বইঠা বেয়ে সংসারের হাল ধরে রেখেছেন আকলিমা

সুতাবাড়িয়া নদীতে খেয়া নৌকায় যাত্রী পারাপার করছেন বৃদ্ধা আকলিমা বেগম
ছবি: প্রথম আলো

১৯ বছর আগে স্বামী মারা যান আকলিমা বেগমের। ছোট্ট তিন মেয়ে নিয়ে অথই জলে পড়েন তিনি। বাচ্চাদের মুখে দুমুঠো খাবার তুলে দিতে অন্যের বাড়িতে কাজ করেছেন। আবার কখনো করেছেন দিনমজুরি। এভাবে এক বছর কেটে যায়।

ওই সময় স্থানীয় খেয়াঘাটের একমাত্র নৌকাটির মাঝি মারা যান। অন্য কেউ ওই খেয়া পারাপারের দায়িত্ব নিতে চাইছিলেন না। এ সময় এগিয়ে আসেন আকলিমা। হাতে তুলে নেন বইঠা। খেয়ানৌকায় শুরু করেন যাত্রী পারাপার। এভাবে খেয়া পারাপার করে দেড় যুগ ধরে সংসারের হাল ধরে রেখেছেন সংগ্রামী এই নারী।

আকলিমা বেগম পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার বকুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের দোয়ানী গ্রামের রৌনার খেয়াঘাট এলাকার মৃত ফুল খাঁর স্ত্রী। তাঁদের বাড়ির পাশে সুতাবাড়িয়া নদী। এর এক পাড়ে গলাচিপার রৌনার খেয়াঘাট। অন্য পাড়ে দশমিনা উপজেলার মীরমদন গ্রামের খেয়াঘাট।

সম্প্রতি রৌনার খেয়াঘাটে গিয়ে দেখা যায়, আকলিমা বেগম খেয়ানৌকায় যাত্রী পারাপার করছেন। বিনিময়ে যাত্রীদের একেকজন পাঁচ টাকা করে দিচ্ছেন। আবার এলাকার কেউ কেউ ভাড়ার টাকা পরে দেবেন বলে চলে যাচ্ছেন। আকলিমাও হাসিমুখে তাতে সায় দিচ্ছেন।

লতিফ সিকদার নামের স্থানীয় এক যাত্রী প্রথম আলোকে বলেন, দোয়ানী খেয়াঘাটটি সচল রেখেছেন আকলিমা বেগম। নারী হয়েও জীবিকার তাগিদে নৌকায় যাত্রী পারাপার করছেন। এলাকার লোকজনও আকলিমার সংগ্রাম ও সাহসিকতার প্রশংসা করছেন।

তাঁর বয়স পঞ্চাশের বেশি জানিয়ে আকলিমা বেগম বলেন, কৃষক স্বামী ফুল খাঁ মারা যাওয়ার পর অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। এরপর দিনমজুরি শুরু করেন। ফলে কাজের জন্য বিভিন্ন এলাকায় যেতে হতো। সন্তানদের একা ঘরে রেখে যাওয়াটা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। বাড়ির পাশের খেয়াঘাটের একমাত্র নৌকাটির মাঝি এলেম গাজী মারা যাওয়ার পর খেয়া পারাপারের মাঝি পাওয়া যাচ্ছিল না। এরপর ভেবেচিন্তে ওই খেয়াঘাটের মাঝি হতে চান তিনি। কিন্তু নিজের নৌকা না থাকায় অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েন। এরপর তাঁর ভাই আবদুল মন্নান মৃধা একটি পুরোনো নৌকা কিনে দেন।

প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ টাকা আয় হয় জানিয়ে আকলিমা বলেন, এভাবে খেয়া পারপার করে তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। বছরখানেক হলো ছোট মেয়েকে এক সন্তানসহ স্বামী তাঁর কাছে রেখে গেছেন। তাঁর মেয়ে অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। খেয়া পারাপারের আয় ও বিধবা ভাতা দিয়ে কোনো রকম সংসার চলে আকলিমার।

শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন সংগ্রামী এই নারী। এখন আর সেভাবে বইঠা চালাতে পারেন না উল্লেখ করে আকলিমা বলেন, বাকি জীবনটা ডাঙায় কাটাতে চান। তাঁকে কেউ একটি দোকানঘর করে দিলে ব্যবসা করে সংসার চালাতেন।