মানিকগঞ্জ সদরের দশানী
হতে হতে হচ্ছে না সেতু, নিত্য ভোগান্তি মানুষের
ধলেশ্বরী নদীর ওপর সেতু নির্মাণে ২০১৯ সালে মাটি পরীক্ষা করা হয়। সেতু নির্মাণে সমীক্ষা হয়েছে গত জুনে।
সেতু না থাকায় মানুষকে ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার হতে হয় খেয়ানৌকায়।
স্কুল-কলেজে যাওয়া-আসার সময় বিপাকে পড়তে হয় শিক্ষার্থীদেরও।
ধলেশ্বরী নদীর ওপর দীর্ঘদিন ধরে একটি সেতুর দাবি জানিয়ে আসছেন মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার দশানী এলাকার বাসিন্দারা। এ পরিপ্রেক্ষিতে সেতু নির্মাণের উদ্যোগও নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি)। প্রায় তিন বছর আগে পরীক্ষা করা হয় মাটি। তবে এত দিনেও সেতু নির্মিত হয়নি। এতে প্রতিদিনই ভুগতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে।
উপজেলার বাসুদেবপুর গ্রামের যুবক ফারুক হোসেন কাঁচা মালের ব্যবসা করেন। এই পথে নিয়মিত যোগাযোগ করতে হয় তাঁকে। ফারুক বলেন, বাসুদেবপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন গ্রামে প্রচুর সবজির আবাদ হয়ে থাকে। সেতুর অভাবে এসব সবজি বাজারে নিতে প্রতিদিন বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। এ ছাড়া বাড়তি পরিবহন ব্যয়ও লাগছে।
গত শনিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের দশানী এলাকায় ধলেশ্বরী নদীতে সেতু না থাকায় প্রতিনিয়ত মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এবং পকেটের টাকা খরচ করে ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার হতে হয় খেয়ানৌকায়।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মানিকগঞ্জ শহর থেকে জেলার পূর্বাঞ্চলে যাতায়াতের স্বল্প ও সহজতর পথ হচ্ছে কলির মেড়া-বাসুদেবপুর সড়ক। এই সড়ক হয়ে প্রতিদিন জেলা সদরের কৃষ্ণপুর, আটিগ্রাম এবং সিঙ্গাইরের বায়রা ইউনিয়নের অন্তত ৩০ হাজার মানুষ যাতায়াত করে থাকে। জেলা সদর থেকে বাসুদেবপুর হয়ে দশানী খেয়াঘাট পর্যন্ত পাকা সড়ক। দলেশ্বরী মৃতপ্রায় হয়ে পড়েছিল। কিন্তু কয়েক বছর আগে খননের পর দশানী এলাকায় বেশ পানি থাকে। এমনকি শুষ্ক মৌসুমেও পানি থাকে।
নদীর পূর্ব-দক্ষিণ পাশে রাজীবপুর এলাকায় রাজীবপুর আদর্শ ডিগ্রি কলেজ, রাজীবপুর বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় রয়েছে। রাজীবপুরে প্রতিদিন সকালে বড় বাজার বসে। এ ছাড়া প্রতি বৃহস্পতিবার বসে সাপ্তাহিক হাট।
নদীর পশ্চিম ও উত্তর পাশে বাসুদেবপুর, মকিমপুর, দিয়ারা ভবানীপুর, গ্যাঁড়াকুল গ্রাম। এসব গ্রামের মানুষকে প্রতিনিয়ত খেয়ানৌকায় নদী পার হয়ে অপর প্রান্তে যেতে হয়। এ ছাড়া এসব গ্রামে বিভিন্ন সবজির প্রচুর আবাদ হয়ে থাকে। কৃষকদের উৎপাদিত এসব সবজি ও কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে হয়। সেতু না থাকায় তাঁদের চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে। পথচারী ও যাত্রীরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এ ছাড়া স্কুল-কলেজে যাওয়া-আসার সময় বিপাকে পড়তে হয় শিক্ষার্থীদেরও।
কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বিপ্লব হোসেন বলেন, সেতু নির্মিত হলে আশপাশের এলাকার আর্থসামাজিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন হবে।
সদর উপজেলা এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, এলাকাবাসীর যাতায়াত এবং পণ্য পরিবহনে সুবিধার্থে দশানী এলাকায় ধলেশ্বরী নদীর ওপর সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। ২০১৯ সালে সেখানকার মাটিও পরীক্ষা করা হয়। পরবর্তী সময়ে এ বছরের জুন মাসে সেতু নির্মাণে সমীক্ষা করা হয়। সেতুর প্রয়োজনীয়তা এবং অর্থনৈতিক জরিপ (ইকোনমিক সার্ভে) করতে দশানী এলাকা পরিদর্শনে যান এলজিইডির প্রকল্প পরিচালকও। এসব তথ্য তুলে ধরে সদর উপজেলা প্রকৌশলী জাহিদুর রহমান বলেন, সেখানে সেতু নির্মাণে প্রাথমিক কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। এখনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। বরাদ্দ পেলেই সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হবে।