিয়েছিলেন রহিমা—আদালতে বললেন ছেলে

ফরিদপুর থেকে উদ্ধারের পর রহিমা বেগমকে খুলনা নগরের দৌলতপুর থানায় আনা হয়। ২৪ সেপ্টেম্বর দিনগত রাত ২টায়
ছবি: সাদ্দাম হোসেন

রহিমা বেগম (৫২) আত্মগোপনে গিয়ে অপহরণের নাটক সাজিয়েছিলেন বলে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন তাঁর ছেলে মোহাম্মদ মিরাজ আল শাদী। আজ সোমবার সন্ধ্যায় খুলনা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সরোয়ার আহম্মেদের আদালতে জবানবন্দিতে তিনি এ কথা জানান।

বিষয়টি নিশ্চিত করে খুলনা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দুপুরের দিকে পিবিআই কার্যালয়ে এসে মোহাম্মদ মিরাজ আল শাদী তাঁর মা রহিমা বেগমের বিরুদ্ধে জবানবন্দি দিতে আগ্রহী বলে জানান। পরে পুলিশ তাঁকে আদালতে নিয়ে যায়। সন্ধ্যায় মায়ের বিচার চেয়ে আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন মিরাজ।

আরও পড়ুন

সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, রহিমা বেগম বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে থেকে মিথ্যা কথা বলেছিলেন। এটা মেনে নিতে পারছেন না তাঁর ছেলে। তিনি মায়ের বিচার চান। এ জন্য স্বেচ্ছায় মায়ের বিরুদ্ধে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

জবানবন্দির ব্যাপারে মিরাজ আল শাদীর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তাঁর বোন ও অপহরণ মামলার বাদী আদুরী আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ভাই কেন ও কী উদ্দেশ্যে আদালতে স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিয়েছেন, তা তিনি জানেন না। মিরাজ তাঁদের সঙ্গে থাকেন না, আলাদা থাকেন।

আদুরী আরও বলেন, তাঁরা ৫ বোন ও ১ ভাই। বাবা মারা যাওয়ার পর যে সম্পত্তি তাঁরা পেয়েছিলেন, মেয়েরা সব সম্পত্তি তাঁর মায়ের নামে লিখে দেন। কিন্তু মিরাজ তা দেননি। মায়ের কোনো ব্যাপারেই মিরাজ কখনো এগিয়ে আসেননি। অপহরণ মামলার আসামিদের সঙ্গে মিরাজের যোগাযোগ থাকতে পারে।

আরও পড়ুন

গত ২৭ আগস্ট রাত ১০টার দিকে খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়া এলাকার বাসার উঠানের নলকূপে পানি আনতে যান রহিমা বেগম। কিন্তু এক ঘণ্টা পরও তিনি বাসায় না ফেরায় তাঁর সন্তানেরা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। নলকূপের পাশে তাঁদের মায়ের জুতা, ওড়না ও পানির পাত্র পড়ে থাকলেও মাকে তাঁরা খুঁজে পাননি। এ ঘটনায় ওই রাতেই দৌলতপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন ছেলে মিরাজ। পরদিন মেয়ে আদুরী বাদী হয়ে মাকে অপহরণ করা হয়েছে, এমন অভিযোগ তুলে থানায় অপহরণ মামলা করেন। এ ছাড়া বিষয়টি র‌্যাবকেও জানানো হয়। জমি নিয়ে বিরোধের কারণে রহিমা বেগমকে অপহরণ করা হয়েছে বলে এজাহারে অভিযোগ করা হয়। সেই সঙ্গে সন্দেহের ভিত্তিতে জমি নিয়ে বিরোধ থাকা পাঁচজনের নাম দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীকালে ওই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

মায়ের সন্ধান দাবিতে গত ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনে মরিয়ম মান্নানের কান্নার এই ছবি দেখে তাঁর পক্ষে সোচ্চার হয়েছিলেন অনেকে
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

রহিমা বেগম অপহরণের শিকার হয়েছেন দাবি করে খুলনা ও ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করেন তাঁর আরেক মেয়ে মরিয়ম মান্নান। মাকে ফেরত পাওয়ার আকুতি জানিয়ে তাঁর কান্নাজড়িত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর দেশব্যাপী ব্যাপক এ ঘটনায় চাঞ্চল্য তৈরি হয়। গত ১০ সেপ্টেম্বর সকালে ময়মনসিংহের ফুলপুর থানার বওলা এলাকায় একটি কবরস্থানের জঙ্গল থেকে অজ্ঞাতনামা নারীর বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ২২ সেপ্টেম্বর রাতে ওই লাশের পোশাক ও আলামত সম্পর্কে থানায় জানতে চান মরিয়ম। পোশাক ও উদ্ধার হওয়া আলামতের কথা শুনে নিজের মায়ের লাশ বলে দাবি করেন মরিয়ম। এ জন্য ডিএনএ টেস্টও করাতে চেয়েছিলেন তিনি।

আরও পড়ুন

তবে ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রাম থেকে রহিমা বেগমকে জীবিত উদ্ধার করে পুলিশ। ওই গ্রামের কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন রহিমা। ওই বাড়ির লোকজনকে তিনি বলেছিলেন, ছেলেমেয়েদের ওপর রাগ করে তিনি ঘর ছেড়েছেন। তিনি আর বাড়িতে ফিরতে চান না। প্রতিবেশীদের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধের কথাও বলেছিলেন তিনি।

আরও পড়ুন

তবে রহিমা বেগমকে উদ্ধারের পর আদালত তাঁর জবানবন্দি নিয়ে তাঁর মেয়ে মরিয়ম মান্নানের কাছে হস্তান্তর করেন। মরিয়ম মান্নান মাকে নিয়ে ঢাকায় চলে যান। সেখানে তিনি মাকে মানসিক চিকিৎসা করিয়েছেন। কয়েক দিন আগে আদুরী আক্তারের সঙ্গে তিনি আবার খুলনায় চলে আসেন।