রাজশাহীসহ তিন জেলা থেকে দূরপাল্লার বাস বন্ধ, যাত্রীদের চরম ভোগান্তি

দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। শুক্রবার সকালে রাজশাহীর শিরোইল বাস টার্মিনালেছবি: প্রথম আলো

উত্তরাঞ্চলের তিন জেলা রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নাটোর থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে এ অঞ্চলের বাসমালিক পক্ষ হঠাৎ বাস চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেয়। ২০ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও বাস চলাচল স্বাভাবিক না হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া যাত্রীরা বাধ্য হয়ে বিভিন্ন যানবাহনে ভেঙে ভেঙে গন্তব্যে যাচ্ছেন। এতে তাঁদের অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে এবং সময়ও লাগছে বেশি।

আজ শুক্রবার সকালে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেওয়া পবার দামকুড়ার কামাল হোসেন বাস বন্ধ পেয়ে বিপাকে পড়েন। পরে তিনি প্রথমে বানেশ্বর, সেখান থেকে নাটোর, এরপর সিরাজগঞ্জ হয়ে ঢাকায় পৌঁছান। মুঠোফোনে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘সকালে বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখি সব বন্ধ। পরে বাঘা থেকে একটি লোকাল বাসে করে পুঠিয়ার বানেশ্বর নামি। সেখান থেকে সিএনজি নিয়ে নাটোরে, এরপর একটি লোকাল বাসে সিরাজগঞ্জ যাই। এরপর রংপুর থেকে আসা একটি বাসে করে ঢাকায় পৌঁছাই।’
কামাল জানান, সাধারণত তাঁর ৭০০ টাকা ভাড়া লাগলেও আজ লেগেছে ১ হাজার ২০০ টাকা। সারা দিন অনেক ভোগান্তি গেছে, সময়ও লেগেছে অনেক বেশি।

কামালের মতো আরও অনেক যাত্রী এই বাস ধর্মঘটের কারণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। শুক্রবার বিকেলে রায়হান হোসেন নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা হয়। তাঁরও আজ ঢাকায় যাওয়া জরুরি। বাস বন্ধ জেনেও তিনি বাসস্ট্যান্ডে এসেছিলেন। রায়হান বলেন, ‘শুনেছিলাম, বিকেলের মধ্যে বাস চালু হবে, কিন্তু এসে দেখি চালু হচ্ছে না। এখন একটা প্রাইভেট গাড়ি খুঁজছি, কয়েকজন মিলে ভাড়া করে যাব।’

বাসমালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে একতা ট্রান্সপোর্ট ও কয়েকটি লোকাল বাস ছাড়া অন্য সব দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধ রয়েছে। এর আগে ৭ সেপ্টেম্বর বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকেরা তিন জেলা থেকে দূরপাল্লার বাস চালানো বন্ধ করে দিয়েছিলেন। দুই দিন পর মালিকপক্ষের আশ্বাসে তাঁরা বাস চলাচল শুরু করলেও আশানুরূপ বেতন-ভাতা বৃদ্ধি না হওয়ায় ২২ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে আবারও কর্মবিরতি শুরু করেন। ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল পর্যন্ত একতা ছাড়া বাকি সব বাস বন্ধ ছিল। এবার অবশ্য মালিকদের পক্ষ থেকে বাস চলাচল বন্ধ করা হয়েছে, যা ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কক্সবাজারসহ দূরপাল্লার যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে ফেলেছে।

জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া যাত্রীরা বিভিন্ন যানবাহনে ভেঙে ভেঙে গন্তব্যে যাচ্ছেন। শুক্রবার সকালে  রাজশাহীর শিরোইল বাস টার্মিনালে
ছবি: প্রথম আলো

উত্তরবঙ্গ বাস মালিক সমিতির মহাসচিব নজরুল ইসলাম (হেলাল) বলেন, গাড়ির চালকেরা আগে ১ হাজার ২৫০ টাকা পেতেন। এখন তাঁদের পারিশ্রমিক ৫০০ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার ৭৫০ টাকা করা হয়েছে। একইভাবে সব পর্যায়ের শ্রমিকদের পারিশ্রমিক ৫০০, ৩০০, ২০০ টাকা করে বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ ছাড়া ৩০ জন যাত্রীর বিপরীতে একজন এবং ৪০ জন যাত্রীর বিপরীতে দুজন যাত্রীর ভাড়ার টাকা শ্রমিকেরা পাবেন। শ্রমিকদের সব দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। তবে খোরাকির টাকা নিয়ে মালিকপক্ষের কিছুটা আপত্তি রয়েছে, যা ধর্মঘটের সূত্রপাত।

নজরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আজ রাতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি কফিল উদ্দিনের সঙ্গে আমাদের মালিকদের বসার কথা রয়েছে। এ জন্য সব মালিক ঢাকায় উপস্থিত হয়েছেন। তিনি মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে বসে সবকিছু ঠিক করে দেবেন। এটি আজ রাতেও সমাধান হয়ে যেতে পারে।’

বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বজলুর রহমান বলেন, শ্রমিকদের দাবিদাওয়ার ব্যাপারে গত মঙ্গলবার ঢাকায় তাঁদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছিল। তাঁদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সভায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। সভা সুন্দরভাবেই শেষ হয় এবং এরপর বাস চলাচলও শুরু হয়।

বজলুর রহমান আরও বলেন, ‘এখন শ্রমিকেরা দূরপাল্লার বাস যেখানে–সেখানে থামিয়ে যাত্রী তুলতে চাইছেন এবং খোরাকি ভাতা দাবি করছেন। যেখানে–সেখানে বাস থামিয়ে যাত্রী তুললে তো ব্যবসা করা যাবে না। এটা নিয়ে তাঁদের সঙ্গে নতুন করে বিরোধ। তাঁরা বাস চালাবেন না বলেছেন। আমরাও বলেছি, ঠিক আছে, এভাবে বাস চালাতে চাই না। কত দিন বসে থাকবে থাকুক।’

রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আগে চালকদের আপ–ডাউনে পারিশ্রমিক ছিল মাত্র ১ হাজার ২৫০ টাকা। এখন এটি বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু মালিকপক্ষ ওই টাকা দিতে চাইছেন না। এটি নিয়েই মালিকপক্ষ বাস ধর্মঘট ডেকেছে। এতে আমাদের কোনো হাত নেই।’