কৃষিশ্রমিকের কাজ করে জিপিএ-৫ পেয়েছে সরাইলের আনাছ

আনাছ মিয়া
ছবি: প্রথম আলো

আনাছ মিয়ার বাবা শারীরিক অসুস্থতার কারণে কাজকর্মে অক্ষম। তিনবেলা ঠিকমতো খাবার জোটে না ছয়জনের পরিবারটিতে। এ অবস্থায় আনাছ মিয়ার পড়াশোনার খরচ চালাবে কে। বাধ্য হয়ে অন্যের জমিতে কৃষিশ্রমিকের কাজ নেয় আনাছ। এভাবে নিজের পড়াশোনার খরচ নিজে জুগিয়েছে সে। পাশাপাশি শারীরিকপ্রতিবন্ধী বাবাকেও সহায়তা করেছে।

এভাবে পরিশ্রম করে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে আনাছ মিয়া। সে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার কালীকচ্ছ ইউনিয়নের নন্দীপাড়া গ্রামের আহাম্মদ হেসেনের ছেলে। আনাছ কালীকচ্ছ পাঠশালা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল।

আনাছ মিয়ার বাবার বাড়ি ছাড়া আর কোনো জমিজমা নেই। কৃষিশ্রমিক ও বর্গাচাষি বাবা আহাম্মদ হেসেন ১৫ বছর আগে গাছ থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন। এর পর থেকে তিনি কাজকর্মে অক্ষম হয়ে পড়েন। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে আনাছ তৃতীয়। উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর অর্থাভাবে বড় বোনের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। ছোট ভাই অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

আনাছ প্রথম আলোকে বলে, অন্যের জমিতে কৃষিশ্রমিকের কাজ করে সেই টাকা দিয়ে পড়াশোনা করেছে। সংসারেও সহায়তা করেছে। কাজ করার কারণে নিয়মিত স্কুলে যেতে পারেনি। প্রাইভেট পড়ার মতোও টাকা ছিল না। কোনো কোনো শিক্ষক টাকা ছাড়া পড়িয়েছেন।

শহরের কোনো ভালো কলেজে পড়ার ইচ্ছা আনাছ মিয়ার। কিন্তু অর্থাভাবে তা অসম্ভব মনে হয় তার। সে বলে, ‘স্থানীয় সরকারি কলেজে ভর্তি হব। এরপর ইচ্ছা আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। সরকারি চাকরি করে মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই।’    

পড়াশোনার প্রতি আনাছ মিয়ার ঝোঁক মুগ্ধ করেছে কালীকচ্ছ পাঠশালা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামকে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আনাছের পরিবার খুবই দরিদ্র। প্রতিকূল পরিবেশেও পড়াশোনা চালিয়ে গেছে। সামর্থ্যবানেরা তার পাশে দাঁড়ালে সে খুব ভালো করবে।