বগুড়ার ধুনট উপজেলায় আম কুড়াতে বের হয়ে নিখোঁজ শিশুকে দলবদ্ধ ধর্ষণের পর মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার এক আসামি আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব কথা বলে। আজ শনিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে ওই আসামি বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুমাইয়া সিদ্দিকার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বগুড়া আদালতের পুলিশ পরিদর্শক অশোক কুমার সিংহ বলেন, জবানবন্দি রেকর্ড করার পর আদালত ওই আসামিকে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
এর আগে শনিবার বিকেল পাঁচটায় জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে ওই শিশুর হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনের দাবি করে বলা হয়, ধর্ষণের পর মাথায় ইটের আঘাত এবং গলায় ফাঁস দিয়ে ওই শিশুকে হত্যা করে এলাঙ্গী উচ্চবিদ্যালয়সংলগ্ন গলিতে ফেলে রাখা হয়। শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। ওই শিশু স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
শনিবার প্রেস ব্রিফিংয়ে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্নিগ্ধা আখতার দাবি করেন, ১৮ বছরের নিচে অপ্রাপ্তবয়স্ক তিনজন কিশোর শিশুটিকে ধর্ষণ করে। এরপর ইট দিয়ে মাথায় আঘাত এবং গলায় ফাঁস দিয়ে তাকে হত্যা করে। ইতিমধ্যে ধর্ষণ ও হত্যায় জড়িত সন্দেহে ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরকে পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। শুক্রবার রাতে তাকে ধুনট উপজেলা থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার কিশোরকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদানের জন্য শনিবার বগুড়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়েছে। প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুর রশিদ, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সরাফত ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকালের দিকে ধুনট থানা থেকে শিশুটির লাশ ময়নাতদন্তের জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার রাত ১০টার দিকে শিশুটির লাশ উদ্ধারের পর ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে নিজ বাড়ি থেকে এক কিশোরকে আটক করে পুলিশ। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী শনিবার সকালে আরও দুই কিশোরকে এলাঙ্গী বাজার থেকে আটক করে পুলিশ। তারা স্থানীয় একটি উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, প্রতিদিন বিকেলে ওই তিন কিশোর এলাঙ্গী বাজারের মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিসৌধে বসে মাদকদ্রব্য সেবন করত। ওই স্মৃতিসৌধের পাশে একটি আমগাছ থেকে প্রতিদিন বিকেলে আম কুড়াতে আসত ওই শিশু। প্রায় ১০ দিন আগে শিশুটিকে ধর্ষণের পরিকল্পনা করে তারা। গত বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটার দিকে শিশুটি বাড়ি থেকে ওই গাছের আম কুড়াতে আসে। এ সময় তারা শিশুটিকে আম দেওয়ার কথা বলে কৌশলে স্মৃতিসৌধের পাশে জঙ্গলের ভেতর নিয়ে মুখ বেঁধে ধর্ষণ করে। এতে প্রচুর রক্তক্ষরণ হলে শিশুটি অচেতন হয়ে পড়ে।
একপর্যায়ে ঘটনাটি প্রকাশ হওয়ার ভয়ে তারা মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করে হত্যা নিশ্চিত করার পর এলাঙ্গী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রাচীরসংলগ্ন দক্ষিণ পাশে একটি জঙ্গলের ভেতর শিশুটির লাশ ফেলে গাছের পাতা দিয়ে ঢেকে রাখে।
অনেক খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে শুক্রবার দুপুরে শিশুটির বাবা ধুনট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে স্থানীয় লোকজন জঙ্গলের ভেতর লাশ দেখে পুলিশে খবর দেন। এ ঘটনায় নিহত শিশুর বাবা বাদী হয়ে শুক্রবার রাতে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে থানায় একটি মামলা করেন।
ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল ইসলাম বলেন, আটক হওয়া কিশোরদের মধ্যে একজন প্রাথমিক তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদে শিশুটিকে ধর্ষণের পর হত্যার কথা স্বীকার করেছে। জিজ্ঞাসাবাদে ওই কিশোরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ঘটনাস্থল নির্ধারণ ও নিহত শিশুটির পায়ের জুতা উদ্ধার করা হয়েছে। এ কারণে তাকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।