বাঁধে ভাঙন, হুমকিতে ৪৮ গ্রাম

বড়দল ইউনিয়নের কেয়ারগাতি গ্রামে বাঁধের ৩০০ মিটারে ভাঙন দেখা দিয়েছে। দ্রুত সংস্কার না করলে ওই অংশ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হবে।

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বড়দল ইউনিয়নে তিন নদীর মোহনায় কেয়ারগাতি খেয়াঘাট এলাকায় বাঁধ ধসে পড়েছে। গত বুধবার বেলা তিনটার দিকে তোলা ছবি
ছবি: প্রথম আলো

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বড়দল ইউনিয়নে তিন নদীর মোহনায় কেয়ারগাতি খেয়াঘাট এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধে ভয়াবহ ফাটল ও ধস দেখা দিয়েছে। এখনই যথাযথ ব্যবস্থ না নিলে যেকোনো মুহূর্তে বাঁধ ভেঙে ৩টি ইউনিয়নের ৪৮টি গ্রাম প্লাবিত হতে পারে।

স্থানীয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বড়দল ইউনিয়নের খোলপেটুয়া, মরিচ্চাপ ও বেতনা নদীর মোহনার কেয়ারগাড়ি খেয়াঘাট এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৭/২ নং পোল্ডারের বাঁধের ৩০০ মিটারে দীর্ঘদিন ধরে ভাঙন চলছে। কয়েকবার বাঁধ রক্ষায় কাজ করা হয়েছে। কিন্তু যথাযথভাবে সংস্কারকাজ না হওয়ায় কয়েক দিন যেতে না যেতেই আবার একই অবস্থার সৃষ্টি হয়। সামান্য জলোচ্ছ্বাস ও ঝড়বৃষ্টি হলে বাঁধের বিভিন্ন স্থান ধসে পড়ে।

কেয়ারগাতি গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল সানা ও মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলাম জানান, কেয়ারগাতি খেয়াঘাট এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধে প্রবল ভাঙন শুরু হয়েছে। যেকোনো সময় তাঁদের বাড়িসহ ৩০টি পরিবারের বসতভিটা নদীতে চলে যেতে পারে। একসঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহিম ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আজিজ সানার কবরও হুমকির মধ্যে রয়েছে।

কেয়ারগাতি গ্রামের রহমান সানা জানান, কয়েক বছর ধরে তাঁদের এলাকায় নদীভাঙন চলছে। পাউবো এখানকার ভাঙনের ব্যাপারে গুরুত্ব দেয় না। প্রতিবছর লোকদেখানো কাজ হয়। কিন্তু তাতে এলাকার মানুষের আতঙ্ক কমে না। এভাবে বছরের পর বছর তাঁদের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করতে হয়।

বড়দল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জগদীশ সানা জানান, তিন নদীর মোহনা কেয়ারগাতি এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ভাঙন চলছে। ২০২১ সালে তিনি কয়েক লাখ টাকা ব্যয় করে তিনি ওই এলাকার ভাঙনকবলিত এলাকা সংস্কার করেছিলেন। ২০২২ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ডও কিছুট সংস্কার করেছিলেন। কয়েক দিন যেতে না যেতেই আবার ভাঙন শুরু হয়। বর্তমানে ভাঙন এক হাজার ফুট ছাড়িয়ে গেছে। যেকোনো সময়ে ওই স্থান থেকে ভেঙে বড়দল ইউনিয়নের কেয়ারগাতি, জামালনগর, ডুমুরপোতা, গোয়ালডাঙ্গা, বামুনডাঙ্গাসহ ইউপির ২৪ গ্রাম ছাড়াও আনুলিয়া ও খাজরা ইউনিয়নের আরও ২৪ গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জগদীশ সানা আরও বলেন, বড়দল ইউনিয়নে ফসলি জমি বেশি। বর্তমানে সব জমিতে আমন ধান রোপণ করা হয়েছে। বাঁধের ভাঙনকবলিত এলাকা সংস্কারের জন্য বারবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের বলেও ফল হচ্ছে না। তাঁরা তাঁদের ইচ্ছেমতো সংস্কারকাজ করেন। তিনি ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে জানতে পারেন না। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার করার দাবি জানিয়ে বলেন, দ্রুত সময়ে সংস্কার করা না হলে বড়দল, আনুলিয়া ও খাজরা তিন ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

পাউবোর বটতলা কার্যালয়ে কর্মরত উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মতিন খসরু জানান, হঠাৎ ভাঙন প্রবল আকার ধারণ করেছে। ৯০০-১০০০ ফুট এলাকাজুড়ে ভাঙন চলছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ফ ম রুহুলকে জানানো হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-২–এর সাতক্ষীরা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশিকুর রহমান বলেন, তিনি এ বিষয়ে গত বুধবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন।