পশুর হাটে বেশি হাসিল নেওয়ায় আদায়কারীর কারাদণ্ড, প্রতিবাদে মানববন্ধন

গবাদিপশুর হাটে অতিরিক্ত হাসিল নেওয়ার অভিযোগে আদায়কারীকে কারাদণ্ড দেওয়ার প্রতিবাদে স্থানীয়দের মানববন্ধন। আজ রোববার দুপুরে ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলা পরিষদের সামনেছবি: প্রথম আলো

ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার কাতিহার হাটে গবাদিপশু কেনাবেচায় অতিরিক্ত হাসিল (কর) আদায়ের অভিযোগে ইজারাদারের এক কর্মচারীকে কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। তবে ইজারাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে কর্মচারীকে শাস্তি দেওয়ার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় লোকজন। আজ রোববার দুপুরে উপজেলা পরিষদের সামনে এই মানববন্ধনের আয়োজন হয়।

রানীশংকৈল উপজেলার কাতিহার হাট পশু কেনাবেচায় বেশ প্রসিদ্ধ। সপ্তাহের প্রতি শনিবার এখানে হাট বসে। দীর্ঘদিন এই হাটে পশু কেনাবেচায় অতিরিক্ত ও নিয়মের বাইরে হাসিল নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গবাদিপশুসহ ১২৫ ধরনের দ্রব্য বেচাকেনার জন্য হাসিল নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে প্রতিটি গরু ও মহিষ সর্বোচ্চ ২৩০ টাকা, প্রতিটি ছাগল ও ভেড়ার জন্য ৯০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। তবে দীর্ঘদিন এই হাটের ইজারাদার গরুর জন্য ৫০০ ও প্রতিটি ছাগলের জন্য ১৮০ টাকা করে টোল আদায় করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিষয়টি নজরে পড়লে ১ জুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রকিবুল হাসান ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ইজারাদারকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেন। পাশাপাশি ইজারাদারকে সতর্ক করে দেওয়া হয়। কিন্তু এরপরও অতিরিক্ত হাসিল আদায়ের অভিযোগ পেয়ে গতকাল শনিবার কাতিহারহাটে যান রানীশংকৈলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আর্নিকা আক্তার। সেখানে গিয়ে তিনি অভিযোগের সত্যতা পান। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে রানীশংকৈলের রাজোর এলাকার মোস্তফা কামাল নামের ইজারাদারের এক কর্মচারীকে সাত দিনের কারাদণ্ড দেন তিনি।

এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ দুপুরে উপজেলা পরিষদের ফটকের সামনে মানববন্ধন করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। মানববন্ধন থেকে উপজেলার হাটগুলোতে সরকার নির্ধারিত হাসিলের অতিরিক্ত টাকা আদায় বন্ধ ও ইজারাদারকে শাস্তির আওতায় না এনে তাঁর কর্মচারীকে কারাদণ্ড দেওয়ায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) আর্নিকা আক্তারকে প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।

মানববন্ধনে বক্তব্য দেন রানীশংকৈল উপজেলার বাচোর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য উমের আলী, স্থানীয় বাসিন্দা উজ্জ্বল বর্মন, প্রসেনজিৎ দাস, রেজওয়ানুল হক, মোসাদ্দেক হোসেন, বিশ্বজিৎ কুমার প্রমুখ।

ইউপি সদস্য উমের আলী বলেন, ‘আমার ভাতিজা ইজারাদারের অধীন হাটে হাসিল আদায়ের কাজ করে। বিনিময়ে ৫০০ টাকা পায়। হাটে পশুর টোল অতিরিক্ত নেওয়ায় প্রশাসন তাকে জেল দিয়ে দিল। কিন্তু যে তাকে অতিরিক্ত নেওয়ার আদেশ দিলেন, তাঁর কিছুই করলেন না। এটা তাঁর প্রতি অবিচার করা হয়েছে। এ অবিচার মেনে নেওয়া যায় না।’

এ বিষয়ে কাতিহার হাটের ইজারাদার সানোয়ার হোসেন বলেন, জেলার হাটবাজারে টোলের হার ২০১৯ সালে নির্ধারণ করা হয়েছে। তাঁরা সেটা বাড়ানোর আবেদন করেছেন। এখন অন্য সব হাটে যে হারে হাসিল আদায় করা হচ্ছে, এখানেও সেটাই নেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আর্নিকা আক্তারের মুঠোফোনে ফোন দিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রকিবুল হাসান বলেন, সপ্তাহখানেক আগে ওই হাটে অভিযান চালিয়ে ইজারাদারকে জরিমানা করা হয়। গতকাল একই অভিযোগে অভিযান পরিচালনার সময় সেখানে ইজারাদার ছিলেন না, যে অতিরিক্ত টোল আদায় করছিলেন, তাঁকেই কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এরপর ইজারাদারের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ পেলে তাঁকেও আইনের আওতায় আনা হবে।