বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে নারী শিক্ষককে হেনস্তার অভিযোগ

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) একটি ভবনের সংস্কার ও উন্নয়নকাজ পরিদর্শনে গিয়ে পিএইচডি কোর্সের শিক্ষার্থীদের হাতে এক নারী শিক্ষক হেনস্তা হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার বিচার দাবি করে গতকাল বৃহস্পতিবার উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, ছাত্রবিষয়ক বিভাগ, প্রক্টরের কার্যালয় ও শিক্ষক সমিতির সভাপতির কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই শিক্ষক।

অভিযোগকারী ওই শিক্ষকের নাম পূর্বা ইসলাম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ও পরমাণুবিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া পিএইচডি ডরমিটরি নামের ভবনটির সংস্কার ও উন্নয়নকাজ সংক্রান্ত তদারক কমিটির সদস্য।

লিখিত অভিযোগে পূর্বা ইসলাম উল্লেখ করেছেন, ‘পিএইচডি ডরমিটরি ভবনের সংস্কার ও উন্নয়নকাজের তদারক কমিটির সদস্য হিসেবে গত বুধবার বেলা ১১টার পরে আমি সেখানে যাই। ওই সময় আমার সঙ্গে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ বিভাগ) তৌহিদুল ইসলাম ও জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ বিভাগ) ফারুক আহমেদও ছিলেন। আমাদের কাজ চলাকালে পিএইচডি শিক্ষার্থী অমিত কুমার বসুনিয়া, শুভশ্রী সরকার ও রেহানা খাতুন সেখানে উপস্থিত হন। আমাদের দেখেই তাঁরা আক্রমণাত্মকভাবে কথা বলতে শুরু করেন এবং তদারকির কাজে বাধা দেন। তাঁরা (শিক্ষার্থীরা) বারবার অভিযোগ করেন, তদারক কমিটি কাজ শেষ না করার কারণে নিচতলা থেকে দ্বিতীয় তলায় তাঁদের আবাসন স্থানান্তর করা হচ্ছে না। এমতাবস্থায় আমি তাঁদের একাধিকবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে শিক্ষার্থীদের আবাসন স্থানান্তরের সঙ্গে তদারক কমিটির কোনো সম্পর্ক নেই।’

শিক্ষার্থীরা আপত্তিকর কথাবার্তা চালিয়ে যেতে থাকলে আমরা কর্মস্থল ত্যাগ করে চলে আসতে থাকি। ওই সময় পিএইচডি শিক্ষার্থী রেহানা আমাকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করেন। ওই দিন বিকেলে গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের আলোচনা সভায় আমি অংশ নিই। সেখানেও ওই শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হন।
পূর্বা ইসলাম, অভিযোগকারী শিক্ষক

লিখিত অভিযোগে পূর্বা ইসলাম আরও বলেন, ‘ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রকৌশলী তৌহিদুল ইসলাম দ্রুত কাজ শেষ করার আশ্বাস দিতে থাকেন ওই শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীরা আপত্তিকর কথাবার্তা চালিয়ে যেতে থাকলে আমরা কর্মস্থল ত্যাগ করে চলে আসতে থাকি। ওই সময় পিএইচডি শিক্ষার্থী রেহানা আমাকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করেন। ওই দিন বিকেলে গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের আলোচনা সভায় আমি অংশ নিই। সেখানেও ওই শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হন। সভা শেষ করে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা আমার দিকে তেড়ে আসতে থাকেন। পরে সেখানে উপস্থিত শিক্ষকেরা তাঁদের বাধা দেন।’

এ ব্যাপারে কথা বলতে আমি বাধ্য নই। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন একজন অধ্যাপক। বিষয়টি সম্পর্কে আবার আমাকেই জিজ্ঞাসা করার মাধ্যমে ওই শিক্ষককে অসম্মান করা হয়। একজন অধ্যাপক যখন অভিযোগ দিয়েছেন, তখন অবশ্যই জেনেবুঝেই দিয়েছেন।
অভিযুক্ত শিক্ষার্থী রেহানা সুলতানা

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে পিএইচডি ডরমিটরি স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অমিত কুমার বসুনিয়া বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর সবটা অসত্য ও বানোয়াট। কথাকে জড়িয়ে কথা বলার অভ্যাস যাঁদের থাকে, তাঁরা এ ধরনের কথা বলতে পারেন। অধ্যাপক পূর্বা আমারও শিক্ষক। একজন শিক্ষকের সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হয়, এতটুকু আমি জানি। এখানে হয়তো কিছু ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছে।’


শিক্ষককে শারীরিক হেনস্তা করার বিষয়ে রেহানা সুলতানা বলেন, ‘এ ব্যাপারে কথা বলতে আমি বাধ্য নই। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন একজন অধ্যাপক। বিষয়টি সম্পর্কে আবার আমাকেই জিজ্ঞাসা করার মাধ্যমে ওই শিক্ষককে অসম্মান করা হয়। একজন অধ্যাপক যখন অভিযোগ দিয়েছেন, তখন অবশ্যই জেনেবুঝেই দিয়েছেন।’

এ ঘটনায় ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য এমদাদুল হক চৌধুরী।

আরও পড়ুন