‘হরতাল মানলি পেট চলবি না’

হরতালের মধ্যে আজ রোববার খুলনার সোনাডাঙ্গা আন্তজেলা বাস টার্মিনালে যাত্রীদের ভিড় বাড়েছবি: প্রথম আলো

‘এখন হরতাল-অবরোধ দিনের পর দিন চলতিই থাকবি। কিন্তু তার সাথে আমাদের গা মিলালি চলবি না। বাজারে জিনিসপত্তের যে দাম, তাতে হরতাল মানলি পেট চলবি না।’ কথাগুলো বলছিলেন খুলনা নগরের সোনাডাঙ্গা আন্তজেলা বাস টার্মিনালের পরিবহনশ্রমিক আজগর হোসেন।

খুলনা-সাতক্ষীরা রুটের একটি বাসের চালকের সহকারী হিসেবে কাজ করেন আজগর হোসেন। আজ রোববার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ওই টার্মিনালে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। বাসে যাত্রী নেওয়ার জন্য সাতক্ষীরা, সাতক্ষীরা বলে হাঁক দিচ্ছিলেন তিনি।

আজ সকাল ছয়টায় দেশব্যাপী শুরু হয়েছে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল বাতিলের দাবিতে ওই হরতাল পালন করছে বিএনপি, জামায়াতসহ কয়েকটি দল। তবে ওই হরতালে খুলনার পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। খোলা আছে দোকানপাট।

আজগর হোসেন বলেন, ‘প্রথম দিকে হরতাল-অবরোধের মধ্যি মানুষ কম বের হতিছিল। তবে এহন আর কেউ বসি থাকতিছে না। যার যার জায়গায় সে চলি যাচ্ছে। এ কারণে বাসে যাত্রীও আগের তুলনায় বাড়তিছে। আর বাসে যাত্রী বাড়লি আয়ও বাড়ে।’
বিভিন্ন কাউন্টারে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, আগের অবরোধের সময় বাসে যাত্রী কম হলেও আজ সকাল থেকে লোকাল বাসে যাত্রী ছিল তুলনামূলক বেশি। তবে দূরপাল্লার বাসের যাত্রীর চিত্র আগের মতোই কম।

এদিকে হরতালের সমর্থনে খুলনা নগরে মিছিল করেছে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপি। তবে কোনো ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে সোনাডাঙ্গা-নতুন রাস্তা সড়কের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে ওই মিছিল করে দ্রুত সটকে পড়েন নেতা-কর্মীরা। এর আগে গতকাল শনিবার সন্ধ্যার পর নগরের বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ব্যানারে খণ্ড খণ্ড মিছিল হয়েছিল। খানজাহান আলী থানার বাদামতলা এলাকায় মিছিল করার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় চারজনকে পুলিশ আটক করে বলে দাবি খুলনা মহানগর বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্যসচিব মিজানুর রহমানের। হরতাল প্রতিহত করতে নগরে আওয়ামী লীগের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। পুলিশের তৎপরতাও চোখে পড়েনি।

আজ সকাল নয়টার দিকে সোনাডাঙ্গা আন্তজেলা বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় সব কোম্পানির পরিবহনই খুলনা থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে। তবে সেটা শুধু পদ্মা সেতু হয়ে। ঢাকার পথে যশোর বা মাগুরা হয়ে যেসব পরিবহন চলাচল করে, তা বন্ধ আছে। এমনকি খুলনা-কুষ্টিয়া রুটের বাস যাচ্ছে শুধু যশোর পর্যন্ত। অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন রুটে বাস চলাচল করছে স্বাভাবিকভাবেই। আগে হরতাল বা অবরোধের সময় যেমন যাত্রীর খরা ছিল, আজ তেমনটা দেখা যায়নি। অভ্যন্তরীণ রুটের পরিবহনশ্রমিকেরাও বলছেন, আজ তুলনামূলক বেশি যাত্রী পাচ্ছেন তাঁরা।

খুলনা-মোংলা রুটের কাউন্টার মাস্টার মো. ইব্রাহিম বলেন, ‘মানুষ আর কত দিন ভয়ে ঘরে বসে থাকবে? আজ বেশ যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে, তবে একেবারে স্বাভাবিক সময়ের মতো নয়।’

খুলনা থেকে ঢাকাগামী টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস পরিবহনের সোনাডাঙ্গা কাউন্টারের আমিনুল ইসলাম বলেন, হরতাল বা অবরোধ না থাকলে মানুষ চলাচল করতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। কিন্তু এমন রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে নিরাপত্তার স্বার্থে ঘর থেকে কম বের হচ্ছেন। দূরপাল্লার পরিবহন চলাচল করছে, তবে যাত্রীর খরা কাটছে না।

খুলনা থেকে কুষ্টিয়াগামী বাসের কাউন্টারের সামনে থাকা পরিবহনশ্রমিক ইমরান হোসেন বলেন, খুলনা থেকে কুষ্টিয়ার দিকে যাত্রী যে একেবারে হচ্ছে না তা নয়, তবে দূরত্ব বেশি হওয়ার কারণে একটানা কেউ কুষ্টিয়া পর্যন্ত যেতে সাহস করছেন না। এ কারণে খুলনা থেকে যশোর পর্যন্ত বাস যাচ্ছে। আবার যশোর থেকে যাচ্ছে কুষ্টিয়ার দিকে। আগে একেবারে বন্ধ থাকলেও এ সপ্তাহের অবরোধের মধ্যে তাঁরা এভাবে গাড়ি চালাচ্ছেন।

খুলনা রেলওয়ে স্টেশনের সহকারী স্টেশনমাস্টার জয়ব্রত সাহা বলেন, সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে খুলনা থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে ছেড়ে গেছে কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস ট্রেন। সাড়ে ছয়টার দিকে বেনাপোলের দিকে ছেড়ে গেছে কমিউটার ট্রেন। সাতটার দিকে রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেনটি চিলাহাটির উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। পরে নয়টার দিকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেন।

বিআইডব্লিউটিএ খুলনার উপপরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, খুলনা থেকে দুটি রুটে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করে। সূচি অনুযায়ী সকাল নয়টায় একটি লঞ্চ সাতক্ষীরার নীলডুমুরের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। সাড়ে ১০টার দিকে কয়রার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে আরও একটি লঞ্চ।