আন্দোলনের যৌক্তিকতা বোঝাতে বিভিন্ন বিভাগে যাচ্ছেন চবির চারুকলার শিক্ষার্থীরা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিভাগে যাচ্ছেন।
ছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা তাঁদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা বোঝাতে বিভিন্ন বিভাগে যাচ্ছেন। আন্দোলনে এসব বিভাগের শিক্ষার্থীদের সমর্থন চাইছেন তাঁরা।

চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের দাবিতে তিন মাসের বেশি সময় ধরে আন্দোলন করছেন ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজ মঙ্গলবার তাঁরা বিভিন্ন বিভাগে যান।

আগামী বৃহস্পতিবার এই আন্দোলনের ১০০তম দিন পূর্ণ হবে। সে দিন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মূল ক্যাম্পাসে বড় জমায়েত করতে চান। এই লক্ষ্যে তাঁরা এখন কাজ করেছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে মূল ক্যাম্পাসে অবস্থিত সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ভবনে যান। প্রথমে তাঁরা অনুষদভুক্ত লোকপ্রশাসন বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের শ্রেণিকক্ষে যান। বিভাগটির শিক্ষার্থীদের কাছে তাঁরা তাঁদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। পরে তাঁরা একে একে রাজনীতি বিজ্ঞান, সমাজতত্ত্ব, নৃবিজ্ঞান, উন্নয়ন অধ্যয়ন, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতাসহ অনুষদের সব বিভাগের যান।

৫ ফেব্রুয়ারি থেকে মূল ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছেন। মূল ক্যাম্পাসে আজ তাঁদের তৃতীয় দিনের কর্মসূচি চলছে।

ইনস্টিটিউটের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সৌরভ মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, ৯ ফেব্রুয়ারি তাঁদের আন্দোলনের ১০০তম দিন পূর্ণ হবে। সেদিন সকাল ১০টায় তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় জমায়েত করার পরিকল্পনা করছেন। এতে সব বিভাগের শিক্ষার্থীদের একত্রিত করতে চান তাঁরা। তাই তাঁরা বিভিন্ন বিভাগে যাচ্ছেন। তাঁদের আন্দোলন কেন যৌক্তিক, কেন তাঁরা মূল ক্যাম্পাসে আসতে চান, তা সবাইকে বোঝাচ্ছেন।

ইনস্টিটিউটের একই বর্ষের শিক্ষার্থী তানজিনা ইয়াসমিন প্রথম আলোকে বলেন, চারুকলার শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন শ জন। তাঁরা অনেক দিন ধরে আন্দোলন করছেন। কিন্তু ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী কম হওয়ায় তাঁদের দাবি আমলে নিচ্ছে না প্রশাসন। তাই তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কটি বিভাগের শিক্ষার্থীদের পাশে চান। এই লক্ষ্য আজ ও কাল বুধবার তাঁরা কাজ করবেন।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে ২ ফেব্রুয়ারি বিকেলে চারুকলায় সশরীরে শ্রেণি কার্যক্রম এক মাসের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের চারুকলা ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। ভবন সংস্কারের কথা বলে কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্ত নেয়।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, ইনস্টিটিউটে নিষেধাজ্ঞার কারণে তাঁরা মূল ক্যাম্পাসে অবস্থান নিতে বাধ্য হয়েছেন। দাবি না মানা পর্যন্ত তাঁরা মূল ক্যাম্পাসেই বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবেন।

শ্রেণিকক্ষে পলেস্তারা খসে পড়ার জেরে ২২ দফা দাবিতে চারুকলার শিক্ষার্থীরা গত ২ নভেম্বর ক্লাস বর্জনসহ অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছিলেন। একপর্যায়ে চারুকলাকে নগর থেকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নিতে এক দফা দাবি দেন তাঁরা।

প্রশাসন দাবি না মানায় ১৬ নভেম্বর চারুকলার মূল ফটকে শিক্ষার্থীরা তালা ঝুলিয়ে দেন। সেদিন থেকে অচল হয়ে হয়ে পড়ে চারুকলার কার্যক্রম।

কর্তৃপক্ষকে সাত দিনের সময় বেঁধে দিয়ে শর্ত সাপেক্ষে ২৩ জানুয়ারি থেকে ক্লাসে ফিরেছিলেন শিক্ষার্থীরা। ৩১ জানুয়ারি থেকে তাঁরা আবার অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন। একই দিন শিক্ষার্থীদের একটি পক্ষ ক্লাসে ফেরার দাবি জানায়। ১ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে চারুকলায় তল্লাশি চালায় পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডি।

চবিতে চারুকলা বিভাগের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭০ সালে। ২০১০ সালে নগরের সরকারি চারুকলা কলেজের সঙ্গে এক হয়ে গঠিত হয় চারুকলা ইনস্টিটিউট। চারুকলার অবস্থান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে নগরের মেহেদীবাগের বাদশা মিয়া সড়কে। বর্তমানে ইনস্টিটিউটে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৫৩ জন।