বরিশালে নাশতার বিল ১০ টাকা বেশি নিয়ে মারামারি, সামাল দিতে গিয়ে পুলিশ সদস্য আহত
বরিশাল নগরের তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে রেস্তোরাঁর কর্মচারী ও এক ক্রেতার মধ্যে বাগ্বিতণ্ডার জের ধরে তুলকালামকাণ্ড হয়েছে। এ ঘটনা নিয়ে ক্রেতার পক্ষের লোকজন রেস্তোরাঁটি ভাঙচুর ও সড়ক অবরোধ করেছেন। একপর্যায়ে তাঁরা বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানা ঘেরাও করেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে থানা–পুলিশের দুই সদস্য আহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বরিশাল নগরে নৌবন্দর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরিশাল নগরের নৌবন্দর–সংলগ্ন এলাকার ঘোষ মিষ্টান্ন ভান্ডারে খেতে যান সৌরভ ঢালী নামের এক ব্যক্তি। সৌরভ ঢালী হাজি মুহম্মদ মহসীন হকার্স মার্কেটের কর্মচারী। খাওয়া শেষে সৌরভ ঢালী বিল দিতে গেলে রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপকের সঙ্গে তাঁর কথা–কাটাকাটি শুরু হয়। একপর্যায়ে ওই দোকানের কর্মচারীদের সঙ্গে সৌরভ ঢালীর হাতাহাতি হয়।
এ ঘটনার খবর পেয়ে ‘স্থানীয় তৌহিদি জনতার’ ব্যানারে বিক্ষুব্ধ লোকজন সেখানে জড়ো হয়ে ‘ধর্ম অবমাননার’ অভিযোগ তুলে ঘোষ মিষ্টান্ন ভান্ডারের সামনের সড়ক অবরোধ করেন। এর একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ লোকজন ঘোষ মিষ্টান্ন ভান্ডারে ভাঙচুর ও কর্মচারীদের মারধর করেন।
খবর পেয়ে কোতোয়ালি মডেল থানা–পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে উপপরিদর্শক (এসআই) রেজাউলসহ দুই পুলিশ সদস্য আহত হন। পরে পুলিশ সৌরভ ঢালী ও রেস্তোরাঁর কর্মচারীদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। এতে বিক্ষুব্ধ লোকজন মিছিল নিয়ে থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু করেন।
বেলা তিনটা পর্যন্ত বিক্ষুব্ধ লোকজন থানা ঘেরাও করে সেখানে বিক্ষোভ করেন। পরে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশ্বাসে তাঁরা থানার সামনে থেকে সরে যান।
সৌরভ ঢালী বলেন, প্রতিদিনই তিনি ঘোষ মিষ্টান্ন ভান্ডারে নাশতা করেন। যেখানে গতকালও একই খাবার খেয়ে তাঁর ৩০ টাকা বিল হয়েছিল। একই খাবারে বিপরীতের আজ ৪০ টাকা বিল দাবি করা হয় তাঁর কাছে। এ নিয়ে কথা–কাটাকাটি হলে রেস্তোরাঁর কর্মচারীরা তাঁর ওপর হামলা করেন।
অভিযোগের বিষয়ে ঘোষ মিষ্টান্ন ভান্ডারের মালিক ভবতোষ ঘোষ ভানু বলেন, ‘নাশতার বিল ৪০ টাকা। আমাদের তালিকায় এটা লেখা আছে। তবে সৌরভ ঢালী মিথ্যা বলে আমাদের ৩০ টাকা বিল দিতে চেয়েছিলেন। এ নিয়ে ওই ব্যক্তি আমার কর্মচারীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। এ নিয়ে মারামারি হয়েছে, তবে ধর্ম অবমাননার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। বরং তাঁরা আমার হোটেলের আসবাব ও অন্য মালামাল ভাঙচুর করেছেন। এখন নিজেদের দোষ এড়াতে ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার জন্য ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে অপপ্রচার করা হচ্ছে।’
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) আলী আশরাফ ভূঞা প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। ওই রেস্তোরাঁর এক কর্মচারীকে পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।