মুরগির খামারে ঝগড়ার জেরে কলেজছাত্র সিবলিকে অপহরণ করে গলা কেটে হত্যা করেন শ্রমিকেরা
চট্টগ্রামের রাউজানে কলেজছাত্র ও একটি মুরগির খামারের তত্ত্বাবধায়ক সিবলি সাদিক (১৯) হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ওই খামারের দুই শ্রমিক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাহরিয়ার ইকবাল ও নুরুল হারুনের আদালতে জবানবন্দি দেন তাঁরা।
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়া ওই দুই আসামি হলেন সুইচিংমং মারমা (২৪) ও অংথুইমং মারমা (২৫)। চট্টগ্রাম সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৃতীয় আদালতের বিচারক শাহরিয়ার ইকবাল সুইচিংমংয়ের এবং ষষ্ঠ আদালতের বিচারক নুরুল হারুন অংথুইমংয়ের জবানবন্দি গ্রহণ করেন। আসামি সুইচিংমং মারমা রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার বড়ইছড়ির বাসিন্দা এবং অংথুইমং মারমা রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার বাসিন্দা।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল হারুন প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। জবানবন্দির বরাত দিয়ে ওসি জানান, গত ২৮ আগস্ট গভীর রাতে সিবলিকে খামার থেকে অপহরণ করা হয়। এরপর তাঁকে আট কিলোমিটার দূরে গহিন পাহাড়ের জঙ্গলে নিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পরিবারের সদস্যদের ফোন করে চাওয়া হয় মুক্তিপণ। ২৯ আগস্ট তাঁকে সেই পাহাড়ে গলা কেটে করে হত্যা করে মাংস আলাদা করে ফেলা হয়। হাড়গোড় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দিয়ে তাঁরা ফিরে আসেন খামারে। এর মধ্যে অপহরণের ঘটনা জানাজানি হলে ২৯ আগস্ট খামার থেকে পালিয়ে যান ওই শ্রমিকেরা। পরে ৩১ আগস্ট আবার চাওয়া হয় মুক্তিপণ। এরপর ২ সেপ্টেম্বর সিবলির বাবা বান্দরবানে গিয়ে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ তুলে দেন দুই ব্যক্তির হাতে। তবে ফিরে পাননি ছেলেকে। কারণ, আগেই সিবলিকে মেরে ফেলেন আসামিরা।
দুই আসামি জবানবন্দিতে জানান, মাসখানেক আগে খামারের কাজ নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সিবলির সঙ্গে পাঁচ-সাতজন শ্রমিকের বাগ্বিতণ্ডা হয়। এর পর থেকে সিবলির ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন ওই শ্রমিকেরা। তবে এ ঝগড়ার মীমাংসা করে দিয়েছিলেন খামারের মালিকেরা। কিন্তু ভেতরে-ভেতরে এর ক্ষোভ রয়ে গিয়েছিল শ্রমিকদের মধ্যে। তাঁরা পরিকল্পনা করতে থাকেন, সিবলিকে শায়েস্তা করবেন। এই ক্ষোভ থেকে তাঁরা ২৯ আগস্ট ওই সিবলি গহিন পাহাড়ে নিয়ে গলা কেটে হত্যার পর লাশ টুকরা টুকরা করে ফেলে পালিয়ে যান।
জবানবন্দি থেকে জানা যায়, এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী মামলার প্রধান আসামি উমংচিং মারমা (২৬)। তাঁকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ গত সোমবার পাহাড় থেকে সিবলির লাশের দেহাবশেষ নিয়ে ফেরার পথে বিক্ষুব্ধ জনতা উমংচিংকে ছিনিয়ে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন।
রাউজান থানার ওসি আবদুল্লাহ আল হারুন প্রথম আলোকে বলেন, জবানবন্দি দেওয়া দুই আসামিকে রোববার রাতে নগরীর চান্দগাঁও থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। নিহত আসামি উমংচিং মারমাকে তাঁদের সঙ্গেই গ্রেপ্তার করা হয়। সোমবার উমংচিং মারমাকে নিয়ে তাঁর দেওয়া তথ্যমতে গহিন পাহাড়ে অভিযানে গিয়ে সিবলির দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়। ওসি বলেন, এ ঘটনায় আরও কয়েকজন জড়িত থাকার তথ্য দিয়েছেন গ্রেপ্তার আসামিরা। তাঁদেরও গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
এদিকে আজ বিকেলে ওই খামারে গিয়ে চার কর্মীকে কাজ করতে দেখা যায়। তাঁরা জানান, খামারটিতে ১০ হাজার মুরগি আছে। এটি মূলত ডিমের খামার। এই খামারের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে পড়ালেখার পাশাপাশি কাজ করতেন সিবলি। খামারটির মালিক স্থানীয় কদলপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন আহমেদ, ইউপি সদস্য সাহাবুদ্দিনসহ মোট চারজন।
নিহত সিবলি রাউজান উপজেলার কদলপুর ইউনিয়নের পঞ্চপাড়া গ্রামের মুহাম্মদ শফির ছেলে। পিকআপ ভ্যানের চালক শফির দুই ছেলের মধ্যে বড় তিনি।